English Version
আপডেট : ২৬ জুন, ২০১৮ ১১:৫৪

সরকারি ব্যাংকের 'অলস' টাকা চায় বেসরকারি ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
সরকারি ব্যাংকের 'অলস' টাকা চায় বেসরকারি ব্যাংক

ব্যাংক ঋণে সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে ৬ শতাংশ সুদে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পড়ে থাকা 'অলস' টাকা চাচ্ছে দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এজন্য তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। সোমবার অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমানসহ ব্যাংক খাতের সিনিয়র ৫ ব্যাংকের এমডি বৈঠক করেছেন গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে।

এ ব্যাপারে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পড়ে থাকা অলস টাকা ৫ শতাংশ বা ৬ শতাংশের কমে পাওয়া গেলে ঋণে সুদহার এক অঙ্কে (৯ শতাংশ) আনা সহজ হবে। এজন্য আমরা কম সুদে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের টাকা পেতে চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিলে সরকারি ব্যাংকের টাকা কম সুদে পাওয়া যাবে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।   জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তাদের সংগৃহীত আমানতের মাত্র ৫৪ শতাংশ ঋণ হিসেবে বিতরণ করেছে। বিধি অনুযায়ী ১৯ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখার পরও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর হাতে ২৭ শতাংশ আমানত ‘অলস’ পড়ে আছে, যা ৬ শতাংশ সুদে সরকারের বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ হয়েছে। এই ‘অলস’ অর্থ বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ৯ শতাংশের কমে দিচ্ছে না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।

এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কোনোভাবেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৯ শতাংশের কম সুদে ঋণ দিতে পারবে না। কারণ, সরকারি ব্যাংকও এক একটি আলাদা আলাদা কোম্পানি। তারা ৬ শতাংশের বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করেছে, যা কোনোভাবেই ৯ শতাংশের কম সুদে ঋণ বিতরণ করতে পারবে না।

এর আগে বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ‘অলস’ অর্থ বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ব্যবহার করার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছে।   এ প্রসঙ্গে বিএবি সভাপতি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বিপুল পরিমাণ অলস অর্থ পড়ে রয়েছে। সেই টাকা বেসরকারি ব্যাংক ব্যবহার করতে পারলে সুদের হার এক অঙ্কে নেমে আসবে।

সম্প্রতি সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার কথা বলে চার ধরনের সুবিধা নিয়েছেন বেসরকারি ব্যাংকের মালিকরা। নতুন করে আরও ৩ ধরনের সুবিধা পেতে যাচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংকের করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

এর আগে বিএবির চাহিদা অনুযায়ী সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা; সিআরআর ১ শতাংশ হ্রাস; ঋণ আমানতের হার (এডিআর) সমন্বয়সীমার সময় বাড়ানো এবং রেপো রেট ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। তারপরও ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামেনি।

অবশ্য সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের চাপে গত ২০ জুন বিএবি ব্যাংকে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়। সে অনুযায়ী আগামী ১ জুলাই থেকে ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার হওয়ার কথা ৯ শতাংশ।   তবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলছেন, ব্যাংকিং খাত নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাতে সংকট কাটবে না; বরং বাড়বে। যেহেতু ব্যাংক খাতে সুশাসন নেই, ফলে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তাতে ব্যাংক খাতে সংকট আরও গভীর হতে পারে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ব্যবসায়ীদের উচ্চ সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এতে ব্যবসার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন তারা। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে বা এক অঙ্কে নামিয়ে আনার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।