English Version
আপডেট : ১৮ আগস্ট, ২০১৮ ১৪:৩৪

ছোট গরুতে ঝুঁকি কম, লাভ বেশি

অনলাইন ডেস্ক
ছোট গরুতে ঝুঁকি কম, লাভ বেশি

নাটোর গুরুদাসপুর থেকে এসেছেন গরুর ব্যাপারী বরকত। তিনি এবার ২০টি গরু এনেছেন এই হাটে। আশা করছেন ২০টি গরু বিক্রি করে দুই লাখ টাকা লাভ করবেন। গত বছর ১৫টি গরু এনেছিলেন এই বাজারে। যদিও সেবার গরু বিক্রি করে ৭০ হাজার টাকা।লোকসান হয়েছিল তার।

শুক্রবার(১৭ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন হাটে ছাগল, মহিষ, ভেড়া শুক্রবার উঠেনি। তবে ইজারাদাররা বলছেন, আগামী দুদিনের মধ্যে এই হাট ভরে যাবে পশু দিয়ে। ছাগল, ভেড়া সবই আসবে। গত বছর প্রায় ৫০ হাজার পশু বেচাকেনা হয় এ হাটে। এবার আরও বেশি হবে বলে তারা আশা করছেন।

হাজারীবাগ হাটে গিয়ে দেখা গেল, গত বছর যে গরু ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল এবার ব্যাপারীরা সেই আকারের গরুর দাম হাঁকছেন এক লাখ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। এ হাটে শুক্রবার পর্যন্ত পর্যাপ্ত পশু আসেনি। হাটে যে পরিমাণ পশুর ধারণক্ষমতা আছে তার চার ভাগের এক ভাগ পশু উঠেছে। কেনাবেচা তেমন শুরু হয়নি। পশুর যে দাম চাওয়া হচ্ছে তাতে ক্রেতারা বিরক্ত। দাম শুনেই চলে যাচ্ছে তারা। রাগ করে অনেকে দামই বলছেন না।

এদিকে গাবতলী হাটে উঠেছে ১টি মাত্র উট। হাজারো গরুর মাঝে নিজেকে ভিনদেশি মেহমান হিসেবেই জাহির করছে যেন। নইলে মানুষের এত ভিড় কেনো! কেউ সেলফি তুলছেন। কেউ দাম জিজ্ঞেস করছেন। কোন দেশ থেকে আনা হয়েছে, এমন সব প্রশ্নে বিরক্ত দেখভালের দায়িত্বে থাকা জাফর। বিরক্ত উটটিও। উটের পাশে দুটি দুম্বাও বাঁধা।

আমজাদ ব্যাপারী উট এবং দুম্বা দুটি কিনে এনেছেন পাশের দেশ ভারতের রাজস্থান থেকে। প্রতি বছরই আনেন উট এবং দুম্বা। মূলত

আমজাদ ব্যাপারীর ছেলে জাফর উটের পাশে চেয়ারে বসেই আগুন্তকদের সঙ্গে কথা বলছেন। কত দিয়ে কিনে আনা হয়েছে, তা বলতে রাজি হলো না। দুম্বা দুটির কেনা দামও বলল না। তবে বিক্রির জন্য উটটির দাম হাঁকিয়েছেন ১৮ লাখ। আর দুম্বা দুটির দাম চাইছে ৭ লাখ।

জাফর বলেন, প্রতি বছরই এই হাটে উট আর দুম্বা বিক্রি করে থাকেন। মূলত ভারত থেকেই আনা হয় এসব পশু। অনেকেই উৎসাহ থেকে এসব পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। তবে এবার একটি উট আর দুটি দুম্বা আনা হয়েছে। উটের দাম ১৮ লাখ টাকা আর দুম্বা জোড়ার দাম চাইছি ৭ লাখ টাকা।

অপরদিকে এক হাটের পশু অন্য হাটে জোর করে নেয়ার অভিযোগও উঠেছে। যদিও সরকারি নির্দেশনায় বলা আছে, এক হাটের পশু অন্য হাটে নেয়া যাবে না। এ জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও পশুবাহী ট্রাকে হাটের নাম লিখা থাকবে বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

প্রায় আড়াই কিলোমিটার আয়তনের এ হাটের চার ভাগের এক ভাগ জায়গায় পশু উঠেছে। শুধু গরু উঠেছে এ হাটে। ছাগল, মহিষ, ভেড়া শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ওঠেনি। ইজারাদাররা বলছেন, আগামী দুদিনের মধ্যে পশু দিয়ে ভরে যাবে এই হাট। ছাগল, ভেড়া সবই আসবে।

