English Version
আপডেট : ২৮ জুন, ২০১৮ ১২:৪৮

বেহাল মনিটরিংয়ে বাড়ছে চালের দাম

অনলাইন ডেস্ক
বেহাল মনিটরিংয়ে বাড়ছে চালের দাম

বাজেটে চাল আমদানিতে শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করেছে। এলসি (ঋণপত্র) খোলার ক্ষেত্রে শূন্য মার্জিন প্রত্যাহারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণায় চালের মূল্য বৃদ্ধির পালে হাওয়া লেগেছে। এ অবস্থায় উৎপাদন পরিস্থিতির সঠিক হিসাবের তথ্য নিরূপণ করে সরকার কে পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।  

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে চালের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে চালের ঘাটতি যতটা দায়ী, তার চেয়ে বেশি কাজ করে বেহাল মনিটরিং, সরকারের সঠিক হিসাবের অভাব ও মানুষের কাছে সময় মতো এ সম্পর্কিত সঠিক তথ্য না পৌঁছানো। এ বিষয়ে পিআরআইএর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর খোলা কাগজকে বলেন, দেশে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়েছে, আর যে পরিমাণ আমদানি হয়েছে তাতে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কথা না। তারপরও চালের দাম বৃদ্ধি পেলে সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে কেন চালের দাম বাড়ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী গত বছর বন্যায় ধানের ক্ষতি হয়েছিল সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর বন্যার সময় বলা হয়েছিল ৭ থেকে ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান নষ্ট হয়েছে। এ ঘাটতি মেটাতে সরকার চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়। এলসি খোলাতেও মার্জিন শূন্য করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এর ফলে গত বছর মে-আগস্ট ৪ মাসে আমদানি হওয়া চালের পরিমাণ ছিল ক্ষতি হওয়া ধানের প্রায় দ্বিগুণ। তারপরও চালের দাম কমা শুরু করেনি। এবং চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-মে ১১ মাসে চাল আমদানি ৪৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এ চালের প্রতি কেজির গড় আমদানি মূল্য ৩৩ টাকা। তারপরও চালের বাজার স্বাভাবিক হয়নি।  গতকাল মিরপুর-১০ এর ১ নম্বর বিল্ডিংবাজার ও সেগুনবাগিচার সিটি করপোরেশন বাজারে দেখা গেছে, মোটা চালের ধরন ভেদে প্রতি কেজির দাম ৪৮ থেকে ৫২ টাকা ও চিকন চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা। চাল বিক্রেতারা বলছেন, বন্যার পর গড় ৬/৭ মাসে চালের দাম যেটুকু কমেছিল গত এক মাসে চালের দাম আবার কিছুটা বেড়েছে।   

গত বছর বন্যার সময়ের চালের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বন্যার আগে মোটা চালের কেজি ছিল ৩৪ থেকে ধরন ভেদে ৩৮ টাকা ও চিকন চালের কেজি ছিল ৪০ থেকে ধরন ভেদে ৪৪ টাকা। বন্যার পর মোটা চালের দাম বৃদ্ধি পেয়ে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকাতে উঠে। আর চিকন চাল ৬৫ থেকে ধরন ভেদে ৭০ টাকায় উঠে। কিন্তু যে পরিমাণ ধানের ক্ষতি হলো হার পাঁচগুণ চাল আমদানি হলেও আগের দামে আর ফিরে যায়নি। এ অবস্থায় চাল উৎপাদন, চাহিদা ও বাজার পরিস্থিতির আপডেট তথ্য সরকারের কাছে থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন চালের দাম ৪০ টাকার নিচে নামা ঠিক নয়। কৃষকের স্বার্থে চালের এ দাম হওয়া উচিত। তারা বিভিন্ন সময় বলেছেন, দেশে যে ধান উৎপাদন হয়েছে এখন আর চাল আমদানির প্রয়োজন নেই। দেশের চালেই দেশের চাহিদা পূরণ সম্ভব। এরপর থেকেই চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় সরকার। আর এর সঙ্গে সঙ্গে চালের দাম ৫০ পয়সা থেকে ধরন ভেদে ১ টাকা বেড়ে গেছে।  তবে দেশের উৎপাদিত চালের সঠিক তথ্য সরকারের কাছে নেই বলে মনে করেন চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক উদ্দিন। ফোনে তিনি খোলা কাগজকে বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় ধান উৎপাদন নিয়ে যে তথ্য দিচ্ছে তা সঠিক নয়। সঠিক যদি হয় তাহলে সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে এ চাল কোথায় যাচ্ছে? কার কাছে এ চাল আটকে আছে? তিনি বলেন, চাল আমদানিতে শুল্ক আরোপের ফলে ভারত থেকে দেশে আর চাল ঢুকছে না। চাল আমদানিতে ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে প্রতি কেজি চাল আমদানি করতে পড়ে যাচ্ছে ৪৫ টাকা। শুল্ক আরোপের আগে প্রতি কেজি চালের আমদানি মূল্য ছিল ৩২ টাকা।  আর এ কারণেই দেশে চালের দাম বেড়ে গেছে।