ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন রোববার

আগামী রোববার ১ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে ২২ তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। মেলায় লাখ লাখ মানুষের আগমণে পণ্য ব্রন্ডিয়ের সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তাই ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে দৃষ্টি নন্দন স্টল আর প্যাভিলিয়ন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরে বাংলানগরের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে। সেখানে চলছে শেষ মুহূর্তের কর্মযোগ্য। উদ্বোধনের আগে সাজসজ্জার কোনো কমতি রাখছেন না আয়োজকরা। নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ করতে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা জানান, এবারই প্রথমবারে মতো অনলাইনে মেলার টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়া অন্যান্য বারের চাইতে এবার মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। মেলায় থাকবে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়াও থাকবে সার্বক্ষণিক সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ। এবারের মেলায় মেগা ও মিনি প্যাভিলিয়ন সহ মোট ৫৬০টি স্টল থাকবে। অনলাইনের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা মেলার কোথায় কি আছে সমস্ত কিছু দেখতে পাবেন।এবছর মেলায় প্রবেশ মূল্য ঠিক করা হয়েছে শিশুদের জন্য ২০ টাকা ও প্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য ৩০ টাকা।
শ্রমিকদের বিরামহীন কাজ আর হাঁকডাকে পুরো এলাকাই মুখরিত। দুই দিন পর রোববার বিকেলে সেখানে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে মেলার পাশের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে মেলাটির আয়োজন করছে।
ইপিবির কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের চেয়ে এবার বাণিজ্য মেলার পরিসর বাড়ছে। অব্যবহৃত জায়গায় স্টল বসছে। আগের চেয়ে সড়ক চওড়া করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের প্যাভিলিয়ন, সাধারণ স্টল, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে ৫৬০-এ উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি প্রিমিয়ার, নয়টি জেনারেল বা সাধারণ, তিনটি রিজার্ভ ও ৩৮টি বিদেশি প্যাভিলিয়ন এবং ৫৫টি মিনি-প্যাভিলিয়ন, ৩৪১টি স্টল ও ৩০টি রেস্তোরাঁ রয়েছে।
এবারের ডিআইটিএফে স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়াসহ ২১ দেশ অংশ নিচ্ছে।
এবারে নারী উদ্যোক্তাদের স্টল ২৯ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৮টি। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নামে একটি বিশেষ প্যাভিলিয়নের পাশাপাশি সুন্দরবন ইকো পার্কসহ সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেরও স্টল থাকবে। মা ও শিশুকেন্দ্র থাকছে দুটি। মেলার মূল ফটকের পাশে পার্কিংয়ের জায়গা বাড়ানো হয়েছে।ফলে গাড়ি রাখা যাবে ৭০০টি।
নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের পাশাপাশি এলিট ফোর্স র্যা ব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা থাকবেন। মেলার ভিআইপি ফটক দিয়ে ভেতরে যেতেই দেখা গেল, সারি সারি সাধারণ স্টলের কাজ চলছে। কিছু স্টলের কাজ কেবল শুরু হয়েছে। আবার কিছু স্টলের রঙের কাজ শেষ, পণ্য তোলা বাকি। বেস্টবাই, স্বপ্ন, ওয়ালটন, যমুনা ইলেক্টনিক্স, আক্তার ফার্নিচার, হাতিল ফার্নিচারের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়নের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। মেলায় বেশ কয়েকটি দৃষ্টি নন্দন স্টল দেখা গেছে। তবে মাঝেমধ্যে কয়েকটি স্টলের জায়গায় কোনো কাজের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেল না। এ ছাড়া মেলার সৌন্দর্যবর্ধনে বাগানের কাজে হাত দেওয়া হয়নি এখনো। মেলার ভেতরের সড়কে ইট বিছানো হচ্ছে, তবে অধিকাংশ কাজই বাকি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মেলার জ্যেষ্ঠ বাণিজ্য সচিব হেদায়েত উল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সড়কের কাজ সব সময়ই ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়। কারণ, প্যাভিলিয়ন তৈরির জন্য বড় বড় ট্রাক পণ্য নিয়ে মেলার ভেতরে আসে। এ সময় ইটের সড়ক করা হলে ভেঙে যায়। তাই পরে করা হয়।’
তিনি আরো জানান, রপ্তানি কারকদের উৎসাহিত করতে এবছর ৪৮টি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে রপ্তানি ট্রপি। যাতে করে তারা রপ্তানিতে আরো উৎসাহ পায়। এবছর আরো মেলা আরো ক্লালারফুল হবে।
প্রতিটি বাণিজ্য মেলাতেই ক্রেতারা অভিযোগ করেন, রেস্তোরাঁগুলো খাবারের অস্বাভাবিক দামের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের হয়রানি করে থাকে। এ বিষয়ে তদারক করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ইপিবি, এফবিসিসিআই, খাবারের দোকানের দুজন প্রতিনিধিসহ নয় সদস্যের একটি কমিটি কাজ করবে। কমিটি রেস্তোরাঁর মূল্যতালিকা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ও তদারক করবে বলে জানালেন বাণিজ্য সচিব।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার পরই মেলাপ্রাঙ্গণ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। মেলায় একবার প্রবেশে টিকিটের মূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৩০ টাকা ও শিশুদের জন্য ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মেলার আয়োজক সূত্র জানায়, মেলায় এবারো মা ও শিশু কেন্দ্র, শিশুপার্ক, ই-পার্ক, এটিএম বুথ, রেডিমেড গার্মেন্টস, হোমটেক্স, ফেব্রিক্স পণ্য, হস্তশিল্পজাত, পাট ও পাটজাত, গৃহস্থালি ও উপহার সামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ক্রোকারেজ, তৈজসপত্র, সিরামিক, প্লাস্টিক, পলিমার পণ্য, কসমেটিকস হারবাল ও প্রসাধনী সামগ্রী, খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ইমিটেশন ও জুয়েলারি, নির্মাণ সামগ্রী ও ফার্নিচার স্টল থাকছে।