ক্রেতাস্বল্পতার প্রভাব পড়েছে দামে
ঈদের পর এখনো ঠিক জমে উঠেনি রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার। ক্রেতার অভাবে বাজারে সবজিসহ সব পণ্যের চাহিদা ও যোগান দুটোই কম। যার কিছুটা প্রভাব পড়েছে দামের ওপর। চাহিদা কম থাকায় কিছু জিনিসের দাম কমেছে। আবার বেড়েছে বেশ কিছু পণ্যের দাম।
ঈদের আগে একচেটিয়া দাম বেড়েছিল নানা ভোগ্যপণ্যের। রমজানের আগে ও রমজান মাসেও দাম বেড়েছিল কয়েক দফায়। যার মধ্যে ছিল বেগুন, শশা, পেঁপে, মাংস, মশলা থেকে শুরু করে রমজান ও ঈদে বাড়তি চাহিদায় থাকা বিভিন্ন পণ্য। ঈদের পর ক্রেতা সংকটে ভুগছে বাজারগুলো। ঈদের ছুটিতে রাজধানী ছেড়ে যাওয়া মানুষের একটি বড় অংশ এখনো ঢাকায় এসে পৌঁছাননি। ঢাকায় পুরোপুরি লোকজন না ফেরা পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা ও যোগান কোনোটি স্বাভাবিক হবে না বলে জানান বিক্রেতারা।
ক্রেতা চাহিদা না থাকায় কমেছে সবজির দাম। কচুরলতি, পটল, ঢেঁড়স, বরবটি, পেঁপে, শশার দাম কমেছে কেজিতে ৫-১০ টাকা হারে। রমজানে সেঞ্চুরি হাঁকানো বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।
এছাড়া কচুরলতি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে, একই দামে বিক্রি হচ্ছে পটল, শশা। কেজিতে ১০ টাকা কমে ঢেঁড়স ৩৫-৪০ টাকা। পেঁপে ও দুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে।
মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা বলেন, বাজারে কাস্টমার আছে? কাস্টমার না থাকলে মাল আইনা কী করুম? অল্প আনি অল্প বিক্রি করি। লোকজন ঢাকায় আসুক, তখন বাজারের কাস্টমারও থাকবো, আমগো দোকানে মালও ভরা থাকবো। আবার দামও বাড়তে পারে। যে মালের চাহিদা বেশি থাকে, ঐডার দাম বাড়ে। ঈদের আগে আগে আকাশছোঁয়া দাম হওয়ার কথা থাকলেও ক্রেতা সংকট কিছুটা হলেও লাগাম টানতে সক্ষম হয়েছে মাংসের দামে। ৫০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি হলেও মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচাবাজার ও টাউন হল বাজারে কোথাও কোথাও ৪৮০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে।
একই সঙ্গে ঈদের দ্বিতীয় দিনও ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও, কেজিতে পাঁচ টাকা কমে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কমেছে ব্রয়লার মুরগির ডিমের দামও। হালিতে তিন টাকা করে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৪-২৫ টাকায়।
তবে চাহিদা থাকায় দাম বেড়েছে করলা, কাঁকরোল ও ঝিঙার। অপরিবর্তিত আছে কচুরমুখির দাম। প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
৩০ টাকা কেজি ঝিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।তবে বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ আবার ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের তুলনায় কেরানীগঞ্জ জেলার কলাতিয়া উপজেলা থেকে আসা সবজির চাহিদা বেশি বলে জানান বিক্রেতারা। উল্লিখিত দামের ওপর ১০ থেকে ২০ টাকা হারে কেজি প্রতি বেশি গুণতে হবে কলাতিয়া থেকে আগত সবজি কিনতে।
তবে বিক্রেতাদের দাবি, চাহিদা থাকায় এসব পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে ক্রেতার চোখে লাগতে পারে এমনভাবে দাম বাড়েনি বলেও দাবি করেন বিক্রেতারা।
সবজি বিক্রেতা বলেন, সবজিতে ঘাটতি আছে। এক কেজি মাল পচলে চালান ধইরা টান দেয়। তাই কিছু কিছু জিনিসে কয়েক টাকা বাড়ছে। অনেক সবজির দাম কমছে। কলাতিয়ার সবজির দাম সারা বছরই বেশি। কোনোদিন দুপুরের পর কলাতিয়ার সবজি কেউ পাইছে, এমন কথা কেউ কইতে পারবো না।
সকালে মাল আসার পরই বেচা শেষ। তাজা জিনিস মানুষ ১০/২০ টাকা বেশি হইলেও নিতে চায়। তবে কেজিতে ৫-৭ টাকা দাম বেড়েছে গোল আলুর। ১৮-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া আলু এখন ২৫ টাকা।
বাজারে ক্রেতা সমাগম স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে কমে আসতে পারে সবজির দাম। পচনশীল পণ্যে বিক্রেতার ঘাটতি গুণতে হয় বলে বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে বিক্রেতারা জানান। আবার ক্রেতার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে মাছ, মাংসের দাম এক দফা বাড়বে বলেও জানাচ্ছেন অনেক বিক্রেতা।