গরুর ব্যাপারী মো. মজিদ দেয়ান নাটোর থেকে ১২টি গরু নিয়ে এসেছে। তার প্রতিটি গরু এক লাখ টাকার ওপরে ক্রয় করেছেন বলে জানান তিনি।

মজিদ বলছিলেন, আশা করছি প্রতিটি গরু বিক্রিবাবদ ১০ হাজার টাকা করে লাভ করব। গত বছর এ হাটে ১৫টি গরু নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু আশানুরূপ লাভ করতে পারিনি। দুটিতে লোকসানও দিতে হয়। সামান্য লাভ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।

যাত্রাবাড়ী-চট্টগ্রাম রোডের শনির আখড়ায় হাট, রামপুরা খালের পার্শ্ববর্তী আফতাব নগরের হাটেও পশুর দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে।

আফতাব নগরের হাটে কুষ্টিয়া থেকে প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ী গরু নিয়ে এসেছেন মো. রাজু। দামের বিষয়ে জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবার গরুর দাম একটু বেশি। কালামানিকের (নিজ বাড়িতে প্রায় দেড় বছর ধরে পোষা গরুর নাম) দাম চাচ্ছি ৫ লাখ টাকা। তবে ৪ লাখ হলে ছেড়ে দেব। আর যদি কালকের মধ্যে বিক্রি না হয়, তাহলে বাজারের দামের ওপর নির্ভর করবে দাম। তখন দাম ৫ লাখের বেশিও হতে পারে। কিন্তু ৪ লাখের নিচে বিক্রি করব না।’

কুষ্টিয়ার আমলা থেকে গরু নিয়ে আসা বাবুল নামের আর এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা ১৪টি গরু নিয়ে এসেছি। দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে এক একটি গরু বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।’

তিনি বলেন, ‘এবার গ্রামে গরুর দাম অনেক বেশি। গতবারের তুলনায় এবার প্রতিটি গরু কিনতে ১০-১৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। গত বছর যে গরু ১ লাখ টাকায় কিনেছি, এবার সেই সাইজের গরু কিনতে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার ওপরে খরচ পড়েছে।’

এদিকে হাজারীবাগ হাটের ইজারাদারদের অভিযোগ, মোহাম্মদপুর হাটের লোকজন হাজারীবাগ হাটের গরুর ট্রাক জোর করে মোহাম্মদপুরের হাটে যেতে বাধ্য করছেন। ব্যাপারীরা যেতে না চাইলে অনেক সময় তাদের মারধর করা হচ্ছে। মার খাওয়া একজন ব্যাপারীর এক হাতে আটটি সেলাই দিতে হয়েছে। তারা জানান, এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তারাও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

হাজারীবাগ হাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মুসা হাসান বলেন, লেদার কলেজ এলাকা থেকে শুরু করে হাজারীবাগ বাজারের সব রাস্তা, কালু নগরের সব রাস্তা এবং বেড়ি বাঁধের মুখ পর্যন্ত এ হাটের পরিধি। সব মিলে হাটের আয়তন প্রায় আড়াই কিলোমিটার।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ব্যাপারীদের এ হাটে আসতে দেয়া হচ্ছে না। মোহাম্মদপুরের হাটে আমাদের ব্যাপারীদের ট্রাক জোরপূর্বক প্রবেশ করানো হচ্ছে। আমাদের গরুর ট্রাকগুলোর সঙ্গে ব্যানার থাকলেও তা ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে রুট পরিবর্তন করে হাজারীবাগ হাটে ট্রাক প্রবেশ করানো হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, গরুর ব্যাপারীদের ওপর কোনো জোর-জবরদস্তি মেনে নেয়া হবে না। শুক্রবার বিকেলে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক পরিদর্শনে গিয়ে আশুলিয়ার বাইপাইলে তিনি এ কথা বলেন।

আইজিপি বলেন, প্রতি বছর পশুবাহী গাড়িগুলো হাটে যাওয়ার সময় রাস্তায় জোর করে অন্য হাটে নেয়া হয়। কিন্তু এ বছর পুলিশের তৎপরতায় সড়কের কোথাও পশুবাহী ট্রাক আটকানো হচ্ছে না। ব্যাপারীরা প্রয়োজনে নির্দিষ্ট হাটের ব্যানার লাগিয়ে নিতে পারেন। তাদের সেই হাটে পাঠাতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।