৮০ ভাগ নিবন্ধিত কোম্পানি কর দিচ্ছে না

দেশে নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার। কোম্পানি হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য এসব কোম্পানিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের (আরজেএসসি) কার্যালয় থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। বিদ্যমান আয়কর আইন অনুযায়ী, নিবন্ধনধারী সব কোম্পানির টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) থাকতে হবে। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর শেষে কোম্পানিগুলোকে আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিতে হবে।
কিন্তু আরজেএসসিতে নিবন্ধিত এসব কোম্পানির ৮০ শতাংশই কর দেয় না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ১ লাখ ৭৬ হাজার নিবন্ধিত কোম্পানির মধ্যে টিআইএন রয়েছে মাত্র ৭৬ হাজার কোম্পানির। এর মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করে ৩৫ হাজারের মতো কোম্পানি। অর্থাৎ আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৮০ শতাংশ কোম্পানি করের আওতার বাইরে। আরজেএসসি থেকে নিবন্ধন নিলেও কর না দেওয়া কোম্পানির খোঁজে টাস্কফোর্স গঠন করেছে এনবিআর। এছাড়া কর ফাঁকি রোধে বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনও যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। যেসব কোম্পানি রিটার্ন দাখিল করছে তাদের একটি বড় অংশই আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কর ফাঁকি দিচ্ছে।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যে কোনো কোম্পানি চালু হওয়ার পর বছর বছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়।
ওই রিটার্নের সঙ্গে নিরীক্ষিত হিসাবের প্রতিবেদনও জমা দিতে হয়। যে সব কোম্পানি রিটার্ন জমা দিচ্ছে, তারাও ভুয়া অডিট রিপোর্ট জমা দিচ্ছে। সবমিলিয়ে এসব কোম্পানির কাছ থেকে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে এসব কোম্পানি উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিজেদের হিসাবে প্রচুর লেনদেন দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। এসব কারণে রাজস্বে নেতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি ঋণখেলাপিও বাড়ছে। সার্বিকভাবে আর্থিক খাতে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা চলছে।
এ ধরনের টিআইএনবিহীন কোম্পানির খোঁজে টাস্কফোর্স গঠন করেছে এনবিআর। ভুয়া নিরীক্ষিত প্রতিবেদন যাচাইয়েও এই টাস্কফোর্স কাজ করবে। যে সব কোম্পানি আরজেএসসিতে নিবন্ধিত কিন্তু টিআইএন নেই কিংবা রিটার্ন দিচ্ছে না, প্রাথমিকভাবে টাস্কফোর্সের টার্গেটে থাকবে ওইসব কোম্পানি। একই প্রক্রিয়ায় ভুয়া অডিট রিপোর্ট ধরতে দেশের হিসাববিদদের সংগঠন আইবিএসি’র তথ্যও কাজে লাগানো হবে। এ লক্ষ্যে আরজেএসসি ও আইসিএবি’র সহযোগিতা নেবে এই টাস্কফোর্স। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের নির্দেশে এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। সাত সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্সের নেতৃত্ব দেবেন এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) পরিচালক মো. শব্বির আহমদ। সিআইসি’র মহাপরিচালক মো. আলমগীর হোসেন স্বাক্ষরিত টাস্কফোর্স গঠন সংক্রান্ত ওই চিঠিতে বলা হয়, দেশে নিবন্ধিত যে সব কোম্পানি টিআইএন গ্রহণ বা আয়কর রিটার্ন দাখিল করছে না, তা চিহ্নিত করে তাদের আয়করের আওতায় আনার লক্ষ্যে এটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া জাল অডিট রিপোর্ট দাখিল রোধ ও তা নিয়মিত তদারক করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নিবন্ধিত কোম্পানিকে আয়কর আইন অনুযায়ী টিআইএন নিতে হবে এবং নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করতে হবে। কিন্তু প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোম্পানি রিটার্ন দাখিল করছে। আবার যারা রিটার্ন জমা দিচ্ছে, তাদেরও একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোম্পানি ভুয়া রিপোর্ট জমা দিচ্ছে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে টাস্কফোর্স কাজ শুরু করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব অডিট রিপোর্ট দেওয়া হয়, তা আইসিএবি’র নিবন্ধিত ফার্ম হতে হবে। কিন্তু এনবিআর আইসিএবিতে খোঁজ নিয়ে জেনেছে তাদের নিবন্ধিত ফার্মগুলো ১৫ থেকে ১৬ হাজার রিপোর্ট দিয়েছে। অর্থাৎ বাদবাকি রিপোর্টগুলো ভুয়া। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে এ ধরনের কোম্পানিগুলো ভুয়া টিআইএন ও ভুয়া অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, যে কোনো কোম্পানি খোলার ক্ষেত্রে কেবল পরিচালকদের ব্যক্তিগত টিআইএন দিতে হয়। কোম্পানি অনুমোদনের পর টিআইএন নিতে হয়। মূলত অনুমোদনের পর আর টিআইএন নিচ্ছে না কিংবা রিটার্ন জমা দিচ্ছে না।