English Version
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৫:১০

খেলাপির খাতায় নেই সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা

অনলাইন ডেস্ক
খেলাপির খাতায় নেই সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা

চলতি বছর জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেখিয়েছে ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। এর বাইরেও রয়েছে খেলাপি ঋণ। আদায়ে ব্যর্থ হয়ে খেলাপির তালিকার প্রায় সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংকগুলো। প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণ কম দেখাতে অবলোপনের মাধ্যমে এ ঋণগুলো হিসাবের বাইরে রাখা হয়েছে। হিসাবের বাইরে থাকা ঋণগুলো থেকে আদায়ও যৎসামান্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। বছরের পর বছর ধরে ব্যাংক ব্যবস্থায় থাকা মন্দ মানে শ্রেণিকৃত খেলাপি ঋণ আর্থিক বিবরণী (ব্যালান্সশিট) থেকে বাদ দেওয়াকে ঋণ অবলোপন বলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করে আসছে। নীতিমালার আওতায় ৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে থাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখে এবং মামলা করে তা অবলোপন করতে হয়। একটি সময় মামলা দায়ের না করে কোনো ঋণ অবলোপন করা যেত না। তবে মামলার খরচের চেয়ে অনেকাংশে বকেয়া ঋণের পরিমাণ কম হওয়ায় ২০১৩ সালের শেষভাগ থেকে মামলা না করেই ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৩ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলো সর্বমোট ৪৪ হাজার ৪১২ কোটি টাকা অবলোপন করেছে। ওই ১৪ বছরে অবলোপন করা ঋণ থেকে আদায় হয়েছে মাত্র ৯ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। অনাদায়ী রয়ে গেছে ৩৪ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। এটিসহ হিসাব করলে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৯ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে অবলোপন চলছে পুরো অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। অবলোপন করা ঋণ অবশ্যই খেলাপি ঋণ। তবে খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে অবলোপন করা ঋণ বাদ দিয়ে হিসাব করে সাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। খেলাপি অবলোপনকৃত ঋণের বাইরেও প্রায় আরও ৫০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিল করে নিয়মিত করেছে ব্যাংকগুলো। গত মার্চ শেষে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এই ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকে অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ২১৮ কোটি টাকা; যা মোট অবলোপন করা ঋণের অর্ধেক। এককভাবে সবচেয়ে বেশি অবলোপন করেছে সোনালী ব্যাংক ৮ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া অগ্রণী ৫ হাজার ৩৮৯ কোটি, জনতা ৪ হাজার ৪৯৭ কোটি, বিডিবিএল ২ হাজার ৮১৫ কোটি, রূপালী ১৯ কোটি ও বেসিক ৬৯ কোটি টাকা অবলোপন করেছে। গত ১৪ বছরে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে এই খাতের ব্যাংকগুলো আদায় করেছে ৪ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। পুঞ্জীভূত ১৭ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ এখনো হিসাবের বাইরে রয়েছে এ খাতের ব্যাংকগুলোর। এ ছাড়া সরকারি বিশেষায়িত ২ ব্যাংক অবলোপন করেছে ৫৫৫ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ২০৬ কোটি টাকা আদায় করতে পারায় পুঞ্জীভূত অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ রয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। হিসাবের বাইরে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ রয়েছে ২০ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। আলোচ্য ১৪ বছরে আদায় করেছে মাত্র ৪ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। মার্চ পর্যন্ত অনাদায়ী অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ রয়েছে ১৬ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকগুলো অবলোপন করেছে ৮৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮৫ কোটি টাকা আদায় করায় মোট অবলোপনকৃত ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭৬০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এ বিষয়ে বলেন, বিপুল পরিমাণ এ খেলাপি ঋণ দেশের জন্য অশনিসংকেত। খেলাপি ঋণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কারণ গত কয়েক বছরে যে ঋণ দেওয়া হয়েছে তা কখনই আদায় হবে না। সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান-এমডিরা মিলে দুর্নীতি করেছেন। বেসরকারি ব্যাংক আগ্রাসী ব্যাংকিং করেছে। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একাধিক ব্যাংকারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃত্রিমভাবে আর্থিক বিবরণী প্রণয়ন রোধ করতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ঋণ অবলোপনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। যদিও অবলোপন প্রক্রিয়ার ফলে অনেক সময় ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক পরিস্থিতি প্রতিফলিত হয় না। তবে ব্যাংকগুলো অবলোপন করা ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ এবং আলাদাভাবে অবলোপনের হিসাব সংরক্ষণ করে তা আদায়ে তৎপরতা চালায়। ফলে আমানতকারীর স্বার্থহানির কোনো সুযোগ নেই।