ভ্যাট না দিলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : এনবিআর চেয়ারম্যান

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, 'ব্যবসায়ীদের সবাইকে ভ্যাট দিতে বাধ্য করা হবে। ভ্যাট না দিলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআরের সামনে 'জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ ২০১৯' উপলক্ষে আয়োজিত র্যালির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
র্যালিটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সামনে থেকে রাজমনি সিনেমা হলের সামনে দিয়ে কাকরাইল মসজিদ ও মৎস্য ভবন হয়ে দুদকের সামনে দিয়ে রাজস্ব ভবনে এসে শেষ হয়। এরপর রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।
র্যালিতে এনবিআরের সদস্য ও কমিশনার এবং হাজার হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। ভ্যাট দিবস উপলক্ষে সবাই টুপি, টি-শার্ট, ব্যানার, ফেস্টুন এবং র্যালির সরঞ্জাম নিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে র্যালিতে যোগ দেন।
কর জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে নেওয়া হয় মন্তব্য করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'যদি জিডিপির সঙ্গে রাজস্ব গ্রোথ না হয়, তাহলে প্রকল্প বাস্তবায়ন থমকে যাবে। দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হবে।'
তিনি বলেন, 'প্রত্যেকেরই (ব্যবসায়ী) অনলাইনে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিতে হবে। আমাদের দেশে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের যে শংকা সেটি মোটেও কম না। কিন্তু এখনও আমাদের সম্পূর্ণ রেজিস্ট্রেশন হয়ে উঠেনি। আমাদের কর্মকর্তারা যেমন চেষ্টা করে যাচ্ছেন তেমনি ভাবে সব ব্যবসায়ীদের খেয়াল রাখতে হবে। তবে আমরা নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী জরিমানার ব্যবস্থা আছে। তাই ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন আহ্বান করা হবে অন্যদিকে বাধ্য করা হবে।'
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, 'আমি মনে করি, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক আছে সেই সম্পর্কটি নিবিড় থাকবে এবং দেশ সেবার ব্রত নিয়ে সকলে কাজ করবে। আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের জিডিপির গ্রোথ ভাল। কিন্তু এটিকে ধরে রাখতে হবে। যদি জিডিপির গ্রোথের সঙ্গে সঙ্গে রাজস্বের গ্রোথ না হয় তাহলে আমাদের প্রকল্পগুলো নিজস্ব অর্থায়নে চালানো কষ্টসাধ্য হবে। নিজ স্বার্থটি দেশের স্বার্থের ঊর্ধ্বে নয়। দেশের স্বার্থই আমাদের সবার আগে দেখতে হবে।'
জনগণ যেকোন দ্রব্য কেনা বা সেবা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাট পরিশোধ করে জানিয়ে তিনি বলেন, 'কাজেই আমরা যারা সেবা দেই বিশেষ করে ব্যবসায়ী যারা কিংবা যারা দ্রব্য তৈরি করে বা বিক্রি করে সেটির সঙ্গে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত আছে। কাজেই ভ্যাট সরকারকে পরিশোধ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাই ভোক্তা ও ব্যবসায়ী সবাইকে জানানোর জন্য ভ্যাট দিবস পালন করা হয়ে থাকে।'
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'আমাদের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ভ্যাটের প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ। আমাদের এর চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হওয়া প্রয়োজন ছিলো এবং সেটি কাঙ্ক্ষিত ছিলো। কিন্তু নানা কারণে আমাদের প্রথম দিকে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি হয়নি। আমরা মনে করি শিগগিরই এর উন্নতি হবে। কারণ আমাদের রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে বেশ কয়েক বছর ধরে শীর্ষে ভ্যাট। গত বছর ভ্যাট ছিলো মোট রাজস্বের ৩৯ শতাংশ। কাজেই এখনও আমরা প্রত্যাশা করি নতুন ভ্যাট আইন যেহেতু বাস্তবায়ন হচ্ছে সে জন্য ভ্যাটের যে অবদান জাতীয় রাজস্ব আহরণে সেটি আরও বাড়তে হবে এবং বাড়া উচিৎ।'
তিনি বলেন, 'যে ভ্যাট আইন আমরা বাস্তবায়ন করেছি সেটি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই আমরা বাস্তবায়ন করছি। ভ্যাটের যে রেটগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫, ১০, ৭.৫ ও ৫ শতাংশ; এগুলো আলোচনা করেই করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ রেট ২ শতাংশ বা কোন কোন ক্ষেত্রে ২ শতাংশের কম নির্ধারণ করেছি। এক্ষেত্রে দ্বিধার কোন অবকাশ নেই। ভ্যাট সরকারকে পরিশোধ করতেই হবে। ভ্যাট পরিশোধ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।'