বাজেট পাস হচ্ছে আজ

বেশ কয়েকটি সংশোধনী এনে সংসদে পাস হতে যাচ্ছে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট। আজ বৃহস্পতিবার সংসদে এই বাজেট পাস হবে। এর আগে ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। গতকাল বাজেট আলোচনায় আগামী বাজেটে রাজস্ব খাতে কোনো পরিবর্তনের প্রস্তাব করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বিভিন্ন সময় সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন প্রস্তাবের আলোকে কিছুটা কাটছাঁট করে সংসদে বাজেট পাসের প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে অর্থবিল ২০১৮ কণ্ঠভোটে পাস হয়। জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং স্পিকার তা পাসের জন্য কণ্ঠভোটে দেন। এ সময় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে বিলটি পাস করেন এবং অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। গতকাল অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু দিকনির্দেশনা ও সুপারিশ দেন প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে। সেই সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে বাজেট পাসের পূর্ণ প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত ৭ জুন আগামী অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটের বেশ কয়েকটি বিষয়ে ছোটখাটো পরিবর্তনের বিষয়ে প্রস্তাবনা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক খাতের কর্পোরেট ও সবুজ শিল্প কর, আইসিটির ওপর বর্ধিত কর প্রত্যাহার অন্যতম। এ ছাড়া বিনিয়োগ বাড়ানো ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। পরে সে আলোকেই বাজেট পাস হবে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী সচিবালয়ে সাংবাদিদের জানান, বাজেটে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হবে না। কিছু কিছু বিষয়ে কাজ করছি। এগুলো খুব বড় কিছু না। তিনি বলেন, এটা এখন বাড়ানো হবে না, ভবিষ্যতেও বাড়ানো হবে না। কর্পোরেট ট্যাক্সে পরিবর্তন আনার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি জানান। মোবাইল বা ইন্টারনেটে ভ্যাট কমানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, মোবাইলে তো আমার প্রস্তাবই অত্যন্ত ভালো। আইসিটির বেশির ভাগ ট্যাক্সই ৫ শতাংশ। আর বাকি সব জিরো এই ধরনের। এ বিষয়ে আইসিটি তো খুব সন্তুষ্ট। তবে এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমার একটা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আরো কিছু প্রস্তাব ছিল।
এগুলো প্রায়ই আমরা সংশোধন করবো। এসব বিষয়ে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার খুবই খুশি। আমরা আশা করছি, যে আইসিটিতে আমরা ইয়াং জেনারেশনকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করতে পারবো।
এর আগে পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ জানায়, বাজেট প্রণয়নের আগে বিজিএমইএর দাবি ছিল কর্পোরেট কর বিদ্যমান ১২% থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা। অথচ বাজেট বক্তৃতায় পোশাক খাতের কর্পোরেট কর ১২% থেকে বাড়িয়ে ১৫% এবং সুবজ শিল্পের জন্য ১০% থেকে বাড়িয়ে ১২% করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে চূড়ান্ত বাজেটে তা সংশোধন করার ব্যবস্থা করা হবে। আর আলোচনায় সেটা সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করা হয়। গত ৭ জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রয়েছে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসহ ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ১১ শতাংশ। এ ব্যয় নিশ্চিত করতে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা; যা জিডিপির ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এনবিআর-বহির্ভূত উৎস থেকে রাজস্ব প্রাক্কলন করা হয়েছে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, করবহির্ভূত খাত থেকে ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা পাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেটের সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা; যা জিডিপির ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণসহায়তা বাবদ প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৬০ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণ (ব্যাংকসহ) প্রাপ্তির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭১ লাখ ২২৬ কোটি টাকা।