ঋণের কিস্তি পরিশোধে আরো দুই মাস সময় পেলেন গ্রাহক

কিস্তি পরিশোধ না করলে চলতি মাসের (জুন) মধ্যে খেলাপি হতো—এমন ঋণ পরিশোধের মেয়াদ শর্তসাপেক্ষে আরো দুই মাস বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন সময়সীমা অনুযায়ী জুনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে—এমন কিস্তিগুলোর ২০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করা হলে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ওই ঋণ খেলাপি করা যাবে না। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি’ বিভাগ থেকে জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
দেশে নভেল করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি আবারো মারাত্মক আকার ধারণ করায় ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করার দাবি উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো থেকে এ দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠিও দেয়া হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের দাবি পর্যালোচনা ও করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই আপাতত ঋণ পরিশোধের সময়সীমা দুই মাস পেছানো হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
২০২০ সালজুড়ে ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত ছিলেন ব্যবসায়ীরা। ফলে কোনো অর্থ পরিশোধ না করেই ঋণগ্রহীতারা খেলাপি হওয়া থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে শর্তসাপেক্ষে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। গত ২৪ মার্চ জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে অনাদায়ী সুদ আদায়সহ ঋণের কিস্তি পরিশোধের বিষয়ে রূপরেখা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গ্রাহকদের কারো ২০২০ সালের সুদ বকেয়া থাকলে চলতি মার্চ থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ছয়টি ত্রৈমাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে। একই সঙ্গে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত যে সুদ আসে, তাও ত্রৈমাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করার সুযোগ দেয়া হয়। এছাড়া তলবি ঋণ চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আটটি ত্রৈমাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বা চলমান ঋণের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে এবং নতুন করে নবায়ন করা হয়নি, সেসব ঋণের শুধু সুদ পরিশোধ করলেই ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত খেলাপি হবে না বলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।
ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে জারীকৃত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, ‘উল্লেখিত নিয়মে কোনো ত্রৈমাসিকে প্রদেয় কিস্তি পরিশোধিত না হলে ওই ত্রৈমাসিক থেকে এ সুবিধা বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। পাশাপাশি যথানিয়মে সংশ্লিষ্ট ঋণ শ্রেণীকরণ করতে হবে। তবে উল্লেখিত চলমান ও তলবি ঋণসহ বিআরপিডি সার্কুলার নং-০৩/২০২১-এর আওতায় মেয়াদি ঋণের বিপরীতে প্রদেয় কিস্তি ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ৩০ জুন ২০২১-এর মধ্যে পরিশোধ করা হলে ওই সময়ে ঋণগুলো বিরূপ মানে শ্রেণীকরণ করা যাবে না।’
২৪ মার্চ জারীকৃত প্রজ্ঞাপনটিকে উদ্ধৃত করে গতকালের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগের প্রজ্ঞাপনগুলোর মাধ্যমে প্রদত্ত সুবিধার আওতায় ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে জুন-২০২১ পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তিগুলোর মোট পরিমাণের ন্যূনতম ২০ শতাংশ ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ৩১ আগস্ট ২০২১ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করা হলে ওই সময়ে ঋণগুলো বিরূপ মানে শ্রেণীকরণ করা যাবে না। এক্ষেত্রে জুন-২০২১ পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তির অবশিষ্টাংশ সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বশেষ কিস্তির সঙ্গে প্রদেয় হবে। এছাড়া অন্যান্য কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ না করার সুযোগ চেয়েছিলেন। কিন্তু একসঙ্গে এ সুবিধা দেয়া হলে ব্যাংকগুলো বিপদে পড়ত। এজন্য করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আপাতত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুযোগ দেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে ভবিষ্যতে বিষয়টি আবারো পুনর্বিবেচনা করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের মার্চের শুরুতে দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন ‘লকডাউন’ কার্যকর করে সরকার। ওই সময় দেশের শিল্প উৎপাদন থেকে বিপণন, সবকিছুতেই স্থবিরতা নেমে আসে। প্রতিকূল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যাংকঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা স্থগিত করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারের নির্দেশনায় ঋণগ্রহীতাদের জন্য ঘোষিত এ ডেফারেল সুবিধা বা পেমেন্ট হলিডে কার্যকর ছিল ২০২০ সালজুড়ে। তবে নীতি ছাড়ের এ সুযোগ বেশির ভাগ ঋণগ্রহীতাই নেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ওই সময় ডেফারেল সুবিধা নিয়েছিল ২ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ। দেশের ব্যাংক খাতের বিতরণকৃত ঋণের ২৩ শতাংশ ওই সময় ডেফারেল সুবিধা নিয়েছিল।