শীতেও রূপালি ইলিশের স্বাদ পাচ্ছেন রাজধানীবাসী

ইলিশের ভরা মৌসুম মূলত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস। এসময়ে পর্যাপ্ত ইলিশ থাকে রাজধানীর বাজারে। যোগান বেশি ও দাম কম থাকায় সব ধরনের ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে থাকে রূপালি ইলিশ। তবে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ইলিশের সে অবস্থা থাকে না। এ সময়ে যৎসামান্য ইলিশ এলেও দাম থাকে চড়া।
কিন্তু এবার দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। জানুয়ারি মাসেও বাজারে ব্যাপক যোগান রয়েছে ইলিশের। বাজার ছাড়াও শহরের অলি-গলিতে ফেরিওয়ালারা হাঁকডাক দিচ্ছেন ইলিশ বলে। দামও তুলনামূলক কম। আর ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে থাকায় বিক্রিও ভালো হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও বাজার ঘুরে এ চিত্র উঠে এসেছে।
মূলত ইলিশের দুটি মৌসুম। একটি সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, অন্যটি জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি। কিন্তু আমাদের দেশে বেশি আহরণের ফলে ইলিশের দুটি মৌসুমের মধ্যে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মৌসুমটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা নিধন বন্ধ ও কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন অবৈধ জাল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকা এবং নানামুখী অভিযানের কারণে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। আর এরই বদৌলতে এখন বিলুপ্ত মৌসুমেও ইলিশের দেখা মিলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ বাজার, শান্তিনগর বাজার, মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি বাজার, ফকিরাপুল বাজারে প্রতি এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে চার হাজার টাকা হালি, ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা কেজিদরে। আর ৫০০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা পিস হিসেবে। অন্যদিকে ভরা মৌসুমের মতোই বাজারে মিলছে ছোট ইলিশ। চার/পাঁচ পিসে কেজি এমন ইলিশ প্রতিকেজি সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে বাজারের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন মহল্লা বা বাসা-বাড়ির গলিতে ফড়িয়ার কাছে। বিভিন্ন ইলিশে পসরা নিয়ে তারা ক্রেতা ডেকে মাছ বিক্রি করছেন। তাদের কাছে মূলত ছোট মাছের পরিমাণ বেশি। চার/পাঁচ পিসে কেজি এমন ইলিশ প্রতিকেজি ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন তারা।
কম দামে ইলিশ পেয়ে খুশি ক্রেতারা। খিলগাঁও বাজারের ক্রেতা আয়েশা বলেন, এ সময়টাতে ইলিশের দাম বেশি হয়। এবার কম দাম হওয়ায় ভালো লাগছে, মনে হচ্ছে ইলিশের মৌসুম। এভাবে সারা বছর ইলিশ পাওয়া গেলে অন্য সব মাছের দাম কমে আসবে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি মাছ বিক্রেতা হারুন বাংলানিউজকে বলেন, এবার মৌসুমে জাটকা মাছ কম এসেছে, বড় ইলিশ এসেছে বেশি। জাটকা ধরা বন্ধ হলে সারা বছর কম বেশি ইলিশ বাজারে আসবে।
এর আগে বরিশাল জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা (হিলসা) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা নিধন বন্ধ ও কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন অবৈধ জাল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকা এবং নানামুখী অভিযানের কারণে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। আর একই সঙ্গে প্রায় ২০ বছর আগের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির ইলিশের মৌসুম ফিরে এসেছে। এখন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।
তবে গত কয়েক বছরে সরকারের নানা উদ্যোগ আর মা ইলিশ রক্ষার কারণে অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও সাগরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। আর এরই বদৌলতে এখন বিলুপ্ত মৌসুমেও দেখা মিলছে ইলিশের।
ইলিশের দাম কম হলেও চড়া দাম সব ধরনের সাদা মাছের। বর্তমানে প্রতিকেজি কাচকি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি, মলা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, ছোট পুঁটি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, শিং ৩৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি (গলদা) ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, বাগদা ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি চিংড়ি ৪০০ থেজে ৫০০ টাকা, রুই (আকারভেদে) ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, মৃগেল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙাস ১২০ থেকে ১৮০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, কৈ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, কাতল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।