English Version
আপডেট : ৩০ মে, ২০১৮ ১১:০৫

দেশ বাদ দিয়ে বিদেশ থেকে গম কেনা হচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক
দেশ বাদ দিয়ে বিদেশ থেকে গম কেনা হচ্ছে

অভ্যন্তরীণ বাজার বাদ দিয়ে বিদেশ থেকে গম কিনছে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৫০ হাজার টন গম আমদানির জন্য ইতিমধ্যেই টেন্ডার দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।

গত শীতে গমের যে ফলন হয়েছে তা এখন মৌসুম চলছে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহ করার। কৃষকরা যেন তাদের উত্পাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পায় সে জন্য সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান ও চালের মতো গমও কিনে থাকে। কিন্তু চলতি মৌসুমে স্থানীয় বাজার থেকে গম কেনা হচ্ছে না।

এর ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা গমের চেয়ে সরিষা, মুগ, মাষকলাইয়ের মতো অন্যান্য রবিশস্যকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাচ্ছি। আমাদের দেশ শীতপ্রধান নয়। তাই এখানে গমের মান খুব একটা ভালো হয় না। বছরখানেক আগে মেক্সিকোতে আন্তর্জাতিক গম গবেষকদের সম্মেলনে গরমসহিষ্ণু গম আবিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা খুব একটা সাড়া দেননি। কারণ গম উত্পাদন করে সব শীতপ্রধান দেশ। পৃথিবীবাসীর প্রয়োজনের চেয়েও অনেক সময় বেশি গম উত্পাদন হয়। কাজেই গরমসহিষ্ণু গম আবিষ্কার তাঁদের দরকার নেই। গরমসহিষ্ণু গম আবিষ্কার না হলে আমাদের গমের পরিবর্তে ভুট্টাসহ রবিশস্য চাষে মনোযোগ বাড়াতে হবে। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ গমের পরিবর্তে তারা যে রবিশস্য ফলাবে তার দাম গমের চেয়ে কোনোভাবেই কম নয়।’

একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের গমে ব্লাস্ট রোগ ধরা পড়েছে। এ রোগ নিরাময়ের জন্যও আপাতত গম চাষে বিরতি দেওয়া দরকার বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছে।

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গতকাল তাঁর দপ্তরে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিবছর দেশে যে গম উত্পাদন করা হয় চাহিদা তার চেয়ে অনেক বেশি। আমরা স্থানীয় বাজার থেকে যে গম সংগ্রহ করি তার পরিমাণ খুব বেশি নয়। এটা স্থানীয় গমের বাজারে কোনো প্রভাব ফেলে বলে মনে হয় না। তা ছাড়া দেশ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরের চেয়ে গম সংগ্রহ করা যাবে না। অথচ বিদেশ থেকে কেনা গমের দাম ২০ টাকার বেশি হবে না।’

খাদ্য অধিদপ্তর ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে গম সংগ্রহ করতে চায় না। স্থানীয় বাজার থেকে গম সংগ্রহ করলে যে তদবির শুরু হয় তা সামাল দেওয়া খাদ্য অধিদপ্তরের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে তারা বিদেশ থেকে গম আনতে চাচ্ছে। চলতি বছর খাদ্য অধিদপ্তরের এক লাখ টন গম সংগ্রহের বাজেট বরাদ্দ রয়েছে। তবে তা থেকে আপাতত ৫০ হাজার টন সংগ্রহ করা হবে। এ গম আগামী ৩০ জুনের আগেই দেশে এসে পৌঁছবে। অবশিষ্ট ৫০ হাজার টন গম আপাতত কেনা হবে না। কারণ ওই গম চলতি অর্থবছরের মধ্যে সংগ্রহ করা যাবে না। সংগ্রহ করা সম্ভব হলে ওই গমও কেনা হতো।

ধান, চাল ও গমের উত্পাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে সরকারের সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ করে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি (এফপিএমসি)। গত এপ্রিলে কমিটির সভায় দেশের বাজার থেকে কোনো গম সংগ্রহ না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম এফপিএমসি গমের সংগ্রহ দামও নির্ধারণ করে দেয়নি। অতীতে গম না কিনলেও কৃষক যেন ন্যায্য দাম পায় সে জন্য একটা দর নির্ধারণ করে দেওয়ার নজির রয়েছে। এবার সেটাও করা হয়নি।

খোলাবাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস), গ্রামীণ অবকাঠামো মেরামতসহ (টিআর) বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা এবং পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের রেশন দেওয়ার জন্য প্রতিবছর সরকার দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টন গম সংগ্রহ করে। এর মধ্যে দেশের ভেতর থেকে এক থেকে দেড় লাখ টন গম কেনা হয়। গত বছর দেশের ভেতর থেকে এক লাখ টন গম সংগ্রহ করা হয়েছে প্রতি কেজি ২৮ টাকা দরে। সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৮ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ও গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে বছরে গমের চাহিদা ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টন। আর উত্পাদন হয় প্রায় ১৪ লাখ টন। বাকিটা আমদানি করতে হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবজি, রবিশস্য ও বোরো ধান চাষের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না গমের আবাদ। নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন হলেও সে অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে না এমন অভিযোগও রয়েছে। ১৯৭৫ সালে ভাতের পরে বিকল্প খাদ্য হিসেবে ভারত থেকে আমদানি করা ‘সোনালিকা’ ও ‘কল্যাণ সোনা’ নামের দুটি গমের জাত চাষের মাধ্যমেই মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে গম চাষের সূচনা। এরপর চার দশকে গম চাষের আওতায় জমির পরিমাণ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এর উত্পাদন। সংশ্লিষ্টরা আরো বলছেন, গম চাষের বিস্তারের পাশাপাশি গমের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে মানুষের খাদ্য তালিকায়। গম স্বল্পকালীন ফসল, যা ১০০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যেই কাটা যায়। ধানের বেলায় ধান ও চালের অনুপাত ১০:৭, অথচ গমের সবটুকুই আটায় পরিণত করা যায়। এক একর জমির ধানের পানি দিয়ে তিন একর জমিতে গম চাষ করা যায়। সংশ্লিষ্টরা আরো বলছেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে উত্পাদিত গমের প্রায় চার গুণেরও বেশি আমদানি করতে হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে দেশের কষ্টার্জিত অর্থ। এটা প্রতিরোধ করা দরকার।

 

সুত্র -kalerkantho