বিমানের বহরে যোগ হলো ড্রিমলাইনার

দেশে পৌঁছেছে চতুর্থ প্রজন্মের উড়োজাহাজ বোয়িং- ৭৮৭। রোববার বিকেলে আকাশবীণা নামের প্রথম ড্রিমলাইনারটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর মধ্য দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নতুন যুগের সূচনা করলো। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর এর বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হবে বলে বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল ইনামুল বারী জানিয়েছেন।
বিমানের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ড্রিমলাইনার চালানোর জন্য সিঙ্গাপুর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিমানের ১৪ জন পাইলট। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে প্রকৌশল বিভাগের ১১২ জনকে। এছাড়া কেবিন ক্রুদেরও দেওয়া হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ।
বিমানবন্দরে আকাশবীণাকে গ্রহণ করেন বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ইনামুল বারী। ওয়াটার ক্যানন স্যালুটের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয় নতুন উড়োজাহাজটিকে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানান, আকাশ ভ্রমণে আরাম চাই? তা আছে পুরোমাত্রায়। শুধু আরামই নয়, চাইলে প্রিয়জনের সঙ্গে দূরালাপনের সুযোগও আছে।
ঘরের নগদ খবর নিতে নিতে চলে গেলেন দূরদেশে। আপনজনকে জরুরি যে কথা বলে আসা হয়নি বলে ছটফট করছিল মন, সে খেদ আর রইল না। ফুরফুরে মেজাজে নেমে গেলেন গন্তব্যে।
আকাশপথে এমন স্বপ্নবিলাস সার্থক করতে আধুনিক মডেলের নতুন উড়োজাহাজ নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ বিমান। এ জন্য বোয়িং ৭৮৭-৮ মডেলের উড়োজাহাজকে বেছে নেয় জাতীয় পতাকাবাহী এই বিমান সংস্থা।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট দিয়ে উড়ে যেতে পারবে স্টেট অব দ্য আর্ট প্রযুক্তির ড্রিমলাইনার। আকাশের এত উঁচু দিয়ে উড়বে, কিন্তু চেনা জগৎটা থাকবে নাগালেই। বরং গোটা বিশ্বই যেন তাঁদের মুঠোবন্দী থাকবে। ড্রিমলাইনারে বসে ওয়াই-ফাই সুবিধা পাওয়া যাবে। ট্যাক্স ও চার্জ বাদে ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ঢাকা রুটে ইকোনমি ক্লাসের ভাড়া ২০০ মার্কিন ডলার এবং ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটে ইকোনমি ক্লাসের ভাড়া ২৯০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
আকাশবীণায় আসন সংখ্যা ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি, ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। বিজনেস ক্লাসের আসনগুলো বানিয়েছে অ্যাসটেলা। ইকোনমি ক্লাসের আসনগুলো হেইকোর বানানো।
এটি যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিমান বহরে বিমানের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৫টিতে। দেশে পৌঁছানোর পর ড্রিমলাইনারকে ওয়াটার ক্যানন স্যালুটের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়।
বিমানটি দেশে আনতে গত বুধবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্যদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) ইনামুল বারীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সিয়াটলে বোয়িং কোম্পানির এভারেট ডেলিভারি ও অপারেশন্স সেন্টারে যান।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০০৮ সালে মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে ১০টি নতুন বিমান ক্রয়ের জন্য দুই দশমিক এক বিলিয়ন ইউএস ডলারের চুক্তি করে। এরইমধ্যে চারটি নতুন বোয়িং৭৭৭-৩০০ ইআর ও দুটি নতুন বোয়িং৭৩৭-৮০০ বিমান বহরে যুক্ত হয়েছে।
বাকি চারটি বিমান-ই বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। এর প্রথমটি আজ দেশে আসলো, দ্বিতীয়টি এ বছর নভেম্বর এবং সর্বশেষ দুটি ড্রিমলাইনার বিমান বহরে যুক্ত হবে আগামী বছর সেপ্টেম্বর মাসে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হতে যাওয়া চারটি ড্রিমলাইনারের নাম পছন্দ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলো হলো-আকাশবীণা, হংসবলাকা, গাঙচিল ও রাজহংস।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর ড্রীমলাইনারের প্রথম ফ্লাইট উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন রাতে ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর যাবে বিমানটি। ড্রিমলাইনার দিয়ে প্রাথমিকভাবে ঢাকা-সিঙ্গাপুর ও ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। আকাশবীণায় আসন সংখ্যা থাকছে ২৭১টি। এরমধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। বিজনেস ক্লাসে ২৪টি আসন ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত রিক্লাইন্ড সুবিধা এবং সম্পূর্ণ ফ্ল্যাটবেড হওয়ায় যাত্রীরা আরমদায়কভাবে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে ভ্রমণ করতে পারবেন। বিমানটিতে যাত্রীরা ইন্টারনেট ও ফোনকল করার সুবিধা পাবেন।
বিমানটির ককপিটেও রয়েছে নতুনত্ব, এটি একটি পেপারলেস এয়ারক্রাফট সেখানে থাকছে হেডআপ ডিসপ্লে। এর মাধ্যমে চোখের সামনের প্রয়োজনীয় তথ্য দেখতে পারবেন পাইলটরা। সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঢাকায় বিমানের ফ্লাইট অপারেশন রুমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এটি।
এর মাধ্যমে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, ককপিট, ফুয়েল, নেভিগিয়েশনসহ সব তথ্য জানতে পারবেন ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের কর্মকর্তারা। যে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে তারা অপারেশন রুম থেকে পাইলটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারবেন। এজন্য ঢাকায় বিমানের প্রধান কার্যালয়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সার্ভার স্থাপন করা হয়েছে বলে বিমানের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।