English Version
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১২:১০

বাজারে আগুন!

অনলাইন ডেস্ক
বাজারে আগুন!

স্বস্তি ফিরছেই না নিত্যপণ্যের বাজারে। দিন দিন চাল, মাছ ও সব ধরনের সবজির দাম বেড়েই চলছে। কোরবানির ঈদের পর থেকে শুরু হয়ে গত এক মাসে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে টমেটো, কাঁচামরিচ ও বরবটির। আর চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৩ টাকা। বেড়েছে তেল ও আটার দামও। শিগগিরই এ দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে চট্টগ্রামেও দাম বেড়েছে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের। যশোরে বেশি দামে ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে শাকসবজির। বলা যায়, বাজারে লেগেছে আগুন; মাসের খরচ পুড়ে শেষ সপ্তাহেই।

দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্ষার কারণে বিভিন্ন ধরনের সবজির উৎপাদন কমে গেছে। আবার একই কারণে উৎপাদিত পণ্য পরিবহনেও ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে দাম বেড়ে যাচ্ছে। মহাখালী কাঁচাবাজারের ক্রেতা হারুনুর রশীদ বলেন, ঈদ চলে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা নিয়মিত শাকসবজির দাম বাড়িয়ে চলছেন। দাম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো মনিটরিং ব্যবস্থাও নেই। যদি মনিটরিং ব্যবস্থা থাকত তাহলে পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকত।

গতকাল মহাখালী কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, গত এক মাসের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ১৩ টাকা। ঈদের আগে প্রতিকেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছিল ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, যা গত এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ৫২-৫৪ টাকায়। তবে গত তিন-চার দিন থেকে চালের দাম কয়েক টাকা কমেছে, যা গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪৬-৪৭ টাকায়। এ ছাড়া মিনিকেট কেজিপ্রতি (ভালো মানের) ৬৪ টাকা, মিনিকেট (সাধারণ) ৫৬-৫৮ টাকা, বিআর২৮ ৫৬ টাকা, উন্নত মানের নাজিরশাইল ৬৮ টাকা, নাজিরশাইল (নরমাল) ৫৮, হাস্কি ৫৬, পাইজাম ৫৫ টাকা, বাসমতি ৬৮ টাকা, কাটারিভোগ ৭৫ টাকা এবং পোলাও চাল ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এসব চাল গত কয়েক দিন আগেও কেজিতে ৪-৬ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে। একই সঙ্গে কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়ে আটা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, যা গত মাসে বিক্রি হয়েছে ২৩-২৪ টাকায়। লিটারপ্রতি ২-৪ টাকা বেড়ে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১০৯ টাকায়। মাসের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিপ্রতি ৩-৪ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ২০-২২ টাকায়। এ ছাড়া টমেটো রাজধানীর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়, যা ঈদের আগে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া এক মাসের ব্যবধানে করলা ও ঢেঁড়স কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। ঈদের আগে কচুরলতি প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা, যা ১০ টাকা বেড়ে বাজারভেদে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। একই সঙ্গে কেজিপ্রতি ৫০ টাকার বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। কাঁকরোল প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ৫০ টাকায়।

এ ছাড়া কেজিপ্রতি ৮০ টাকার কাঁচামরিচ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে পটল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা ঈদের আগেও বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কেজি দরে।

তবে মুরগির দাম রয়েছে স্থিতিশীল। ব্রয়লার মুরগি গতকাল বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১৩০-১৩৫ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ১৩০ টাকা। লেয়ার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকা, দেশি মুরগি প্রতিপিস বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে। অন্যদিকে গত এক মাসে হালিপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ২-৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগির ডিম হালিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকায়। হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতিহালি ৪৫ টাকা দরে।

