English Version
আপডেট : ৮ জুলাই, ২০১৮ ১১:৫০

ইউরোপে যাচ্ছে রাজশাহীর ল্যাংড়া আম

অনলাইন ডেস্ক
ইউরোপে যাচ্ছে রাজশাহীর ল্যাংড়া আম

নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা গত বছর বিদেশে আম রফতানি করতে পারেননি। তবে এবার সব শর্ত মেনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ২০ মেট্রিক টন আম রফতানি করেছেন রাজশাহীর ১৪ জন ব্যবসায়ী।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুরিয়া গ্রামের আম ব্যবসায়ী বলেন, গত বছর পোকায় ধরা কিছু আম ইউরোপে যাওয়ার কারণে হঠাৎ করেই আম নেওয়া বন্ধ করে দেন সেখানকার আমদানিকারকরা। ফলে গত বছর রাজশাহী অঞ্চলে চাষীদের প্রায় দুই লাখ ব্যাগিং করা আম বিদেশে পাঠানো সম্ভব হয়নি।   একারণে চাষীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু এবার বিদেশিদের শর্ত মেনে আমরা ১৪ জন ব্যবসায়ী একসঙ্গে আম রফতানি করেছি। এ পর্যন্ত কোনও অভিযোগ আসেনি। এবার হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি ও ফজলি জাতের ২০ মেট্রিক টন আম ইউরোপের ইংল্যান্ড, ডেনমার্ক, ইটালি ও ফ্রান্সে রফতানি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, বিদেশে আম পাঠাতে হলে ২৬টি শর্ত মানতে হয়। ব্যাগিং হচ্ছে ২৬টি শর্তের একটি। তবে ব্যাগিং করলেই চলবে না, মানতে হবে আরও ২৫টি শর্ত।

এভাবে শর্ত মেনে আম উৎপাদন ও রফতানি করা বেশ কঠিন। তারপরও শুধু বাঘা উপজেলার ১৪ জন চাষীর সঙ্গে রফতানিকারকরা এবার চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। তারা ২৬টি শর্ত মেনেই আম উৎপাদনে রাজি হয়ে বিদেশে আম রফতানি করছেন।

ঢালী বলেন, এবার বিদেশে পাঠানোর টার্গেট রয়েছে ১০০ টন আম। তবে ৪০ টনের বেশি যাবে বলে মনে হয় না। কারণ, একটন আম বিদেশে পাঠাতে গেলে ১০০ কেজি আম বাছাইয়ের সময় বাদ পড়ে যায়। তারপরও বিদেশিদের চাহিদার উপযোগী করে আম পাঠানোর চেষ্টা চলছে।

এদিকে, রাজশাহীর বাজারে ল্যাংড়া আমের সরবরাহ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা বিক্রির জন্য পাশের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ল্যাংড়া আম নিয়ে আসছেন। তাদের ভাষ্য— রাজশাহীর আশপাশের এলাকায় প্রচণ্ড গরমে ল্যাংড়া জাতের আম গাছেই পেকে যাওয়ায় আগেভাগে বিক্রি হয়ে গেছে।

নগরীর সাহেববাজার এলাকার ফল ব্যবসায়ী বলেন, শনিবার রাজশাহীতে ফজলি আম প্রতি মন ১২০০-১৪০০, আম্রপলি ২০০০-২২০০ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ২৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে পাইকারি বাজারের আম ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন বাজার দর জানান— প্রতিমন ফজলি ৮০০-১১০০ টাকা, আম্রপলি ১৬০০-২২০০ টাকা, লক্ষণা ৮০০-১১০০ ও আচারের জন্য আশ্বিনা জাতের কাঁচা আম ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

  বাগমারা উপজেলার এক আমচাষী বলেন, ফলন ভালো হলে আমের দাম কমে যায়। তাই সরকারের কাছে তার দাবি— চাষীরা যেন সহজেই পর্যাপ্ত আম বিদেশ পাঠাতে পারেন। একইসঙ্গে আম সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করার জন্য বিশেষ করে রাজশাহীতে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার দাবি জানান তিনি।

দেখতে দেখতে আমের মৌসুম শেষ হয়ে গেলো। আলুর মতো যদি হিমাগার করা হতো, তাহলে চাষীরা আম সংরক্ষণ করে ধীরে ধীরে বিক্রির সুযোগ পেতো। সেক্ষেত্রে সারাবছেই মানুষ আম খেতে পারতো।

রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ২৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ করা হয়েছে। এই জেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন।

একইভাবে নওগাঁ জেলায় ১২ হাজার ৬৭১ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৬১ হাজার ২৪২ মেট্রিক টন, নাটোরে ৪ হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে ৫৬ হাজার ২১ মেট্রিক টন উৎপাদিত আমের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এছাড়া, রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর রাজশাহী জেলায় ১৬ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৪৬৩ হেক্টর । রাজশাহী জেলার বাগানগুলোতে রয়েছে মোট ২৪ লাখ ২৬ হাজার ১৮৯টি আমগাছ।

এবার ২ লাখ ১৭ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন আশ্বিনা, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগ, ক্ষিরসাপাত, আম্রপালি, তোতাপরি ও স্থানীয় জাতের গুটি আমের ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে ৭০ ভাগ আম বাগান থেকে বাজারে চলে এসেছে। এখনও বিভিন্ন জাতের ৩০ ভাগ আম বাগানে রয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের হিসাব মতে,রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি আমের গাছ রয়েছে চারঘাট ও বাঘা উপজেলায়। এরমধ্যে চারঘাট উপজেলায় ৩ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৪৫০টি ও বাঘা উপজেলায় ৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৪টি আম গাছ রয়েছে।