English Version
আপডেট : ২৩ এপ্রিল, ২০১৯ ১১:১৩
সূত্র:

আরেক দফা ছাড় ঋণখেলাপিদের

আরেক দফা ছাড় ঋণখেলাপিদের

ঋণখেলাপিরা একের পর এক ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। এবার ছাড় দেওয়া হলো খেলাপি ঋণ হিসাবায়নে (পর্যায় গণনা)। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ হিসাবায়নের তিনটি পর্যায়েই সময় বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে ঋণ পরিশোধে আগের চেয়ে প্রায় ছয় মাস বাড়তি সময় পাচ্ছে ঋণগ্রহীতারা। এতে প্রভিশন সংরক্ষণে বাড়তি সময় পাবে ব্যাংকগুলোও।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে গত রবিবার একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। চলতি বছরের ৩০ জুন থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই সার্কুলারে বলা হয়েছে, সব ধরনের নিয়মিত ঋণ, চাহিদা ঋণ,  মেয়াদি ঋণ অথবা যেকোনো ঋণের কিস্তি তিন মাসের বেশি তবে ৯ মাসের কম অনাদায়ি থাকলে তা সাব-স্ট্যান্ডার্ড বা নিম্নমানের খেলাপি ঋণ হিসেবে গণনা করা হবে। আগে তিন মাসের বেশি অনাদায়ি থাকলেই সাব-স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে গণনা করা হতো। অন্যদিকে ৯ মাসের বেশি কিন্তু ১২ মাসের কম অনাদায়ি থাকলে তা সন্দেহজনক ঋণ হিসেবে বিবেচিত হবে। আগে ছয় মাসের বেশি তবে ৯ মাসের কম অনাদায়ি ঋণকে সন্দেহজনক ঋণ বলা হতো। আর ১২ মাসের বেশি অনাদায়ি ঋণ বিবেচিত হবে মন্দ ঋণ হিসেবে। আগে ৯ মাসের বেশি অনাদায়ি ঋণ মন্দ ঋণ হিসেবে বিবেচিত হতো। তবে সার্কুলারে সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের একটা অংশ খেলাপি ঋণ হিসেবে দেখাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণ খেলাপি ঋণ হিসেবে গণ্য করা হতো না।

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, এ ধরনের সুবিধা দেওয়ার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। এটার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এর মাধ্যমে ঋণখেলাপিদের আরো উৎসাহিত করা হলো। এতে খেলাপি ঋণ আরো বাড়ার আশঙ্কা থাকবে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এ ধরনের সুবিধা দেওয়াকে মন্দের ভালো হিসেবে মন্তব্য করেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আগে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন ব্যবসায়ীদের ১২ বছরের জন্য ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হবে। তার চেয়ে ছয় মাস সময় বাড়িয়ে দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত ভালো। এই সময় দিয়েও যদি ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করা যায় তাতে কোনো সমস্যা দেখি না।’ বাড়তি সময় দেওয়ার ফলে ঋণটি ফেরত আসবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো যথাযথ মনিটরিং করলে ঋণ ফেরত আসবে বলে আশা করা যায়। কিন্তু সময় দিয়ে ব্যাংকগুলো চুপচাপ বসে থাকলে হিতে বিপরীত হতে পারে।’

ব্যাংকগুলোর দেওয়া ঋণের বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদ রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণীকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয়ের খাত থেকে অর্থ এনে এই প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়। ব্যাংক কম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে একদিকে ঋণখেলাপিরা বাড়তি সুবিধা পাবে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোও প্রভিশন রাখতে বাড়তি সময় পাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমানতকারীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ৯ লাখ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। এদিকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারি-বেসরকারি ১০টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল।

ব্যাংকগুলোকে মামলা ছাড়াই দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপনের সুযোগ দিয়ে এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া তাদের তিন বছরের মন্দমানের খেলাপি ঋণ অবলোপনের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এরপর চলতি মাসের শুরুতে খেলাপি ঋণ অবলোপনে একই ধরনের ছাড় দেওয়া হয়েছে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপিদেরও।