English Version
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি, ২০২১ ০৭:৩৭

এখন থেকে অপরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি করা যাবে

অনলাইন ডেস্ক
এখন থেকে অপরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি করা যাবে

অপরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি এবং স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপনের সুযোগ রেখে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত)’ নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ফলে ব্যবসায়ীরা স্বর্ণবার এবং স্বর্ণালঙ্কার আমদানির পাশাপাশি অপরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি করতে পারবেন।

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে অনলাইনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আজ প্রথমে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে দুটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে আমরা একটি প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছি, একটি ফেরত দিয়েছি। ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে আট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে সাত প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে খরচ হবে এক হাজার ১৪২ কোটি ৬৯ লাখ ৯৮ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি খাত থেকে পাওয়া যাবে এক হাজার ১১০ কোটি ৭৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪০১ টাকা এবং বিশ্বব্যাংক ও জাইকা থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ৩১ কোটি ৯২ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৭ টাকা।’

স্বর্ণের নীতিমালার সংশোধনীতে কী আনা হয়েছে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আজ সংশোধিত স্বর্ণ নীতিমালার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংশোধনীতে আছে, পরিশোধিত স্বর্ণ না এনে অনেক দেশই অপরিশোধিত স্বর্ণ এনে পরিশোধন করে। তাই দেশে স্বর্ণ পরিশোধনের জন্য আমাদের কাছে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। এজন্য স্বর্ণ পরিশোধনে যেসব প্রয়োজনীয় জিনিস লাগবে তা বসানোর জন্য অনুমোদন চেয়েছে। এটা কোনো খারাপ কিছু না, ভালোই।’

প্রস্তাবিত ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত) কার্যপত্রে বলা হয়েছে, সংশোধিত নীতিমালায় নতুনভাবে সরকার, স্বর্ণ ও পরিশোধনাগারের সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; নীতিমালাটি সংশোধনের ফলে স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কারের পাশাপাশি অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানির করা সম্ভব হবে; অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ থেকে বিভিন্ন গ্রেডের স্বর্ণবার ও স্বর্ণের কয়েন উৎপাদনে পরিশোধনাগার স্থাপনের পথ সুগম হবে; স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপন ও পরিচালনায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণের লক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মানসম্মত পরিচালনা পদ্ধতি প্রণয়ন করবে মর্মে নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে।

এছাড়া স্বর্ণমান ও বিশুদ্ধতা সনদ দেয়ার ক্ষেত্রে বিএসটিআই অথবা বিএসটিআই কর্তৃক স্বীকৃত অ্যাক্রেডিটেড সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে; স্বর্ণবার রফতানির ক্ষেত্রে রফতানিকারকের অবশ্যই স্বর্ণ পরিশোধনাগার থাকতে হবে মর্মে নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে; বিশেষ প্রয়োজনে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে সরকার (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়) কতিপয় ক্ষেত্রে নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধন/সংযোজন/পরিববর্তন আনয়ন করতে পারবে মর্মে নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে।

অনুমোদিত ডিলার চালানভিত্তিক সম্ভাব্য বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনাপত্তি দেয়ার বাধ্যবাধকতা ১৫ কার্যদিবসের পরিবর্তে ১০ কার্যদিবস করা হয়েছে; অনুমোদিত ডিলার কর্তৃক নিজস্ব ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে স্বর্ণালঙ্কার/স্বর্ণবার আমদানির ক্ষেত্রে জামানত প্রয়োজন হবে না মর্মে নতুন ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে।

নীতিমালায় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কারের সঙ্গে স্বর্ণকয়েন এবং অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ সংযোজন করা হয়েছে; কর্মপরিকল্পনা হালনাগাদ করা হয়েছে এবং সংশোধিত নীতিমালায় স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ এর অন্যান্য সব বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের অভ্যন্তরে স্বর্ণের বাণিজ্যিক ব্যবহার এবং রফতানির উদ্দেশ্যে স্বর্ণের চাহিদা পূরণের লক্ষে স্বর্ণ আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করা এবং স্বর্ণ আমদানি ও পরবর্তী বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, স্বর্ণালঙ্কার রফতানিতে নীতিগত সহায়তা দেয়া, বিদ্যমান শুল্ক/বন্ড সুবিধা যৌক্তিকীকরণ ও সহজ করা, ভোক্তা/ক্রেতা এবং স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ এ খাতের সংশ্লিষ্টদের স্বার্থ সংরক্ষণ, অংশীদারিত্ব ও কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করার মাধ্যমে স্বর্ণখাতের সুষ্ঠু ও টেকসই বিকাশের লক্ষ্যে একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।

এ উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালের ১৭ মে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করা হলে ২৩ মে তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয় এবং চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের নির্দেশনা দেয়া হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের মাধ্যমে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ কার্যকর হয়।

স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ কার্যকর হওয়ার পর স্বর্ণবার এবং স্বর্ণালঙ্কার আমদানির উদ্দেশ্যে অনুমোদিত গোল্ড ডিলার নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। ওই গাইডলাইনের আলোকে স্বর্ণবার এবং স্বর্ণালঙ্কার আমদানি করতে স্বর্ণখাতের ১৮টি প্রতিষ্ঠান এবং ১টি ব্যাংককে অনুমোদিত গোল্ড ডিলার হিসেবে লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে অনুমোদিত গোল্ড ডিলাররা স্বর্ণবার এবং স্বর্ণালঙ্কার আমদানি করছে। স্বর্ণ নীতিমালায় স্বর্ণবার এবং স্বর্ণালঙ্কার আমদানির বিধান থাকলেও অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক আমদানির বিষয়ে কিছু উল্লেখ নাই। এমতাবস্থায়, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি করে নিজস্ব পরিশোধনাগারে পরিশোধন করে বিভিন্ন গ্রেডের স্বর্ণবার ও স্বর্ণকয়েন উৎপাদন, বিপণন ও রফতানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের আবেদন জানিয়েছে।

এদিকে বিদ্যমান স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ এ অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি করা এবং পরিশোধনাগার স্থাপনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে তা সংশোধন করা প্রয়োজন বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এরপর বাণিজ্য সচিবের সভাপতিত্বে সংশোধিত নীতিমালায় যেসব পরিবর্তন আনা করা হবে তা পর্যালোচনার জন্য গত ৮ ডিসেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি করা, স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপনসহ বেশকিছু সংশোধন/বিয়োজন/পরিবর্তন এনে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত)’ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।