English Version
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৯:১৯
সূত্র:

মিলগেট ও খুচরায় দামের পার্থক্য ৪০ শতাংশ

মিলগেট ও খুচরায় দামের পার্থক্য ৪০ শতাংশ

শীত মৌসুমে পাম অয়েল জমাট বাঁধতে শুরু করলে সয়াবিন তেলের চাহিদা বাড়ে। এতে বেড়ে যায় ভোগ্যপণ্যটির দামও। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কয়েক মাস আগে মিলগেটে যে তেল প্রতি মণ ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা বেড়ে ৩ হাজার ১৫০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। পাইকারিতে বৃদ্ধির ফলে খুচরা বাজারে আরো চড়া হয়েছে পণ্যটির দাম। মিলগেটের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মোড়কজাত সয়াবিন।

বর্তমানে প্রতি মণ ৩ হাজার ১৫০ টাকা হিসেবে মিলগেটে লিটারপ্রতি সয়াবিনের দাম পড়ে ৭৮ টাকা ৭৫ পয়সা। এর মধ্যে শুল্ক, পরিশোধন, এলসি ও পরিবহন খরচ এবং শ্রমমূল্য যুক্ত থাকে। সঙ্গে যুক্ত হয় আমদানিকারক কোম্পানির মুনাফাও। মিলগুলোয় পরিশোধিত এ সয়াবিন মোড়কজাত করে পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতাদের কমিশনসহ নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে লিটারপ্রতি ১১০ টাকা। অর্থাৎ মিলগেট ও খুচরা বাজারে দামের পার্থক্য প্রায় ৪০ শতাংশ বা প্রতি লিটারে ৩১ টাকা।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল প্লাস্টিক বোতলে মোড়কজাত করতে গড়ে সর্বোচ্চ ১২ টাকা খরচ হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতার কমিশন ১২ টাকা। সে হিসেবে মোড়কজাতে অতিরিক্ত ৭ টাকা মুনাফা করছে কোম্পানিগুলো।

আন্তর্জাতিক ও বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে ইনভয়েস মূল্য বেশি দেখিয়ে কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিনে অতিরিক্ত মুনাফা করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মোড়কজাতকারী কোম্পানিগুলোর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি এক লিটার সয়াবিন বোতলজাত করতে ১২ টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে বোতল খরচ, লেভেলিং, প্যাকেজিং, হ্যান্ডলিং, কার্টনিং, শ্রমিক ও পরিবেশক পর্যায়ে পরিবহন খরচ সংযুক্ত থাকে। একইভাবে দুই লিটার সয়াবিনে সমানুপাত কিংবা তার চেয়েও কম খরচ হয়। বোতলের আকার বড় হলে প্রতি লিটার হিসাবের চেয়েও কম খরচ হয়। কিন্তু কোম্পানিগুলো বাড়তি খরচ যুক্ত করে দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা লুফে নিচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

মিলগেটের সঙ্গে খুচরা বাজারে দামের এত পার্থক্য কেন জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সয়াবিন বোতলজাতকারী একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বণিক বার্তাকে বলেন, খোলা সয়াবিনের সঙ্গে বোতলজাত সয়াবিনের গুণগত মানে পার্থক্য থাকে। বিএসটিআইসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার নির্ধারিত মানে সয়াবিন বোতলজাত করতে হয়। প্রতি লিটার সয়াবিন বোতলজাত করতে ১২ টাকার মতো খরচ হয়। ইনভয়েস মূল্যে কোম্পানির মুনাফা থাকলেও বাড়তি খরচ যুক্ত করে কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিনের লোকসান পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে বলে স্বীকার করেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বছরের প্রায় আট-নয় মাস সয়াবিন তেল বিক্রিতে সীমিত মুনাফা করে কোম্পানিগুলো। এ কারণে শীত মৌসুমে চাহিদা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে সরকার নির্ধারিত দামের সঙ্গে সমন্বয় করে বেশি লাভের আশায় ইনভয়েস মূল্য বাড়িয়ে দেখায় কোম্পানিগুলো।

দেশের প্রায় সব মিল মালিক বা আমদানিকারকই ভোজ্যতেল মোড়কজাত করে। পাশাপাশি সারা বছরই পাম অয়েল, সুপার পাম অয়েল ও খোলা সয়াবিন বিক্রি করে তারা। খাতুনগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে এসব খোলা ভোজ্যতেল ডিও/এসওএর মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। খোলা ভোজ্যতেল বিক্রির মধ্যেই কোম্পানিগুলো লাভ করলেও বোতলজাত করার সময় বাড়তি খরচ যুক্ত করে মুনাফার পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দেয়। ট্যারিফ কমিশন থেকে অনুমোদন করে নেয়ায় বাড়তি এ মুনাফা নিয়ে কোনো প্রশ্নও ওঠে না।

ট্যারিফ কমিশন থেকে সারা দেশের বোতলজাতকারী কোম্পানিগুলোর প্রতি লিটার সয়াবিনের সর্বশেষ ইনভয়েস মূল্য ধরা হয়েছে ৯৮ টাকা। এর সঙ্গে পরিবেশক কমিশন ৪ টাকা, খুচরা বিক্রেতার কমিশন ৮ টাকাসহ খুচরা সর্বোচ্চ নির্ধারিত মূল্য ধরা হয়েছে ১১০ টাকা। এ হিসেবে দুই লিটারের ইনভয়েস মূল্য ১৯৪ টাকার সঙ্গে পরিবেশক ও খুচরা পর্যায়ের কমিশন ২৪ টাকাসহ মোড়কের মূল্য ২১৮ টাকা এবং পাঁচ লিটারের ইনভয়েস মূল্য ৪৮৫ টাকার সঙ্গে কমিশন ৩৫ টাকা যুক্ত করে খুচরা সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য রাখা হয়েছে ৫৪০ টাকা। কয়েক মাস আগে আন্তর্জাতিক বাজারের বুকিং মূল্যে আমদানি করা এসব সয়াবিন বর্তমান বুকিং মূল্যের সঙ্গে যুক্ত করে কোম্পানিগুলো সয়াবিন বোতলজাত করে ভোক্তাদের ঠকাচ্ছে বলে মনে করছেন খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

তবে ভোজ্যতেল মোড়কজাতকারী একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বোতলজাত সয়াবিনের ক্ষেত্রে ভিটামিন, দ্বিগুণ পরিশোধন ছাড়াও ফুডগ্রেড কেমিক্যাল যুক্ত করতে হয়। তবে এক লিটার সয়াবিনের ক্ষেত্রে এসব খরচ নগণ্য হলেও মিল মালিকরা এসব খরচ উঠিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। সে কারণে খোলা সয়াবিনের চেয়েও মোড়কজাত সয়াবিন বিক্রিতে বাড়তি লাভ করতে চান। তবে লাভের হার অনেক সময় যৌক্তিক থাকে বলে স্বীকার করেন তিনি।