English Version
আপডেট : ২১ জুন, ২০১৮ ১৪:৫১

সুদের হার হবে নয়-ছয়

অনলাইন ডেস্ক
সুদের হার হবে নয়-ছয়

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: আমানতের বিপরীতে কাউকে ৬ শতাংশের বেশি সুদ দেবে না ব্যাংকগুলো। আবার ব্যবসা বা শিল্পকারখানা করার জন্য ব্যাংক থেকে কেউ ঋণ নিলে তার বিপরীতে ব্যাংকগুলো সুদ নেবে ১০ শতাংশের কম।

আগামী ১ জুলাই থেকে এই দুই সুদের হার কার্যকর করতে গতকাল বুধবার দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকায়। একটি হয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে।   অন্য বৈঠক হয়েছে বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের সভাপতিত্বে গুলশানে সংগঠনটির কার্যালয়ে।

ব্যাংকগুলোর স্বার্থে প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট কর ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নগদ জমার হার (সিআরআর) ১ শতাংশ কমানো এবং টানা ৯ বছর ব্যাংকের পরিচালক থাকা ও এক পরিবারের ৪ জনকে ব্যাংকের পর্ষদে থাকার সুযোগ দেয় সরকার।

এত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও সুদের হার না কমায় বিরোধী দলের সাংসদ এবং অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র সমালোচনা ছিল। আর এর আগে গত এপ্রিলে এক মাসের মধ্যে সুদের হার কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্যাংকমালিকেরা।

সচিবালয়ে গতকালের বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বিএবি তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা নির্দেশনা দিতে পারি শুধু রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে।   এই বৈঠকে বলা হয়েছে, তারা যাতে আমানতের সুদ না বাড়ায়। আর প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, ঋণের সুদ এমন হওয়া উচিত না, যাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়।

আমানত ও ঋণ—কোন সুদের হার কত হবে, অর্থমন্ত্রী তা প্রকাশ করেননি। আবার বিএবি আমানতের সুদ ৬ শতাংশের কথা বলেছে শুধু ৩ মাস মেয়াদের ক্ষেত্রে। অন্য কোনো মেয়াদি আমানতের সুদের হার নিয়ে কিছু বলেনি বিএবি।

সচিবালয়ের বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১ জুলাই থেকে একক অঙ্কের সুদহার কার্যকর হবে।

আগে যারা দুই অঙ্কের সুদে ঋণ নিয়েছে তাদের কী হবে বা কোনো অস্থিরতা হবে কি না, গভর্নরকে এমন প্রশ্ন করা হলে জবাব দেন ডেপুটি গভর্নর মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, এসব আলোচনা এখনো হয়নি। কোন কোন খাতে কী কী করা হবে, সে ব্যাপারে আরও কাজ করার আছে।   সেই কাজগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক করবে কি না, জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান বলেন, না, না, যারা করার তারাই করবে। তারা ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দেবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিএবির গতকালের বৈঠকের সিদ্ধান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতে যে সুস্থ পরিবেশ নেই, তার বড় প্রমাণ হচ্ছে একটা অ্যাসোসিয়েশন ঠিক করে দিচ্ছে সুদের হার কত হবে। বিষয়টা প্রতিযোগিতামূলক না হয়ে বরং বাজার অর্থনীতির পরিপন্থী হলো।

খেলাপি ঋণ উদ্ধারের পাশাপাশি ব্যাংকের বাড়তি খরচ কমিয়েও ঋণের সুদ কমানো যায় বলে মনে করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঋণের সুদ কমাতে গিয়ে যে জোর করে আমানতের সুদ কমানো হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এদিকে বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বৈঠকে বলেন, ঋণের সুদ ১৩, ১৪ ও ১৫ শতাংশ থাকলে ব্যবসায়ে মুনাফা করতে হবে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ। কিন্তু দেশে এমন কোনো ব্যবসা কি আছে যাতে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মুনাফা করা সম্ভব?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুদের হার একক অঙ্কে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন, উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম মজুমদার বিএবির অন্য সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, একক অঙ্ক বোঝেন তো কোনটি? ১০ কিন্তু একক অঙ্ক না। এর নিচে হতে হবে। আর আমানতের সুদ কখনো মূল্যস্ফীতির নিচে হয় না।

নজরুল ইসলাম মজুমদার জানান, সভা শুরুর কিছুক্ষণ আগেই তিনি গভর্নরের (ফজলে কবির) সঙ্গে কথা বলেছেন। গভর্নর তাঁকে জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতির হার এখন ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, গভর্নরকে বলেছি বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে যারা ১২ থেকে ১৩ শতাংশ সুদে আমানত রাখার কথা জানিয়ে খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠায়। ওইটাকে যদি বন্ধ করা না যায়, তাহলে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ ৬ শতাংশ ঠিক করলেও টাকা ওইখানে চলে যাবে। এ ব্যাপারে তদারকি করতে হবে।   সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক আজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা যারা ব্যবসা করি, আবার ব্যাংকেরও পরিচালক, তাঁরা শাঁখের করাতে আছি। ব্যবসা ঠিক রাখব, না ব্যাংক রক্ষা করব? তবে সবাই উপলব্ধি করছি যে সুদের হার কমাতে হবে। তবে স্প্রেড (আমানত ও ঋণের সুদের হারের পার্থক্য) নিয়ে চিন্তা করতে হবে।

ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান এ রউফ চৌধুরীরও প্রশ্ন, 'স্প্রেড কত হবে?' তিনি বলেন, ব্যাংক যাতে মুনাফা করতে পারে, তা-ও তো ভাবতে হবে। অন্যদিকে বড় সমস্যা হচ্ছে খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণ উদ্ধারে সরকারের সহযোগিতা দরকার।

তবে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। পাশাপাশি সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেন তিনি।

ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকমালিকদের মধ্যে ৫ থেকে ৭ জনের একটি চক্র আছে, যারা কায়দা করে সুদের হার ৯ থেকে ১১ শতাংশে নিয়ে যেতে পারে। আবার প্রকাশ্য-লুক্কায়িত সেবা মাশুলের নামেও টাকা কেটে নিয়ে যেতে পারে তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে কঠোরভাবে এগুলো তদারক করা।