English Version
আপডেট : ২৯ মার্চ, ২০১৮ ১৪:৪৮

মূলধন সংকটে সরকারি বেসরকারি ৯ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
মূলধন সংকটে সরকারি বেসরকারি ৯ ব্যাংক

মূলধন সংকটে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি নয় ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তবে মূলধন ঘাটতি পূরণে খেলাপি ঋণ আদায়ে মনোযোগ দেওয়াসহ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আসছে অর্থনীতিবিদরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারি-বেসরকারি নয়টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। ওই ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। এগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছয়টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি প্রায় ১৭ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এই ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ প্রায় সাত হাজার ৭৭৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। মূলধন ঘাটতির দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। এই ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি প্রায় পাঁচ হাজার ৩৯৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

এছাড়া বেসিক ব্যাংক প্রায় দুই হাজার ৬৫৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) প্রায় ৮১৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংক প্রায় ৬৩৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং জনতা ব্যাংকের প্রায় ১৬১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। বেসরকারি খাতের তিনটি ব্যাংকের মোট মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই হাজার ২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি রয়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি প্রায় এক হাজার ৪৯৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ঘাটতিতে থাকা অন্য দুই ব্যাংক হলো বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক এবং নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংক। এর মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক প্রায় ২৮২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক প্রায় ২৪৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকগুলোকে ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের মধ্যে যা বেশি সেই পরিমাণ অর্থ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। এদিকে, ঝুঁকি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মানদন্ড ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে ১০ শতাংশ ন্যূনতম মূলধনের পাশাপাশি দশমিক ৬২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। গত ডিসেম্বর শেষে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে ওই নয়টি ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষণের আবশ্যিকতা ছিল ৯০ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করেছে ৯৪ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। অনেক ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মূলধন সংরক্ষণ করেছে। ফলে ৯টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে থাকলেও সামগ্রিকভাবে চার হাজার ৪০৬ কোটি টাকা মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে ব্যাংক খাতে।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ডি?সেম্বর শেষে ব্যাংকখাতে বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৯৮ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এর ম?ধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর’১৬ শেষে ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছ?রের ব্যবধা?নে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা।

জানা যায়, সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি হলে বাজেট থেকে তার জোগান দিতে হয়। ইতোমধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ছয়টি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে চলতি অর্থবছরে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার জন্য অর্থ বিভাগের কাছে অনুরোধ করেছে।

সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওই অনুরোধপত্রে বলা হয়েছে, অর্থ বিভাগের অধীনে ৩-০৯৩৪-০০০০-৭১১৩ নম্বর কোডের আওতায় ‘ব্যাংক মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ’ খাতে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকে চলতি অর্থবছরে যেন ছয়টি ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি পূরণে সহায়তা দেওয়া হয়।