English Version
আপডেট : ১ আগস্ট, ২০২১ ১৭:৫৫

দ্বিতীয় প্রান্তিক: আয় বেড়েছে অধিকাংশ ব্যাংকের

অনলাইন ডেস্ক
দ্বিতীয় প্রান্তিক: আয় বেড়েছে অধিকাংশ ব্যাংকের

চলতি বছরের দ্বিতীয় কোয়াটারে (এপ্রিল-জুন’২১) দেশের শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) গত বছরের একই সময়ের থেকে বেড়েছে। তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে ২৭টির দ্বিতীয় প্রান্তিক বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, বছরের দ্বিতীয় কোয়াটারে (এপ্রিল-জুন’২১) ওই ২৭টি ব্যাংকের মধ্যে ২৪টির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) বেড়েছে। আর কমেছে মাত্র ৩টির।

সল্প খরচে ফান্ড পরিচালনা করার কারণে আলোচ্য সময়ে ব্যাংকগুলোর শেয়ার প্রতি মুনাফা বেড়েছে বলে মনে করছে মার্কেট বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন অনুযায়ি যারা শিথিল শর্তে ঋণ পরিচালনা করেছে তারা এই সময়ে ভালো উপার্জন করেছে।

শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক পরিমাপ। যা কোনও কোম্পানি বা সংস্থার লাভজন অবস্থান নির্দেশ করে। এটি কোম্পানির মোট আয়ের মোট সংখ্যার সাথে নিট আয়ের ভাগ করে গণনা করা হয়। 

২৭টি ব্যাংকের অর্থনৈতিক প্রতিবেদন অনুযায়ি, বছরের দ্বিতীয় কোয়াটারে (এপ্রিল-জুন’২১) সবথেকে বেশি ৪২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে আইএফআইসি ব্যাংকের। ওই সময়ে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ৪৭ পয়সা। যা গত বছরের একই সময়ে হয়েছিলো ৯ পয়সা।

তাছাড়া চলতি বছরে প্রথম ৬ মাসে (জানুয়ারি-জুন) ব্যাংক কোম্পানিটির কনসোলিডেটেড ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৯১ পয়সা। যা ৩০ জুন, ২০২০ সালের একই সময়ে হয়েছিলো ৫১ পয়সা।

এপ্রিল-জুন’২১ সময়ে প্রাইম ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪০০ শতাংশ। আর ওই সময়ে ব্যাংকটির কনসোলিডেটেড ইপিএস হয়েছে ৪৭ পয়সা। যা গত বছরের একই সময়ে হয়েছিলো ৯ পয়সা।

ব্রাক ব্যাংকের দ্বিতীয় কোয়াটারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫৭ শতাংশ। আর ইপিএস হয়েছে ৯৬ পয়সা। যা গত বছরের একই সময়ে হয়েছিলো ২১ পয়সা। একইভাবে দ্বিতীয় কোয়াটারে উত্তরা ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩২০ শতাংশ। ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৫ পয়সা। যা গত বছরের একই সময়ে হয়েছিলো ২৫ পয়সা। 

এদিকে সিটি ব্যাংকের দ্বিতীয় কোয়াটারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯০ শতাংশ। যার শেয়ার প্রতি আয় ধরা হয়েছে ১ টাকা ১৩ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে ইপিএস হয়েছিলো ২৯ পয়সা। 

এপ্রিল-জুন’২১ দ্বিতীয় কোয়াটারে ইস্টার্ন ব্যাংক প্রবৃদ্ধি করেছে ৮৮ শতাংশ। ওই সময়ে ব্যাংকটির ইপিএস হয় ১ টাকা ৪৭ পয়সা। গত বছরের দ্বিতীয় কোয়াটারে ব্যাংকটি ৮৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করলেও শেয়ার প্রতি আয় হয় ৭৮ পয়সা। ব্যাংকটির কনসোলিডেটেড ইপিএস চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে (জানুয়ারি-জুন’২১) দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৫৬ পয়সা। যা গত বছরের একই সময়ে হয়েছিলো ১ টাকা ৬৫ পয়সা।

সদ্য তালিকাভুক্ত হওয়া এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন’২১) গত বছরের একই সময়ের থেকে ২১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করেছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকটির কনসোলিডেটেড ইপিএস হয়েছে ৬৯ পয়সা। যা গত বছরের একই সময়ে হয়েছিলো ২২ শতাংশ। তাছাড়া বছরের প্রথম ৬ মাসে (জানুয়ারি-জুন’২১) কনসোলিডেটেড ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ১১ পয়সা। যা গত বছরের একই সময়ে হয়েছিলো ৪৯ পয়সা।

