চালের বাজার লাগাম ছাড়া

বাজারে চালের দাম আরো বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই দাম বৃদ্ধি কেজিপ্রতি ৮-১০ টাকা ছাড়িয়েছে। চালের বাজার এখন যেন লাগাম ছাড়া ঘোড়া। এদিকে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি। উল্টো কিছু কিছু সবজির দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহের ন্যায় বাজারে আজও ৪০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। পটোল, করলা, ধুন্দল, ঢেঁড়স ও বেগুনসহ সব সবজিই বিক্রি হয়েছে চড়া দামে। হাওরে আগাম বন্যায় ফসলহানির পর দুই দফা বন্যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফসল নষ্ট হয়েছে। এজন্যই চালের বাজারে এ আগুন লেগেছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালীসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বাজারে সবজি, মাছ ও মুরগির দাম আগের বাড়তি দামেই স্থিতিশীল থাকলেও নতুন করে আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে চালের দাম।খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাড়তি দামে কিনে বাড়তি দামে বিক্রি করব-এটাই স্বাভাবিক। দাম বাড়ার জন্য বরাবরই মিল মালিক ও আড়তদারদের দায়ী করছেন তারা। তবে বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা স্বর্ণা ও পারিজা চাল প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকায়। এ ছাড়া মিনিকেট কেজিপ্রতি ৯ টাকা বেড়ে (ভালো মানের) ৬৪ টাকা, মিনিকেট (সাধারণ) ৬০, বিআর-২৮ ৫৮, উন্নত মানের নাজিরশাইল ৭০, পাইজাম চাল ৫৫, বাসমতী ৭২, কাটারিভোগ ৭৬ এবং পোলাও চাল ৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
চালের দাম নিয়ে মহাখালী কাঁচাবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান বলেন, বাড়তি দামে কিনছি; সে অনুযায়ীই বিক্রি করছি। আড়তদাররাই বাড়িয়ে দিচ্ছেন, আমাদের কিছুই করার নেই। কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান বলেন, চালের দাম বাড়ছে; আরো বাড়বে। বন্যার সমস্যা এখনো কাটিয়ে উঠেতে পারেননি মিল মালিকরা। ফলে দাম বাড়ছে।
ব্যবসায়ীদের সাবধান করে মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, মন্ত্রী তো মন্ত্রীর জায়গায় থেকে এসব কথা বলেছেন; তিনি তো আর মাঠে গিয়ে দেখেন না। শুধু মুখে বললেই হবে না; এ ক্ষেত্রে মন্ত্রীরও অনেক দায়িত্ব আছে বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী। আর ক্রেতারা মনিটরিং এবং সঠিক তত্ত্বাবধায়নের অভাবকে দায়ী করছেন। ক্রেতা ফাহমিদা হোসেন বলেন, চালের দাম যেভাবে বাড়ছে; তাতে করে আগামী কয়েক দিনে ৮০-৯০ টাকা হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।
এদিকে সবজির বাজার আগের বাড়তি দামেই স্থিতিশীল রয়েছে। গতকালের বাজারে বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা দরে। এ ছাড়া শিম ১০০, হাইব্রিড টমেটো ১২০, দেশি টমেটো ৯০, শসা ৬০, চাল কুমড়া ৫০-৫৫, কচুরলতি ৬০-৬৫ টাকা; পটোল, ঢেঁড়স, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, করলা, কাকরোল ও কচুরমুখি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি ফুলকপি ৩৫ টাকা; বাঁধাকপি ৩০ টাকা এবং লেবু হালিপ্রতি ২০ থেকে ৪০ টাকা; পালংশাক আঁটি প্রতি ২০; লালশাক ২০; পুঁইশাক ৩০ এবং লাউশাক ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মুদিপণ্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি মুগডাল ১৩০ টাকা; ভারতীয় মুগডাল ১২০, মাসকলাই ১৩৫, দেশি মসুর ডাল ১২৫, ভারতীয় মসুর ডাল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর বাজারে ব্র্যান্ডভেদে ৫ লিটারের বোতল ৫৩০-৫৪০ টাকা; প্রতি লিটার ১০৭ থেকে ১০৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি রুই মাছ ২৮০-৪০০ টাকা, সরপুঁটি ৩৮০-৪৫০, কাতলা ৩৫০-৪০০, তেলাপিয়া ১৪০-১৮০, সিলভার কার্প ২৫০-৩০০, চাষের কৈ ৩০০-৩৫০, টেংরা ৬০০, মাগুর ৬০০-৮০০, প্রকারভেদে চিংড়ি ৪০০-৮০০, ৭০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশ ৬০০ এবং প্রতি কেজি ইলিশের দাম রাখা হয়েছে ১০০০ টাকা।
ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা দরে। লেয়ার মুরগি ২০০ টাকা; দেশি মুরগি প্রতি পিস ৪৫০, পাকিস্তানি লাল মুরগি ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।