কৃষক বাঁচাতে বন্ধ চাল আমদানি

বৈরী আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাঝেমধ্যে চাহিদা মেটাতে দেশে চাল আমদানির প্রয়োজন হয়। এজন্য সরকার আমদানিকারকদের কিছুদিনের জন্য শুল্ক সুবিধা দিয়ে থাকে।
কিন্তু কিছু আমদানিকারক ওই সুবিধা নিয়ে সারা বছর ধরে আমদানি করে চাল। ফলে ভরা মৌসুমে চাল আমদানির কারণে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে আর্থিক ক্ষতির শিকার হন কৃষকরা। তাই কৃষকদের বাঁচাতে এবার মৌসুমের শুরুতেই দেশে চাল আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এদিকে শুল্ক সুবিধার সময় শেষ হওয়ায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে।
গত ৩০ অক্টোবর থেকে এ বন্দর দিয়ে চাল আমদানি বন্ধ। এতে এলসি করা চালের ট্রাকও বন্দর থেকে দেশে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে হিলি দিয়ে এক হাজার মেট্রিক টন চাল দেশে প্রবেশের অপেক্ষার কারণে বন্দরে এখন ট্রাকের সারি।
অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হওয়ায় কৃষকরা যাতে ধান চালের ন্যায্যমূল্য পায়, সে লক্ষ্যে ভারত থেকে নতুন করে চাল আমদানির বিষয়ে সরকারও আগ্রহ প্রকাশ করছে না। আর আগ্রহ না থাকায় নতুন করে চাল আমদানির সময়সীমাও বাড়ায়নি সরকার।
দেশে প্রতি বছর চালের চাহিদা রয়েছে ২ কোটি ৩১ লাখ ৮২ হাজার টন। ২০১৯ সালে দেশে চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৬৫ লাখ টন। ২০২০ সালে ৩ কোটি ৭৪ লাখ টন এবং ২০২১ সালে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টন।
দেশের বাজারে চালের সংকট নিরসনে ও মূল্য বৃদ্ধি রোধ এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণে সরকার এ বছর বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। গত ২৫ আগস্ট ৪০০ জন আমদানিকারককে সাড়ে ১৬ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এর মধ্যে ১৪ লাখ ৫৩ হাজার টন ছিল সিদ্ধ চাল ও এক লাখ ৯৭ হাজার টন আতপ চাল।
জানা যায়, মোটা চাল প্রতি টন ৩৭০ থেকে ৩৮০ ডলার এবং চিকন চাল প্রতি টন ৪২৫ থেকে ৪৭০ ডলার মূল্যে আমদানি হয়। তবে শর্ত ছিল ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এ সমস্ত চাল ভারত থেকে আমদানি শেষ করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী গত শনিবার ছিল চাল আমদানির শেষ দিন।
৩১ অক্টোবর রোববার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আর চাল আমদানি করতে পারবেন না ব্যবসায়ীরা। এখন নতুন করে কেউ চাল আমদানি করলে শুল্ক সুবিধা পাবে না। তবে কোনো ব্যবসায়ী ভারত থেকে চাল আমদানি করতে চাইলে পূর্বের ন্যায় ৬২ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করে চাল আমদানি করতে হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণে সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বেসরকারি পর্যায়ে শুল্ক সুবিধা দিয়ে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চাল আমদানি করতে ইচ্ছুক আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। সেই দরখাস্তের আলোকে প্রথম পর্যায়ে বেশ কিছু আমদানিকারককে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়।
শর্ত দেওয়া হয়, চাল আমদানির প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্টের মধ্যে চাল আমদানি করতে হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিতীয় দফায় আরও বেশ কিছু আমদানি কারককে চাল আমদানির শুল্ক সুবিধা দিয়ে অনুমতি দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে যে সকল আমদানিকারক ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছেন তাদের শর্ত দেওয়া হয়েছিল ৩০ অক্টোবরের মধ্যে তাদের চাল আমদানি করতে হবে। ৩০ অক্টোবরের পর কেউ ভারত থেকে চাল আমদানি করতে চাইলে তাদের ৬২ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।
চাল আমদানিকারক মোশাররফ হোসেন জানান, সরকারি চুক্তি অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর থেকে আর চাল আমদানি করা যাবে না। আমার এখনো ওপারে ১ হাজার মেট্রিক টন চাল দেশে প্রবেশের অপেক্ষায়। এগুলোকে দ্রুত দেশে প্রবেশের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান তিনি।
হিলি স্থালবন্দরের আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সভাপতি হারুন-ইর রশিদ জানান, দেশের বাজারে চালের দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকার চাল আমদানি করতে অনুমতি দিয়ে ছিলো।
তবে ভরা মৌসুমে চাল আমদানির কারণে চাষিরা ন্যায্যমূল্য না পেয়ে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়। এতে সরকার চাষিদের বাঁচাতে চাহিদা মতো চাল আমদানিতে আমদানিকারকদের তালিকা ও চাল আমদানির পরিমাণ ও সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিলো।
গত শনিবার থেকে সেই সময় শেষ হয়েছে। য়ার জন্য হিলি স্থালবন্দর দিয়ে চাল আমদানি আপাতত বন্ধ আছে। ইতোমধ্যে এলসি করা সব চাল হিলি বন্দরে প্রবেশ করেছে। সরকার অনুমতি দিলে আবার এই বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হবে।
আমদানি রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহসিন মিলন বলেন, ৩১ অক্টোবরের পরে আর কোন ভারতীয় চালের আমদানি হয়নি। কাস্টমস কর্তৃপক্ষও এসব চালের আমদানি করতেও দেয়নি।
এরমধ্যে চাল আমদানি করতে হলে তাকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসাপেক্ষে পুরো ডিউটি দিতে হবে। সেটা ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ ডিউটি, আগে ছিরো ২৫ শতাংশ ডিউটি।
বেনাপোল কাস্টমসের উপ-কমিশনার কামরুল হাসান জানান, রোববার সকাল থেকে চাল আমদানির কোন গেট পাশ হয়নি। ভারত থেকে চালের কোন চালান আমদানি হয়নি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী গত শনিবার ছিল চাল আমদানির শেষ দিন।
পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ থাকবে। তবে ওপারে এখনো কয়েকজন ব্যবসায়ীর চালের ট্রাক বাংলাদেশে আসার জন্য অপেক্ষা করছে।