দ্বিতীয় কোয়াটারে (এপ্রিল-জুন’২১) স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক শেয়ার প্রতি মুনাফা করেছে ৬ পয়সা। যা গত বছরের একই সময়ে করেছিলো ৩১ পয়সা। তবে বছরের প্রথম ৬ মাসে (জানুয়ারি-জুন’২১) ব্যাংকটি প্রবৃদ্ধি করেছে ২৮৩ শতাংশ। যার ইপিএস দাঁড়িয়েছে ২৩ পয়সা। আগের বছরে একই সময়ে এই ইপিএস ছিলো ৬ পয়সা। 

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ি একইভাবে চলতি বছরের দ্বিতীয় কোয়াটারে (এপ্রিল-জুন’২১) ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ইসলামী ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউসিবি এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ার প্রতি মুনাফা গত বছরের একই সময়ের থেকে বেড়েছে।

অন্যদিকে চলতি বছরের দ্বিতীয় কোয়াটারে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ার প্রতি মুনাফা কমেছে ৫৭ শতাংশ। এ সময়ে ব্যাংকটির কনসোলিডেটেড ইপিএস হয়েছে ২৬ পয়সা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিলো ৭৯ পয়সা। আর বছরের প্রথম ৬ মাসে (জানুয়ারি-জুন’২১) ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি কনসোলিডেটেড মুনাফা হয়েছে ১ টাকা ৮ পয়সা। যা গত বছরের একই সময়ে ছিলো ১ টা ৩৪ পয়সা। 

প্রভিশন সংরক্ষণ বাড়ানো কারণে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ার প্রতি মুনাফা কমেছে বলে মনে করছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, গেল বছর জুড়েই ঋণ শ্রেণিকরণ হয়নি, এই বছরেও ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে শ্রেণিকরণ বন্ধ আছে, ফলে অনেক ব্যাংককেই প্রভিশন রাখতে হয়নি। এছাড়া ঋণ আমানত অনুপাত বা স্প্রেড গেল বছরের এপ্রিলের চেয়ে এই বছরের এপ্রিলে এসে বেড়েছে। এছাড়াও কস্ট অফ ফান্ড কমে যাওয়ার সুবিধা নেয়ায় বেশির ভাগ তালিকাভুক্ত ব্যাংকের শেয়ার প্রতি আয় বেড়েছে।

নিজের ব্যাংক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার ব্যাংকের ইপিএস কমার পিছনে মূল কারণ প্রভিশন সংরক্ষণ বাড়ানো। যদিও চলমান ছাড়ের বিবেচনায় প্রভিশন সংরক্ষণ না করলেও চলতো। কিন্তু বাড়তি সতর্কতা হিসেবে প্রভিশন রাখা হয়েছে। যদি বছর শেষে দেখা যায় প্রভিশনের বিপরীতে যে ঋণ দেয়া হয়েছে তা খেলাপি হচ্ছে না, তাহলে প্রভিশন রিভার্স করা যাবে। তখন ইপিএস বাড়বে।

অভিজ্ঞ এই ব্যাংকার বলেন, কোভিড পরিস্থিতি যে অবস্থায় যাচ্ছে তাতে হয়তো চলতি বছর জুড়েই ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ শ্রেণিকরণ স্থগিত রাখতে হবে। এতে করে বাড়তি প্রভিশন রাখার বোঝা থেকে মুক্ত থাকবে ব্যাংকগুলো, যার প্রভাবে হয়তো বছর শেষে ব্যাংকগুলোর ইপিএস আরো বাড়তে পারে।

এছাড়া শেয়ার প্রতি মুনাফা কমার তালিকায় থাকা অন্য দুই ব্যাংকের মধ্যে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ইপিএস (এপ্রিল-জুন’২১) সময়ে গত বছরের একই সময়ের থেকে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ কমে হয়েছে ২ টাকা ১৪ পয়সা। যা গত বছরের একই সময়ে হয়েছিলো ২ টাকা ২৩ পয়সা। তবে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি মুনাফা গত বছরের একই সময়ের থেকে ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। জানুয়ারি-জুন’২১ সময়ে ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৫৭ পয়সা। যা আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিলো ৩ টাকা ৪২ পয়সা। 

এদিকে দিন দিন লুজারের দিকে যাচ্ছে আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক। ব্যাংকটি বছরের দ্বিতীয় কোয়াটারে (এপ্রিল-জুন’২১) শেয়ার প্রতি মুনাফা করেছে ১৭ পয়সা। যা গত বছরের একই কোয়াটারে হয়েছিলো ২৩ পয়সা।