আগামী বাজেটে পাঁচ খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ

আগামী ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বাজেটে পাঁচটি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। এগুলো হলো- শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা, রাস্তাঘাট তৈরি ও মেরামত, কৃষি কাজে ভর্তুকি ও চাকরির জন্য কলকারখানা তৈরি।
গত অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও আগামী বাজেটে সাধারণ মানুষের অগ্রাধিকার চিহ্নিত করতে ব্র্যাক ও ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি) যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ কর্মসূচির কর্মকর্তা চিররঞ্জন সরকার সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। গবেষণায় আশঙ্কা করা হয়েছে, নির্বাচনি বছরের বাজেটে রাজস্ব আয় কমে গিয়ে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধি পেতে পারে। গত কয়েক বছরের বাজেট ও বাজেট ব্যয়ের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে গবেষণায় আরও বলা হয়- আগামী অর্থবছর ২০১৮-২০১৯-এর বাজেট হবে নির্বাচনি বাজেট।
এই বাজেটে রাজস্বপ্রাপ্তি কম হতে পারে। যেহেতু প্রথম ছয় মাসে সরকারের খরচ বৃদ্ধি পাবে সেহেতু অভ্যন্তরীণ ঋণ যেমন ব্যাংক-ঋণ গ্রহণ বেড়ে যেতে পারে। এতে করে দেশের সার্বিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত এপ্রিল মাসে দেশের ৬৪ জেলায় মোট ৩ হাজার ৮৪৬ জন উত্তরদাতার অংশগ্রহণে এই গবেষণাকর্মটি পরিচালিত হয়। উত্তরদাতারা যে বিষয়গুলোর ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন সেগুলো হলো- শিক্ষাখাতে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, ভাতা ইত্যাদি প্রদান (২৫ শতাংশ), বই ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ (২৪ শতাংশ), নতুন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা স্থাপন (১৮ শতংশ), স্বাস্থ্যখাতে কম খরচে চিকিৎসা ব্যবস্থা (৪২ শতাংশ), নতুন হাসপাতাল/ক্লিনিক তৈরি (১৯ শতাংশ), দুস্থদের জন্য স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা (১২ শতাংশ), কৃষিখাতে স্বল্পমূল্যে উপকরণ প্রদান (৬৩ শতাংশ,), স্বল্প সুদে ক্ষুদ্রঋণসুবিধা (১৬ শতাংশ), ফসল বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা (৫ শতাংশ), সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বয়স্ক ভাতা (৩৫ শতাংশ), আশ্রয়হীনের আশ্রয়ের ব্যবস্থা (১৭ শতাংশ), বিধবা ভাতা (৯ শতাংশ), দুর্যোগ খাতে দুর্যোগ-পূর্ববর্তী পূর্ভাবাস ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ (৪৭ শতাংশ), দুর্যোগকালীন ও পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা ও সাস্থ্যসেবা (১০ শতাংশ), বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলার জন্য বাঁধ নির্মাণ (৯ শতাংশ%) এবং অভিবাসনখাতে স্থানীয়পর্যায়ে সরকারি অফিসের সহায়তা বাড়ানো (৩৪ শতাংশ), সহজ ঋণসুবিধা (২১ শতাংশ) এবং গ্রামপর্যায়ে সরকারি তথ্যসুবিধা বাড়ানো (২০ শতাংশ)। গত বছরের ব্যয় পর্যালোচনা ও আগামী বাজেটে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার আলোকে এই গবেষণায় তিনটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলো হলো ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাহিদার সঙ্গে সামাজিক ক্ষেত্রের বাজেট বরাদ্দ সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
এসডিজি অর্থায়নের জন্য সরকারের নির্ধারিত পাঁচটি উৎস থেকে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ও সেটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা থাকা জরুরি। বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-এর আওতায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার কারণে সামনে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে। তাই অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকারি অর্থ ও অন্যান্য সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, অর্থায়নের স্বচ্ছতা আনয়ন এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।