English Version
আপডেট : ৯ জুন, ২০১৮ ১৭:৪৯

বাজেট বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ: এফবিসিসিআই

অনলাইন ডেস্ক
বাজেট বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ: এফবিসিসিআই

বাজেট বাস্তবায়ন প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। একই সঙ্গে বর্ধিত অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট (এটিভি) প্রত্যাহার, কর্পোরেট কর হ্রাস, ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর সীমা বৃদ্ধি, অ্যাপসভিত্তিক সেবা পাঠাও-উবারের ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার, ঋণ সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া এবং ব্যাংকের টাকা লুটপাটকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।   সংগঠনটির মতে, প্রতি বছর বড় বাজেট দেয়া হচ্ছে। কিন্তু পরে সংশোধন করতে হচ্ছে। বাজেট বাস্তবায়নের হার বাড়াতে বছরের শুরু থেকেই সুষ্ঠু মনিটরিং জোরদার জরুরি। একই সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং তদারকের মান নিশ্চিত করা উচিত। তা না হলে বাজেট বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।

শনিবার প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে এফবিসিসিআইয়ের মতামত তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। রাজধানীর মতিঝিলে নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনটি বাজেট নিয়ে আয়োজন করা হলেও এফবিসিসিআই সভাপতি বেশির ভাগ সময় ব্যাংকের উচ্চসুদ নিয়ে কথা বলেন।   লিখিত বক্তব্যে শুরুতে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, মুষ্টিমেয় কিছু স্বার্থন্বেষী মহলের কারণে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে, যা নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। বিষয়টি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার প্রস্তাব করছি - যাতে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন বজায় থাকে।

ব্যাংকব্যবস্থা থেকে অধিক ঋণ নেয়ার কারণে উৎপাদনশীল খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ঋণব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীলতা উৎপাদনশীল খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণগ্রহণের প্রবণতা বেসরকারি খাতের ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে যাতে প্রতিবন্ধকতা বা বাড়তি চাপ সৃষ্টি না করে সে বিষয়ে তদারকি জোরদার করা প্রয়োজন।

ব্যাংকঋণের উচ্চসুদ কমিয়ে আনতে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংকিং খাতে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে তাতে ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসবে আশা করছি। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে অবশ্যই এ ব্যাপারে কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমাজে দুই ধরনের খেলাপি আছে। প্রথমত ইচ্ছাকৃত খেলাপি। এরা ব্যাংকের টাকা নিয়ে আর ফেরত দিতে চায় না। এ ধরনের যারা ব্যাংকের টাকা লুটপাট করছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এদের জন্য এফবিসিসিআই অ্যাডভোকেসি করবে না। দ্বিতীয়ত অনিচ্ছাকৃত খেলাপি। ব্যাংকের উচ্চসুদ, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, হরতাল-অবরোধের কারণে অনেক ভালো ব্যবসায়ীও খেলাপি হয়ে যাচ্ছেন। এদের গঠনমূলকভাবে সহায়তা দিতে হবে।

  'বাজেট অনেক ব্যবসাবান্ধব নীতি আছে' সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসাবান্ধব পলিসি আছে। যেমন ব্যাংকের কর্পোরেট কর হ্রাস, রুটি-বিস্কুট, হাওয়াই চপ্পলে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেয়া, ওষুধশিল্পের কাঁচামালের শুল্ক হ্রাস ও আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি, স্থানীয় ভারি শিল্প (মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর) ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল ও মাল্টিলেয়ার ট্যাক্সেশন বাতিল করা হয়েছে।

অন্যদিকে আমদানি পর্যায়ে এটিভি ১ শতাংশ বৃদ্ধি, পোশাক খাতের কর্পোরেট কর ও উৎসে কর বৃদ্ধি, অ্যাপসভিত্তিক সেবা উবার-পাঠাওয়ের ওপর ভ্যাট আরোপ ও অগ্রিম আয়কর বহাল রাখা হয়েছে। এগুলো যৌক্তিক করতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হবে।

কর্পোরেট কর: কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের স্বার্থে ব্যাংকের মতো অন্য উৎপাদনশীল খাতেও কর্পোরেট হার আড়াই শতাংশ কমানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, কর্পোরেট করহার কমালে মুনাফার অংশ ব্যবসায়ীরা পুনঃবিনিয়োগ করতে পারবেন অথবা লভ্যাংশ বিতরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আপেক্ষিকভাবে বেশি অবদান রাখবে। কর্পোরেট হার কমালে রাজস্ব কমে না। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে: রাজস্ব আয় বাড়াতে এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে এনবিআরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের এই উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অনেক ক্ষেত্রে করদাতাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা হয় এবং আইনকানুনের অপপ্রয়োগ ও কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা ক্ষমতার কারণে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হয়ে থাকে। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিবিড় মনিটরিং ও পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যে গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রাজস্ব আয় যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই হারে এনবিআরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আরও উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।   অস্থিতিশীল রাজনৈতিক কর্মসূচি চাই না: এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ বছরে রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অনেক ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ওই ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি চায় না। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করা সব রাজনৈতিক দলের অধিকার। কিন্তু অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো জ্বালাও-পোড়াও রাজনৈতিক কর্মসূচির সমর্থন করি না।

রাজস্ব-সংক্রান্ত প্রস্তাব: ব্যাংকের মতো অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর আড়াই শতাংশ হ্রাস, আগের নিয়মেই পোশাকশিল্পের কর্পোরেট ট্যাক্স ও রফতানিকে উৎসে কর আরোপ, ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ থেকে ৩ টাকায় উন্নীতকরণ, আমদানিতে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার, আয়কর কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা ক্ষমতা হ্রাস, পারকুইজিট সীমা বৃদ্ধি, যানবাহনের লিফ স্প্রিংয়ের সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি, অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট আগের নিয়মে ৪ শতাংশ হারে আদায়, অ্যাপসভিত্তিক রাইডশেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের (উবার, পাঠাও) ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সহসভাপতি মুনতাকিম আশরাফ, পরিচালক হাফেজ হারুন, শমী কায়সার প্রমুখ।