English Version
আপডেট : ২৫ জুলাই, ২০১৯ ১৫:৩৪

শুল্ক বৈষম্যে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার

অনলাইন ডেস্ক
শুল্ক বৈষম্যে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি করে দেশের নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের চাহিদা মেটাতে বড় ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। কম দামে ভালোমানের গাড়ি আমদানি করলেও শুল্ক বৈষম্যের কারণে নতুন গাড়ির চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে বেশি দাম পড়ছে এসব গাড়ির। এতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই মুশকিল হচ্ছে সংগঠনটির সদস্যদের। রিকন্ডিশন্ড গাড়ি খাতের সমস্যা, সমাধানের উপায় ও বারভিডার করণীয় সম্পর্কে দেশ রূপান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত কথা বলেছেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি মো. রায়হান আজাদ (টিটো)। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবুল কাশেম

বাজেটের পর রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার পরিস্থিতি কেমন?

এই বাজেটের মাধ্যমে অনেক দিন পর রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারে একটু স্বস্তি ফিরে এসেছে। শেষ দুই বছরে অবচয় সুবিধা ৫ শতাংশ হারে কর্তন হয়েছিল। এবার বাজেট আগেরবারের মতোই রাখা হয়েছে। তাই গাড়ির দাম বাড়েওনি, কমেনি। গত ১০ বছরের বিবেচনায় আমাদের ব্যবসার পরিস্থিতি ভালো না। চেষ্টা করছি এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য।

পরিবহন খাতে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির অবদান কতটুকু?

সরকারি খাত ছাড়া সবাই রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের ৯৫ শতাংশই এ গাড়ি ব্যবহার করে। কারণ, আমরা জাপানের হোম মডেলের গাড়ি আমদানি করি, যেটা জাপান নিজ দেশের নাগরিকদের ব্যবহারের জন্য তৈরি করে। জাপান যেসব নতুন গাড়ি রপ্তানি করে, রিকন্ডিশন্ড গাড়ির গুণগত মান তার চেয়ে অনেক ভালো। এজন্যই ২৫ বছর ধরে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে।

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি খাতে কর্মসংস্থান কত?

আমাদের বারভিডার সদস্য সংখ্যা ৭০০। এর সঙ্গে গ্যারেজ, ডেকোরেশন মিলিয়ে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। মোটরপার্টস সেলসম্যান, ড্রাইভারের সংখ্যাও বাড়ছে।

হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক আরও কমানো উচিত বলে মনে করেন কি না?

কয়েক বছর ধরেই আমরা শুল্ক সুবিধায় এ গাড়ি আমদানির চেষ্টা করেছি। গত বছর থেকে হাইব্রিডের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি করতে পারছি। ভবিষ্যতে এই গাড়ির ওপরই আমাদের নির্ভরশীল হতে হবে। কারণ, প্রযুক্তি এখন হাইব্রিডের দিকে। ২০৩০ সালের পর জাপান সব গাড়ি হাইব্রিডে কনভার্ট করবে। আমরা চাই রিকন্ডিশন্ড হাইব্রিডে আরও বেশি শুল্ক সুবিধা, যাতে দেশের ও ব্যবহারকারীর আরও বেশি জ্বালানি সাশ্রয় হয়।

গণপরিবহন সংকট কাটাতে বারভিডার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?

জাপানি মিনিবাস শুল্ক সুবিধায় আমদানির ব্যাপারে অনেক দিন ধরেই সরকারের আছে আবেদন করছি। অনেক কারখানা বা অফিস তাদের স্টাফদের আনা-নেওয়ার কাজে এ গাড়ি ব্যবহার করতে পারবে। এসব গাড়ি ৩০-৪০ বছর ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু আমদানি নীতিমালায় বলা আছে, পাঁচ বছরের বেশি পুরনো গাড়ি আমদানি করা যাবে না। কিন্তু জাপানে সাত বছরের আগে এ ধরনের মিনিবাস নিলামে তোলা হয় না। এ বিষয়ে বারভিডার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

অনেক ক্ষেত্রে নতুন গাড়ির চেয়ে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম বেশি দেখা যায়। এর কারণ কী?

শুল্ক কাঠামোর বৈষম্যের কারণে এমন হচ্ছে। রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে ইয়েলো বুকে যে দাম উল্লেখ থাকে, তার ওপর শুল্ককর আরোপ করা হয়। নতুন গাড়ি আমদানিতে গাড়ি সরবরাহকারী যে দর উল্লেখ করে তার ওপর শুল্ককর বসানো হয়। ১০ বছর ধরে এটা নিয়ে আমরা আন্দোলন করে আসছি। আমরা বৈদেশিক মুদ্রা কম খরচ করে বেশি শুল্ক দিচ্ছি। অথচ নতুন গাড়ির ব্যবসা করে অল্প কিছু মানুষ। এ ধরনের বৈষম্য চলতে পারে। আমাদের স্বার্থে একটি নীতিমালা প্রয়োজন।

অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখে অগ্রিম দেওয়ার পর অনেক ক্রেতা প্রতারিত হচ্ছেন। এটা কেন?

অনলাইন মার্কেটিংয়ের বাজে ব্যবহার হচ্ছে। যে গাড়ি আমদানি করতে ১০ লাখ লাগে, বিজ্ঞাপনে তার দাম সাড়ে ৯ লাখ বলা হচ্ছে। লোভে পড়ে ক্রেতারা যাচ্ছেন, অগ্রিম দিচ্ছেন। পরে গাড়ি আসছে না। ক্রেতারা পরে তাদের অফিস না পেয়ে আমাদের কাছে বিচার নিয়ে আসছেন। অনলাইনে বিজ্ঞাপনের একটি কাঠামো দরকার। কারণ, যারা বিপুল বিনিয়োগ করে শোরুম নিয়ে বসে আছেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

কার লোনে ব্যাংকের ঋণসীমা বাড়ানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন কী?

এ খাতে কোনো খেলাপি না থাকলেও সে অনুপাতে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। আগে গাড়ির মূল্যের ৩০ শতাংশ ঋণ দেওয়া হতো। অনেক চেষ্টার পর তা বাড়িয়ে এখন ৫০ শতাংশ ঋণ সুবিধা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টরা এদিকে নজর দিলে এ খাত বাঁচবে, ব্যাংকেরও লাভ হবে।

নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদ জয়ী হলে সদস্যদের সমস্যা সমাধানে বারভিডা কী উদ্যোগ নেবে?

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি খাতকে শিল্পখাত হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করব। রিকন্ডিশন্ড ও নতুন গাড়ি নির্বিশেষে শুল্কমূল্য নির্ধারণে বিদ্যমান প্রথার বদলে বৈষম্যহীন অভিন্ন পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। অটোলোনে ব্যাংকের বিনিয়োগ ৭০ শতাংশ ও সর্বোচ্চ সীমা ৪০ লাখের বদলে ৬০ লাখ টাকা নির্ধারণ ও গ্রিন ফাইন্যান্সের আওতায় হাইব্রিড গাড়ির লোনের সর্বোচ্চ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। স্কুল বাস, ট্যুরিস্ট বাসসহ রিকন্ডিশন্ড মিনিবাস আমদানি সহজীকরণে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। থ্রি হুইলার, নসিমন, করিমন, ভটভটি জাতীয় প্রায় ৫০ লাখ ঝুঁকিপূর্ণ যানের বদলে জাপানি ছোট ছোট মাইক্রোবাস, পিকআপ, ফ্রিজার ভ্যান আমদানির পথ প্রশস্ত করাসহ সদস্যদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে।