English Version
আপডেট : ১৪ মার্চ, ২০২০ ১৩:১১
সূত্র:

তিন সপ্তাহে পুঁজিবাজার থেকে গায়েব ৩৮ হাজার কোটি টাকা

তিন সপ্তাহে পুঁজিবাজার থেকে গায়েব ৩৮ হাজার কোটি টাকা

আগের দুই সপ্তাহে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। এ সময়ে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ কমে ২২ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে একের পর এক বড় দরপতন হওয়ায় সপ্তাহ জুড়ে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে এক সপ্তাহেই শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমেছে। আর আগের দুই সপ্তাহসহ টানা তিন সপ্তাহের পতনে বিনিয়োগকারীরা প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছেন। করোনা আতঙ্কের মধ্যে বড় উত্থান-পতনে ব্যাপক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গত সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। মধ্যে সোমবার স্মরণকালের সব থেকে বড় পতন হয় শেয়ারবাজারে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স একদিনে কমে যায় ২৭৯ পয়েন্ট। প্রধান সূচক হিসেবে ডিএসইএক্স চালুর পর একদিনে সূচকটির এত বড় পতন আর হয়নি। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারও বড় দরপতন হয়।

বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহ জুড়ে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। আর লেনদেন কমেছে ১৩ শতাংশের ওপরে। সপ্তাহ জুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ২৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩২৬টির। আর ৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। তার আগের সপ্তাহে কমে ১৬ হাজার ২৭৯ কোটি। এ হিসাবে তিন সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমল ৩৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৫৪ দশমিক ৫২ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচক কমে ৯৫ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং তার আগের সপ্তাহে কমে ২৫২ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বাকি দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমেছে ৫৮ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচক কমে ২৮ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং তার আগের সপ্তাহে কমে ৪৪ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। আর ডিএসই-৩০ আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে ৮০ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচক কমে ৩০ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ এবং তার আগের সপ্তাহে কমে ১০০ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বা ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। সবকটি সূচকের এমন পতনের মধ্যে ডিএসইতে লেনদেনের গতিও কমেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৬৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বা ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

আর গত সপ্তাহ জুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৮৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ২ হাজার ৪১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৩২২ কোটি ২৪ লাখ টাকা বা ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

গত সপ্তাহের মোট লেনদেনের মধ্যে ‘এ’ গ্রæপের প্রতিষ্ঠানের অবদান দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ। এ ছাড়া ডিএসইর মোট লেনদেনে ‘বি’ গ্রæপের অবদান ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ‘জেড’ গ্রæপের প্রতিষ্ঠানের অবদান ১ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং ‘এন’ গ্রæপের অবদান দশমিক ৬৬ শতাংশ।

গত সপ্তাহ জুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের শেয়ার। কোম্পানিটির ৬৩ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা সপ্তাহ জুড়ে হওয়া মোট লেনদেনের ৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার, যা সপ্তাহের মোট লেনদেনের ২ দশমিক ২২ শতাংশ।

৪৩ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন। লেনদেনে এরপর রয়েছেÑ লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন, বিকন ফার্মাসিউটিক্যাল, মুন্নুু সিরামিক, ভিএফএস থ্রেড ডাইং, খুলনা পাওয়ার ও খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং।