সাউথইস্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ

বেসরকারি সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করছে স্বয়ং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত ২ আগস্ট ব্যাংকটির বিরুদ্ধে দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করেছে সংস্থাটি। বিপরীতে সাউথইস্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গতকাল বুধবার পত্র মারফত বলছে, এটি তথ্যের গরমিল হয়েছে।
এ বিষয়ে সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি খোলা কাগজকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। তথ্যের গরমিল থাকতে পারে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড এনবিআরের আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর শাখায় ভ্যাট নিবন্ধিত। এলটিইউ পরিদর্শন দল চলতি বছরের ২৫ জুলাই ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করে। পরিদর্শনের সময় ব্যাংকের চলতি বছরের কর মেয়াদের ৩১ মে ২০১৮ পর্যন্ত সমন্বিত হিসাব এবং লাভ-ক্ষতি (প্রফিট অ্যান্ড লস) সংগ্রহ করা হয়। এসব তথ্য পর্যালোচনায় সংস্থার পরিদর্শক দল দেখতে পায়, ৩১ মে পর্যন্ত ব্যাংকের প্রায় তিন কোটি ৩১ লাখ টাকার ভ্যাট পরিশোধ করার কথা থাকলেও ব্যাংকটি ভ্যাট দেখিয়েছে দুই কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এতে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটি ৯৭ লাখ টাকার ভ্যাট কম পরিশোধ করেছে। সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আমানত থেকে আবগারি শুল্ক কর্তন করে তা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু সাউথইস্ট ব্যাংকের সমন্বিত হিসাব ও লাভ-ক্ষতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩১ মে পর্যন্ত ব্যাংকটির প্রযোজ্য আবগারি শুল্ক প্রায় ৫০ লাখ টাকা। সাউথইস্ট ব্যাংক প্রায় তিন লাখ টাকা কম পরিশোধ করে ফাঁকি দিয়েছে। ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট ও আবগারি শুল্কের প্রায় ৮০ লাখ টাকার রাজস্ব পরিশোধে গত ২ আগস্ট এলটিইউ কমিশনার মো. মতিউর রহমানের সই করা প্রাথমিক দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়। জানা যায়, এই পরিপ্র্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন সই করা নোটিসের লিখিত জবাব দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, সাউথইস্ট ব্যাংক ১৩২টি শাখার মাধ্যমে সারা দেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিভিন্ন সরবরাহকারীর কাছ থেকে ভ্যাট সংগ্রহ করে পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখ ট্রেজারি চালানে সরকারি কোষাগারে জমা করে। এলটিইউ পরিদর্শন দল সমন্বিত হিসাব পর্যালোচনার সময় পরিশোধযোগ্য ভ্যাট গণনার সময় মূল খাত ও উপ-খাত হিসেবে দুবার বিবেচনা করে ভ্যাট প্রায় ৯৭ লাখ টাকা অপরিশোধ বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করা হয়েছে। এনবিআর সূত্র থেকে জানায়, এর আগেও সাউথইস্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে এলটিইউ। এর মধ্যে ব্যাংকটির অ্যাডভান্স রেন্টের ওপর দুই কোটি ৫৩ লাখ টাকা, দাখিলপত্র যাচাই করে ৩৭ লাখ টাকা ও আবগারি শুল্ক বাবদ দুই কোটি পাঁচ লাখ টাকার ফাঁকি উদঘাটন করে। সাউথইস্ট ব্যাংক আবগারি শুল্ক ও দাখিলপত্র যাচাই করে উদঘাটন করা ফাঁকির রাজস্ব পরিশোধ করলেও অ্যাডভান্স রেন্টের ওপর ফাঁকি দেওয়া দুই কোটি ৫৩ লাখ টাকার ভ্যাট পরিশোধ করেনি। এ ছাড়া ব্যাংকটির বিরুদ্ধে এলটিইউ দুই কোটি ৭০ লাখ টাকা ফাঁকির মামলা করেছে, যা হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন। ২০১০-১২ অর্থবছরে ব্যাংকটি ৩৮ কোটি পাঁচ লাখ টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে, যা নিষ্পত্তির পর পরিশোধ করেছে ব্যাংকটি। জানা যায়, ভ্যাট ফাঁকি ছাড়াও সাউথইস্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। এনবিআর ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরের নিরীক্ষায় সাউথইস্ট ব্যাংকের কর ফাঁকি ৩৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা উদঘাটন করা হয়। অনুমোদনযোগ্য খরচকে মোট আয়ের সঙ্গে যোগ না করে এ ফাঁকি দিয়েছে। নিরীক্ষায় প্রকাশিত এসব আপত্তি নিয়ে মামলায় নিম্ন আদালত ব্যাংকগুলোর পক্ষে রায় দিলেও এনবিআরকে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে বলেছে সংসদীয় সরকারি হিসাব কমিটি। এনবিআর সূত্র জানায়, সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে এলটিইউ ২০১২-১৩ অর্থবছর ভ্যাট ও আবগারি শুল্ক বাবদ ২৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আদায় করেছে। এ ছাড়া ২০১৩-১৪ অর্থবছর ৩৬ কোটি ৫১ লাখ, ২০১৪-১৫ অর্থবছর ৪০ কোটি ৮৩ লাখ, ২০১৫-১৬ অর্থবছর ৫২ কোটি ২৭ লাখ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছর ৬১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা আদায় করেছে।