English Version
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১০:৪৭

ইসলামী ব্যাংক জিতলো ‘ব্যাংক অব দ্য ইয়ার’ অ্যাওয়ার্ড

অনলাইন ডেস্ক
ইসলামী ব্যাংক জিতলো ‘ব্যাংক অব দ্য ইয়ার’ অ্যাওয়ার্ড

যুক্তরাজ্য: ব্যাংকিং সেবায় অসাধারণ অবদান ও বিগত বছরের সর্বোচ্চ পারফরমেন্স মূল্যায়নের ভিত্তিতে ‘ব্যাংক অব দ্য ইয়ার-২০১৬’ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। অর্থনীতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য ব্যাংকার ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমস গ্রুপ যৌথভাবে এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে। 

গত বুধবার (৭ ডিসেম্বর) লন্ডনের হিল্টন হোটেলের ব্যাংকসাইডে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান এর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন দ্য ব্যাংকার এর সম্পাদক ব্রায়ান ক্যাপলিন|

আড়ম্বরপূর্ণ এই আয়োজনে বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় ১২০টি ব্যাংকের ৪শ’ জন ঊর্ধ্বতন নির্বাহী ও কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

লন্ডনে অবস্থান করা ইসলামী ব্যাংকের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কামাল উদ্দিন জসিম বলেন, কেবল বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাংক হিসেবেই নয়, বিশ্বে প্রথম কোনো ইসলামী ব্যাংক হিসেবে আমরা এ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি।

তিনি জানান, ২০১২ সাল থেকে এ ব্যাংক বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে দ্য ব্যাংকার কর্তৃক তালিকাভুক্ত বিশ্বের এক হাজার শ্রেষ্ঠ ব্যাংকের তালিকায়ও অবস্থান ধরে রেখেছে। ইসলামী ব্যাংকের বিগত বছরের সর্বোচ্চ পারফরমেন্স মূল্যায়নের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিষয়ক ম্যাগাজিন দ্য ব্যাংকার এ স্বীকৃতি প্রদান করে।

১৯২৬ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের অর্থনৈতিক ইন্টেলিজেন্স ও ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নের উইনডো হিসেবে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স কমিউনিটির তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে গত ৯০ বছর ধরে কাজ করছে দ্য ব্যাংকার ।

বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় এই ব্যাংকটি এর আগেও সম্মানজনক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে। ২০১৬ সালে ইসলামী ব্যাংক ‘দ্য বেস্ট ম্যানেজড ব্যাংক ইন বাংলাদেশ’ মর্যাদা লাভ করেছে। এ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান ‘দ্য এশিয়ান ব্যাংকার সিইও লিডারশিপ এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছেন।

বিশ্বখ্যাত বাণিজ্য বিষয়ক ফোর্বস ম্যাগাজিনের মতে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে লাভজনক ব্যাংক। সার্বিক বিবেচনায় এ ব্যাংক দেশের অন্যতম ‘বেস্ট পারফর্মিং কোম্পানি’।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক শতাব্দী প্রাচীন ফোর্বস ম্যাগাজিন জুলাই ২০১৬ সংখ্যায় ইসলামী ব্যাংকের উপর এক নিবন্ধে আরো প্রকাশ করে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রধানতঃ দু’টি ভিত্তি - তৈরি পোশাক শিল্প এবং বৈদেশিক রেমিট্যান্স- এর উপর নির্ভরশীল। উভয় খাতে ইসলামী ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।

ম্যাগাজিনটির মতে, ইসলামী ব্যাংক উৎপাদনমূখী ও শ্রমঘন শিল্প খাতে অর্থায়নের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং লাখ লাখ অভিবাসীর কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে প্রেরণের নিরাপদ ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে।

ইস্পাত ও বিদ্যুৎ খাতের মত বৃহৎ ও ভারী শিল্পে অর্থায়নের পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংক দেশের সুষম উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে প্রতিনিধিত্বকারী অবদান রাখছে। নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নেও ব্যাংকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে ফোর্বস তার নিবন্ধে উল্লেখ করে।

১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি পাঁচ বছরে ইসলামী ব্যাংকের আমানত তিনগুণ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংকটির গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ৭ লাখের অধিক। বৈদেশিক রেমিটেন্সের ২৭ শতাংশ এবং দেশের এসএমই খাতের ২৩ শতাংশ এককভাবে পরিচালনা করে এ ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান সম্পদের পরিমান ৯.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা এলিডব্যাংক ইন পাকিস্তান বা এশিয়া কমার্শিয়াল ব্যাংক ইন ভিয়েতনাম-এর সম্পদের কাছাকাছি।

গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল্যায়নে ইসলামী ব্যাংক দেশের সবচেয়ে পরিপালনকারী ব্যাংক।

তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের পরিধি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তা সত্ত্বেও এ ব্যাংক তামাকের মত ক্ষতিকর এবং হারাম কোনো খাতে অর্থায়ন করে না। সার আমদানিতে এ ব্যাংক অর্থায়ন করে কিন্তু তামাক চাষের জন্য যে সার আমদানী হয় তাতে বিনিয়োগ করে না এ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, সাত বছর দায়িত্ব পালনকালে তিনি ইসলামী ব্যাংকের সাথে কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমের যোগসূত্র পাননি।

উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের বেশিরভাগ ব্যাংকগুলো যখন নন-পারফর্মিং ঋণ, দুর্বল ব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও কার্যগত অদক্ষতার সমস্যায় আক্রান্ত- ইসলামী ব্যাংক এগুলো থেকে মুক্ত।

এদিকে, বাংলাদেশে অর্থনীতির ৩২ শতাংশই ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল।

অর্থনীতিতে ইসলামী ব্যাংকগুলোর অবদান উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ইসলামী ব্যাংকের কাজ কর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক সমাজে মত প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। সেই জন্য শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্বে ইসলামী ব্যাংকিং জনপ্রিয়তা বাড়ছে। নেদারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গের মতো দেশেও জনপ্রিয় হচ্ছে ইসলামি ব্যাংকিং সেবা।