English Version
আপডেট : ২৫ জুলাই, ২০২১ ১৫:৪৬

করোনাকালে ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে

অনলাইন ডেস্ক
করোনাকালে ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে

আবুল কালাম আজাদ (৪৯) একজন ব্যবসায়ী। সারা জীবনে নিজের একটি ফ্ল্যাট কেনার স্বপ্ন ছিল তাঁর। কারণ প্রতি মাসেই বাসা ভাড়া গুনতে হতো ২৫ হাজার টাকা। তাই এ বছর মার্চ মাসে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ১৭৮৭ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কেনেন। প্রতি স্কয়ার ফুটে (বর্গফুট) খরচ হয় প্রায় ৭৫০০ টাকা। বিগত বছরের তুলনায় ফ্ল্যাটের দাম বেশি মনে হলেও তিনি ফ্ল্যাটটি কেনেন। তিনি নিজের ফ্ল্যাটে পছন্দের ইন্টেরিয়র ডিজাইনও করেন। ফ্ল্যাটের দাম পড়ে প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ টাকা।

তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরেই ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা ছিল। তাই ফ্ল্যাটের স্কয়ার ফুটের দামের ওপর নজর রাখছিলাম। গত দুই বছরে ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে।’

অথচ এ এলাকায় গত দুই বছর আগেও ফ্ল্যাটে প্রতি স্কয়ার ফুট পাওয়া যেত ৪৫০০-৫৫০০ টাকার মধ্যে। আবাসন খাতের সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার পর রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় স্কয়ার ফুটের দাম বেড়েছে দুই-তিন হাজার টাকা। আধুনিক ফ্ল্যাটের দাম স্থানভেদে বেড়েছে ৩০-৩৫ শতাংশ। আর মধ্যবিত্তরাও মাঝারি আকারের ফ্ল্যাট কিনতে হিমসিম খাচ্ছেন।

বেসরকারি চাকরিজীবী সৈয়দ আবুল কাশেম (৫৯)। দীর্ঘদিন ধরে একটি নিজের ফ্ল্যাট কেনার ইচ্ছা তাঁর। দুই বছর আগে মনস্থির করেছিলেন একটি ফ্ল্যাট কিনবেন। বর্তমানে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফ্ল্যাট কেনা তাঁর জন্য অনেকটা সাধ্যের বাইরে।

তিনি বলেন, ফ্ল্যাটের দাম আগের থেকে বেড়েছে। দুই বছর আগে লালমাটিয়াতে প্রতি স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাটের দাম যেটা ছিল ৬৫০০-৯০০০ টাকা, সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪,৫০০ টাকা।

ফ্ল্যাট কেনার জন্য গ্রাহকের পছন্দের জায়গা থাকে বনানী, গুলশান, ধানমণ্ডি, বারিধারা, বসুন্ধরা, মোহাম্মদপুর। এই এলাকাগুলোতে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফ্ল্যাটের দাম বিগত এক বছরের তুলনায় স্কয়ার ফিটে এক-দেড় হাজার টাকা বেড়েছে। আর গত পাঁচ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। রিয়েল এস্টেট কম্পানি অনুযায়ী দামে তারতম্য থাকলেও প্রায় প্রতি এলাকায় ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে।

কম্পানি, এলাকা, ফ্ল্যাটের অবস্থান ও মানের ওপর নির্ভর করেই প্রতি স্কয়ার ফুটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে ধানমণ্ডি এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে প্রতি স্কয়ার ফুট ন্যূনতম ১৫-১৭ হাজার টাকা। গুলশানে ২০ হাজার টাকা, বনানীতে ১৬ হাজার আর লালমাটিয়ায় ১৪ হাজার ৫০০ টাকার মতো ব্যয় হচ্ছে।

তবে এ এলাকাগুলোতে জায়গায় ও ফ্ল্যাটের ওপর নির্ভর করে প্রতি স্কয়ার ফুটের দাম ২৫-৩০ হাজার টাকা। কনকর্ড রিয়েল এস্টেটের বিপণন ব্যবস্থাপক মো. তারিকুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে খরচ বেড়েছে। তাই করোনার আগে এলাকাভেদে ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। বড় কম্পানিগুলো সব সময় মানসম্মত নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে। কারণ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে কনকর্ড কম্পানি বনানীতে ১৭-২০ হাজার, উত্তর গুলশানে ৩০ হাজার, ধানমণ্ডিতে ২০ হাজার টাকায় দিচ্ছে। করোনার পর ফ্ল্যাটের প্রতি স্কয়ার ফুটের দাম বেড়েছে প্রায় দেড়-দুই হাজার টাকা। রড, সিমেন্ট, প্রিন্টেড ম্যাটেরিয়ালের দাম বেড়েছে।’

বনানী, গুলশান, বারিধারা, ধানমণ্ডি ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাটের স্কয়ার ফুটের দাম তুলনামূলক বেশি। ন্যূনতম ১৮ হাজার থেকে শুরু হয়ে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতি স্কয়ার ফুট। তবে জায়গা ও ফ্ল্যাটের কারুকার্যের ওপর নির্ভর করলে ৩০ হাজার টাকাও অতিক্রম করে। তবে এ এলাকা থেকে মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া ও মিরপুর এলাকায় প্রতি স্কয়ার ফুটের দাম তুলনামূলক কম। ৭,৫০০ থেকে ১৫,০০০ টাকায় স্কয়ার ফুটে ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে।

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রড, সিমেন্ট ও অন্যান্য কন্সট্রাকশনের দাম বেড়ে গেছে। এ জন্য কম্পানিভেদে বর্গফুটের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে ফ্ল্যাটের দাম ওঠানামা করে। নির্মাণসামগ্রীর দাম কমলে প্রতি বর্গফুটের দাম কমবে বলে আশা করি।’