মাছের বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দাম ছিল চড়া। গত এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। তবে ইলিশের দাম কমেছে। ৭০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশ ৬০০ এবং প্রতিকেজি ইলিশের দাম রাখা হয়েছে ১০০০ টাকা। একই সঙ্গে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে রুই (বড়) দেশি ৩৫০ থেকে ৪০০, নলা ১৮০ থেকে ২০০, শিং ৫০০ থেকে ৮০০, চাষের কই এক কুড়ি ২০০ থেকে ২৫০ এবং মানভেদে গুঁড়া মাছ ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এদিকে চট্টগ্রামে বেড়ে যাওয়া ভোগ্যপণ্যের তালিকায় এবার উঠে এসেছে ভোজ্যতেল। গত কয়েক মাস ধরেই অস্থির চাল, পেঁয়াজ ও সবজির দাম। প্রশাসনের অভিযানে যদিও চালের দাম কিছুটা কমেছে। তবে অস্থিরতা রয়েই গেছে পাইকারি চালের আড়ত চাক্তাইয়ে। এদিকে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে মনে করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দাম আরো বাড়ার শঙ্কা তাদের। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ তথ্য মিলেছে।

দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে ভোজ্যতেল সয়াবিনের দাম বেড়েছে লিটারপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা। বোতলজাত প্রতিলিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১০৮ টাকায়। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১০৪ থেকে ১০৬ টাকায়। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়, যা আগে ছিল ৮৮ থেকে ৯০ টাকা।

চকবাজার আল আমিন ট্রেডার্সের মালিক ইসলাম মিয়া বলেন, বড় ব্যবসায়ীরা তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। ফলে পাইকারি বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। তবে চাল, চিনি ও ডালের দাম কিছুটা কমেছে। এদিকে খুচরা বাজারে বেড়েছে আটার দাম। প্রতিকেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকায়। আগে ছিল ৩২ টাকা। ওঠানামা করছে পেঁয়াজের দর। প্রতিকেজি আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকায়। গত সপ্তাহে আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকায়।

বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতা ইয়াকুব আলী বলেন, পূজার কারণে ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধের অজুহাতে বেড়েছে পণ্যটির দাম।

তবে ঈদের পর থেকে বেশি দামেই স্থির রয়েছে সবজির বাজার। বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে অধিকাংশ সবজি। গাঁজর ও টমেটো ৮০, বাঁধাকপি ৬০, বরবটি ৫০, করলা ৬০, ঝিঙ্গা ও চিচিঙ্গা ৪০, মিষ্টিকুমড়া ৩৫, পটল ৪০, কচুমুখী (ছড়া) ৩০, টমেটো ৮০ ও কাঁকরোল ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, গত সপ্তাহে যা ছিল ১২০ টাকা। প্রতিকেজি ছোট আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত দামে। চিংড়ি আকারভেদে ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা ও লইট্যা ১১০ থেকে ১২০ টাকায় কেজি। দেশি মুরগি ৩৫০, ব্রয়লার মুরগি ১১৫-১২০, পাকিস্তানি মুরগি ২৪০-২৫০, গরুর মাংস হাড়সহ ৪৮০ থেকে ৫০০, হাড় ছাড়া ৬০০ টাকায়। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়।

খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মধ্যম মানের চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। সে হিসেবে কমেছে কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা। অথচ পাইকারি বাজারে চালের প্রকারভেদে বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, বেশি দামে পণ্য বিক্রি এবং চাল মজুদদারির বিরুদ্ধে আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েছি। জরিমানা থেকে শুরু করে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে দায়ীদের। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে যশোরে সব ধরনের শাকসবজি এবং মাছ বেশি দামে স্থিতিশীল রয়েছে। তবে বেড়ে যাওয়া চালের দাম কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা কমেছে। বাজারে শাকসবজির সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০, পেঁপে ২৫, টমেটো ৬০, পটল ৩০, ঝিঙ্গা ৪০, ঢেঁড়স ৪০, শিম ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিকেজি হিরা চাল বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। আমদানিকৃত স্বর্ণা চাল বিক্রি হয় ৪৩ থেকে ৪৪ টাকায়। প্রতিকেজি বিআর২৮ ও কাজললতা চাল বিক্রি হয় ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি বিক্রি হয় মিনিকেট চাল। ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা কেজি বিক্রি হয় আমদানি করা মিনিকেট চাল।