English Version
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৩:১০

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে

অনলাইন ডেস্ক
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে

দেশের ব্যাংকিং খাতে রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে খেলাপি ঋণ। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এই বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে মার্চ পর্যন্ত ১৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা এবং জুন পর্যন্ত ৭৫১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা।

স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় অযোগ্য হয়ে পড়ায় গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলাভুক্ত হয়েছে ৫৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকার অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ। এ ঋণ যোগ করলে দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

এছাড়া পুনঃতফসিল করা হয়েছে ৮৪ হাজার কোটি টাকা। পুনর্গঠন করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং ব্যাংকের পরিচালকরা ভাগাভাগি করে নিয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণের অধিকাংশ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।

পুনঃতফসিল করে গত বছরের শেষদিকে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমিয়ে এনেছিল দেশের ব্যাংকগুলো। তবে ছয় মাস যেতে না যেতেই পুরনো চেহারায় ফিরেছে খেলাপি ঋণ। বিশেষ সুবিধায় ২০১৫ সালে পুনর্গঠন করা ঋণের বড় একটি অংশ এখনও খেলাপি। সব মিলিয়ে জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।

এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন না থাকার কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। দেখা যাবে শুধু পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠিত ঋণই নয়, অন্য ঋণও খেলাপি হয়ে পড়ছে।

প্রসঙ্গত, প্রতি তিন মাস পরপর দেশের ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ও খেলাপি ঋণের প্রতিবেদন তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে ছয় মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণ বেড়েছে ৬০ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা।

গত ডিসেম্বরে দেশের ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, যা ওই সময়ে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। চলতি বছরের জুন শেষে এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা বিতরণের বিপরীতে খেলাপি হয়ে পড়েছে ৪২ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ।

ছয় মাস আগে এ ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৩৭ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা যা বিতরণকৃত ঋণের ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০১৮ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫০১ কোটি টাকা।

এর বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৩৮ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণের ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। ছয় মাস আগে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ২৯ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।

চলতি বছরের জুন শেষে বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ৩৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ২ হাজার ২৭১ কোটি টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণের ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ছয় মাস আগে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, এ সময়ে সরকারি মালিকানার দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৫ হাজার ২৪১ কোটি টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ঋণ বিতরণের আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই না করায় ক্রমেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোকে আরও কঠোর হতে হবে। না হলে ধীরে ধীরে এসব ঋণ আদায় অযোগ্য হয়ে যাবে।