ব্যাংকিং লেনদেন কমে গেছে

দেশে ব্যাংকের সংখ্যা ও শাখা বেড়েছে। ব্যাংকিং বুথ, এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে সম্প্রসারিত হয়েছে ব্যাংকিং সেবা। অর্থনীতি বড় হওয়ায় ব্যাংকিং লেনদেনও বাড়ার কথা। যদিও এর বিপরীত তথ্য দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান। তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলোয় অর্থের লেনদেন কমে গেছে।
ডিজিটালাইজেশনের নানা উদ্যোগের পরও এখনো দেশের ব্যাংকিং লেনদেনের বড় অংশই হয় চেকের মাধ্যমে। ব্যাংক লেনদেনের অন্য মাধ্যমগুলো হলো ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি), ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট, মোবাইল ও এজেন্ট ব্যাংকিং। ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে এটিএম বুথ, পস ও ই-কমার্সে অর্থের লেনদেন করা যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, কয়েক মাস ধরেই দেশের ব্যাংকিং খাতে সব ধরনের লেনদেন কমেছে। এর মধ্যে মে মাসের তুলনায় জুনে চেক ক্লিয়ারিং কমেছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারে লেনদেন কমেছে ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া ক্রেডিট কার্ডে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, ডেবিট কার্ডে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ, ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে ২৯ দশমিক ২ শতাংশ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ কম লেনদেন হয়েছে। জুন অর্থবছরের শেষ মাস হওয়ায় এ মাসে সরকারের রাজস্ব আহরণ বেশি হয়। বেড়ে যায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন। সরকারের বড় বড় পেমেন্টও হয় বাজেট সমাপ্তির এ মাসে।
জুনের পরের মাসগুলোর হালনাগাদ তথ্য এখনো তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে পরিস্থিতির যে তেমন উন্নতি হয়নি, সে আভাস পাওয়া গেছে। পরের মাসগুলোতেও লেনদেনের এ অবনমন চলছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যাংকাররা।
যদিও নগদের পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনকে উৎসাহিত করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সীমার বেশি হলে তা ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে লেনদেনের বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৫ হাজার টাকার ওপর বাড়িভাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রহণের বিষয়ে নির্দেশনা জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মূল্য সংযোজন কর আইনেও কিছু সেবার ক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকার বেশি অর্থ নগদের পরিবর্তে ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে লেনদেনের নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৮৭ অনুযায়ী, কোনো একক বিও হিসাবের বিপরীতে নগদ অর্থ গ্রহণ ও প্রদানে এককালীন ৫ লাখ টাকার সীমা অতিক্রম করা যাবে না। নগদ লেনদেনের সীমা পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করে গত মাসে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে সব লেনদেন ব্যাংক, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
এ অবস্থায় ব্যাংকিং লেনদেন কমে যাওয়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সরকারের হিসাবে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের উপরে। অর্থনীতি ও ব্যাংকের সম্পদের পরিমাণও বাড়ছে। এ অবস্থায় দেশের ব্যাংকগুলোর লেনদেন কমে যাওয়া স্বাভাবিক পরিস্থিতির নির্দেশক নয়।
দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়লেও আমদানি-রফতানি, ব্যাংক লেনদেন, রাজস্ব আহরণসহ অর্থনীতির মৌলিক সূচকগুলো নিম্নমুখী হচ্ছে বলে মনে করেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) এ নির্বাহী পরিচালক বলেন, সরকারি হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। অথচ আমরা দেখছি দেশের আমদানি-রফতানি কমে গেছে। সরকারের রাজস্ব আহরণেও বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ভ্যাট আদায় কমে যাওয়া মানেই হলো পণ্যের বিক্রি কমেছে। জিডিপি বাড়লে ব্যাংকিং খাতে লেনদেন অবশ্যই বাড়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে উল্টো লেনদেন কমে গেছে। তার মানে সব পর্যায়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যাচ্ছে। ঘুষসহ কালো টাকার লেনদেন নগদে হচ্ছে। ব্যাংক লেনদেন কমে যাওয়ার পেছনে এটিও বড় কারণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের মে মাসে চেকের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোয় লেনদেন হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। কিন্তু জুনে চেকের মাধ্যমে লেনদেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ, মে মাসের তুলনায় জুনে চেকের মাধ্যমে ১৬ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা কম লেনদেন হয়েছে। এ হিসাবে লেনদেন কমেছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। জুনে এমআইসিআর চেকে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। আর ৮৫২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে নন-এমআইসিআর চেকের মাধ্যমে। যদিও দেশের ব্যাংকিং খাতে নন-এমআইসিআর চেকের মাধ্যমে লেনদেন হওয়ার কথা নয়।
চলতি বছরের মে মাসে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। কিন্তু জুনে এ লেনদেন ১২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এ হিসাবে জুনে ইএফটির মাধ্যমে লেনদেন কমেছে ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ।
দেশের ব্যাংকিং খাতে ডিজিটালাইজেশনের অন্যতম উপকরণ ক্রেডিট কার্ড। এটিএম বুথ, পস মেশিন ও ই-কমার্সের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ডের অর্থ ব্যয় করা হয়। জুনে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন ৯ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। মে মাসে ক্রেডিট কার্ডে মোট ১ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা লেনদেন হলেও জুনে তা ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। জুন শেষে দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৩ হাজার ৪২৭। এ ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর ঋণের স্থিতি ছিল ৫ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।
ক্রেডিট কার্ডের দ্বিগুণের বেশি লেনদেন কমেছে ডেবিট কার্ডে। জুনে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে মোট লেনদেন হয়েছে ১২ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। যদিও মে মাসে এ কার্ডের মাধ্যমে ১৬ হাজার ৬১১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। সে হিসাবে জুন মাসে ডেবিট কার্ডে লেনদেন কমেছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
ব্যাংকের লেনদেন কমে যাওয়া ভালো লক্ষণ নয় বলে মনে করেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, অনেকগুলো কারণে ব্যাংকের লেনদেন কমে যাচ্ছে। অন্যতম কারণ হলো মানুষের ব্যয়ক্ষমতা কমে যাওয়া। দেশ থেকে টাকা পাচার বেড়ে গেলেও ব্যাংকে লেনদেন কমে যায়। মানুষ হয়তো ভাবছে, ব্যাংকে টাকা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে রাখছে। শ্যাডো ইকোনমি যেন বেড়ে না যায়, সেদিকে নজর দেয়া দরকার।
ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মতোই লেনদেন কমেছে প্রিপেইড এবং ইন্টারন্যাশনালি ইস্যুড কার্ডে। মে মাসে প্রিপেইড কার্ডে লেনদেন ছিল ১৪৫ কোটি টাকা। জুনে এ লেনদেন ১১৬ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। চলতি বছরের জুনে ইন্টারন্যাশনালি ইস্যুড কার্ডে মোট লেনদেন ছিল ১৭৫ কোটি টাকা, যদিও আগের মাসে এ কার্ডে ১৯৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।
সব মিলিয়ে জুন শেষে দেশের ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা ডেবিট, ক্রেডিট, প্রিপেইড ও ইন্টারন্যাশনালি ইস্যুড কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭২ লাখ ৩৯ হাজার ৯০২টি। এসব কার্ডের মাধ্যমে গত জুনে মোট লেনদেন ছিল ১৩ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। যদিও মে মাসে এসব কার্ডের মাধ্যমে ১৮ হাজার ২০৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।
ঘরে বসে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের অন্যতম মাধ্যম ইন্টারনেট ব্যাংকিং। ক্রমেই সম্প্রসারিত হওয়া এ সেবার মাধ্যমে লেনদেনও কমেছে। গত মে মাসে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট লেনদেন ছিল ৬ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। কিন্তু জুনে এ লেনদেন ৪ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। সে হিসাবে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন কমেছে ২৯ দশমিক ২ শতাংশ।
একই অবস্থা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে চালু করা মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও। মে মাসের তুলনায় জুনে এ দুটি সেবার লেনদেন কমেছে যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৯ ও ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। মে মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। গত মাসে এ ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা।
সাময়িক সময়ে ব্যাংকের লেনদেন কমলেও দেশে সম্পদ বাড়ছে বলে মনে করেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান। তিনি বলেন, দেশ যে সামনে এগোচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়া মানে আমাদের সম্পদ বাড়ছে। অর্থনীতি বড় হলে ব্যাংকের লেনদেনও বাড়বে, এটিই স্বাভাবিক। দু-এক মাসে কমলেও বছর শেষে গড় লেনদেন বাড়বে বলেই মনে করি। বাংলাদেশ ব্যাংক এডি রেশিও কমিয়ে আনার জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছিল, তার প্রভাবেও লেনদেন কমতে পারে। কারণ, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বেসরকারি বেশির ভাগ ব্যাংকই ঋণ বিতরণ করতে পারেনি।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানসহ সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ব্যাংকিং খাতে অর্থের লেনদেনেও কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কালো টাকার অবাধ লেনদেন বন্ধে কঠোরতা দেখাচ্ছে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও (বিএফআইইউ)।
দেশের ব্যাংকগুলোতে লেনদেনের পরিমাণ কমার পেছনে এসব উদ্যোগও ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তিনি বলেন, আগে যেকোনো ধরনের অর্থ অবাধে ব্যাংকে ঢুকতে পারত। এখন সেটি হচ্ছে না। ব্যাংকে জমা বা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে টাকার উৎস জানতে চাওয়া হচ্ছে। তবে এটিও সত্য যে ব্যাংকগুলোর ঋণগ্রহীতাদের টার্নওভার ধারাবাহিকভাবে কমছে। আগে ঋণের গ্রাহকরা সারা বছর কিস্তি পরিশোধ না করলেও ডিসেম্বরে গিয়ে টাকা পরিশোধ করত, যাতে ঋণখেলাপি না হয়ে যায়। কিন্তু এখন গ্রাহকরা ডিসেম্বর পর্যন্ত টাকা পরিশোধ না করে অপেক্ষা করে থাকে, পরবর্তী বছর ঋণখেলাপিদের জন্য কী সুবিধা আসছে তা দেখার জন্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মেয়াদি ও তলবি আমানত ছিল ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। একই সময়ে বেসরকারি খাতে ১০ লাখ ১৬ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। যদিও গত এক বছরে (২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর) দেশের বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশের আমদানি কমেছে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অন্যদিকে একই সময়ে রফতানি কমেছে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। শুধু উন্নতি হয়েছে রেমিট্যান্স আহরণে। এ সময়ে প্রবাসীরা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে।