English Version
আপডেট : ২৯ এপ্রিল, ২০১৮ ১১:১৬

শবে বরাত ও রোজাকে ঘিরে নিত্যপণ্যের বেচাকেনা বেড়েছে

অনলাইন ডেস্ক
শবে বরাত ও রোজাকে ঘিরে নিত্যপণ্যের বেচাকেনা বেড়েছে

সামনে রমজান মাস তাই বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। তার আগে আগামী ১ মে শবে বরাত। ফলে বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের বেচাকেনা। বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ প্রচুর। চাহিদার তুলনায় আমদানিও বেশি।

তারপরেও রোজা আর শবে বরাতকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। যদিও সরকারের বাজার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তৎপরতার কারণে অস্থির হয়ে ওঠেনি নিত্যপণ্যের বাজার।   জানা গেছে, বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি ব্যাপক। তাদের মধ্যে কেনাকাটার আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। তবে অন্যান্য বছরের মতো এবার নিত্যপণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়নি।

ইতোমধ্যে সরকারের বাণিজ্য সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রমজান উপলক্ষে আগামী ৬ মে থেকে সরাদেশে ছোলা, চিনি, ডাল, খেজুর ও ভোজ্যতেল বিক্রি শুরু করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

তবে আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে কী পরিমাণ পণ্য মজুদ করা হয়েছে কৌশলগত কারণেই তা আগেভাগে বলছে না টিসিবি। তাদের পণ্য মজুদের পরিমাণ আগে থেকে জানলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিজেদের পণ্য বাজারে না ছেড়ে মজুদ রাখে।

এতে একদিকে বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমে যায়। অন্যদিকে টিসিবির মজুদ খালি হয়ে গেলে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার অস্থির করে তুলতে পারে। রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এ সময়ে কিছু নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়।   রোজার সময় ব্যবসায়ীদের একটি শ্রেণির লুটেরা মনোভাবের কারণে যুক্তিগ্রাহ্য কারণ না থাকলেও বেড়ে যায় নিত্যপণ্যের দাম।

ছোলা, চিনি, তেল, খেজুর, ডালসহ রমজান মাসে প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানি করা হয়েছে। বাজারে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও মুনাফাখোরদের অপতৎপরতাই মূল্যবৃদ্ধির কারণ ঘটায়।

তবে চিনি, আদা, পেঁয়াজ, খেজুরসহ অত্যাবশ্যক নিত্যপণ্যের দাম এখনও স্থিতিশীল। ক্রেতাদের মন্তব্য, ‘রমজানকে কেন্দ্র করে এসব পণ্যের কৃত্রিম সংকট যেন দুর্বিষহ হয়ে না ওঠে সেজন্য এখনই সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এবার আগে থেকেই তৎপর রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি বাজার মনিটরং টিমের দায়িত্ব রয়েছেন ১৪ জন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। এই টিমে রয়েছেন ঢাকা জেলা প্রশাসন, ডিএমপি, র্যাবসহ বাজার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। এই টিমগুলো সারাবছর বাজার মনিটর করে।   তবে রমজান মাসে বিশেষভাবে বাজার মনিটরিংয়ের কাজের সঙ্গে যুক্ত থকে এই ১৪টি টিম। এছাড়া ভেক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর ও সিটি করপোরেশনও সারাবছর বাজার মনিটর করে। রমজান মাসেও বিশেষঅবে বাজার মনিটরিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে এই তিন সংস্থা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে— বাজারে পেঁয়াজ, ছোলা, ডাল, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনও পণ্যের মজুদ ও সরবরাহে ঘাটতি নেই। ক্রেতাদের আশঙ্কা, রমজান মাসকে কেন্দ্র করে এসবের দাম বেড়ে যেতে পারে।

মূল্যবৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে এক পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, বিভিন্নভাবে একটি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ হয়ে থাকে। যেসব কারণে মূল্য নির্ধারিত হয়, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম চাহিদা ও জোগানে সমতা।

সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, রমজানের আগমুহূর্তে টিসিবি তড়িঘড়ি বাজারে কিছু পণ্য নিয়ে আসে। কিন্তু তা মহাসাগরে এক ফোঁটা পানি দেওয়ার মতো মনে হয়। এর মাধ্যমে নিত্যপণ্যের বাজারে কোনও প্রভাব পড়ে না।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি বাজারের সামনে মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। জেলা শহরের বড় বাজারগুলোর সামনেও মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু সরেজমিন বিভিন্ন বাজার ঘুরে কোথাও মূল্য তালিকা দেখা যায়নি।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি খুচরা ৩৫ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকায়। দেশি রসুন খুচরা প্রতি কেজি ৯০ টাকা আর চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি। আদা পাইকারি প্রতি কেজি ৮০ টাকা কেজি আর খুচরা বাজারে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

প্রতি কেজি ছোলা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, অ্যাংকর প্রতি কেজি ৫০ টাকা, খেসারি প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, মাসকলাই প্রতি কেজিতে ১০-১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১২০ টাকা ও বেসন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।   বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, চাহিদার তুলনায় ডালের আমদানি ব্যাপক। কারণ সরবরাহ প্রচুর। কাজেই পণ্যের ঘাটতির প্রশ্নই ওঠে না। দামও বৃদ্ধির কোনও কারণ নেই।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি খোলা চিনি ৪২ টাকা, প্যাকেট চিনি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি কেজি খোলা আটা ৩২ টাকা, প্রতি ২ কেজি প্যাকেট আটা ৬৮ থেকে ৭০ টাকা, প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল ৯০ টাকা ও প্রতি পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৪৬৫ থেকে ৪৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কাওরান বাজারের আরেক ব্যাবসায়ী বলেন, বাজারে কোনও পণ্যেরই ঘাটতি নেই আর সরবরাহ প্রচুর। তার দাবি— নিত্যপণ্যের বাজারে পাইকারি পর্যায়ে কোনও ধরনের কারসাজি নেই।

এক্ষেত্রে কেজিতে ১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ দেড় টাকার বেশি মুনাফা করা সম্ভব নয়। তবে দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা দায়ী বলেন এই ব্যাবসায়ী।

জানা গেছে, শবে বরাত ও রমজান মাসকে সামনে রেখে মাংসের চাহিদা বেড়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, লেয়ার মুরগি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, গরুর মাংস ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা ও খাসির মাংস ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আসন্ন রোজায় যে কোনও মূল্যে বাজার নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ভোগ্যপণ্যের উৎপাদক ও বিপণনকারীরা তাকে আশ্বাস দিয়েছেন, রমজান মাসে কোনও পণ্যের দাম বাড়বে না।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, আদা, ডাল, ছোলা ও খেজুরের সরবরাহ আর মূল্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার ওপর জোর দেওয়া হয় এসব বৈঠকে।

বাণিজ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন, রোজার সময় বেশি চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। শবে বরাতের পর থেকেই কয়েক দফা বাজার তদারকি অভিযান চালানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রোজায়ও এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।   যে কোনও মূল্যে বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখা হবে। বর্তমানে দেশে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, ডাল, খেজুর, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের যথেষ্ট পরিমাণ মজুদ রয়েছে।

পাশাপাশি রমজানের দরকারি পণ্যগুলোর চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ, দামসহ সবকিছু স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রয়েছে। সব মিলিয়ে রোজায় ভোগ্যপণ্যের মূল্য যেন বৃদ্ধি না পায় সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার।