English Version
আপডেট : ৫ জুন, ২০১৬ ১৪:৩৫

অর্থ ছাড়ের অনুমতি দেয় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
অর্থ ছাড়ের অনুমতি দেয় ফেডারেল রিজার্ভ  ব্যাংক

সন্দেহজনক বিবেচনায় আটকে দেয়ার এক ঘণ্টার ব্যবধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পাঠানোর অনুমতি দেয় যুক্তরাষ্ট্রের দি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার (৩ জুন) ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

তাদের মতে, রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হস্তান্তরে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় পাঠানো সব অনুরোধপত্র আটকে দেয়া উচিত ছিল ফেডারেল ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। 

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গোপন সুইফট ম্যাসজিং সিস্টেম ব্যবহার করে দুর্বৃত্তরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল অংকের টাকা পাঠাতে ৩৫টি অনুরোধপত্র পাঠায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যাংকটিকে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি এসব অনুরোধপত্র পাঠানো হয়। অনুরোধপত্রের স্বপক্ষে নির্ভুল তথ্য-প্রমাণ না থাকায় প্রথমে পেমেন্ট আটকে দেয় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক।

প্রথমে প্রত্যাখ্যান করলেও এক ঘণ্টার ব্যবধানে ৫ অনুরোধপত্রের বিপরীতে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফিলিপাইন ও শ্রীলংকায় পাঠানোর অনুমতি দেয়। এ টাকার ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠানো হয় ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের মাকাতি সিটির জুপিটার শাখায় ব্যবসায়ী কিং অংয়ের অ্যাকাউন্টে। বাকী ২০ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয় শ্রীলংকাভিত্তিক বেসরকারি সাহায্য সংস্থা শালিকা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, কয়েকটি অনুরোধে সাড়া দিয়ে টাকা পাঠানোয় ছাড়পত্র দেয়ায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওই কর্মকর্তা, যিনি রিজার্ভ চুরির এ ঘটনা নিয়ে কাজ করছেন, টাকা ছাড়ের সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে ওই ৫ অনুরোধপত্রের অসঙ্গতি বুঝতে না পারার দায় ফেডারেল ব্যাংকের উপর বর্তায়। সব টাকা পাঠানো হয়েছে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে, যা বাংলাদেশ ব্যাংক অতীতে কখনও করেনি।

প্রথম দফায় পাঠানো সব অনুরোধপত্রে প্রাপক ব্যাংকের নাম উল্লেখ না থাকায় ফেড কর্তৃপক্ষ বুঝে নিয়েছে এগুলো গোলমেলে। এতে সাড়া দেয়নি ফেডারেল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্কে ঢুকে সুইফট ম্যাজেসিং সিস্টেম ব্যবহার করে এসব অনুরোধপত্র পাঠায় দুর্বৃত্তচক্র।

দিনশেষে দুর্বৃত্তরা ফের ৩৫টি বার্তা পাঠায় দুর্বৃত্তরা। দ্বিতীয় দফায় অনুরোধপত্র ঠিকভাবে আসে ফেডারেল ব্যাংক কর্তৃপক্ষের হাতে। সেগুলো সুইফট ম্যাসেজিং অনুমোদনও  করে। জানান এক ফেডারেল ব্যাংক কর্মকর্তা। সুইফট ম্যাজেজিং সিস্টেমে সঠিক দেখালেও সন্দেহজনক মনে হওয়ায় টাকা হস্তান্তরে ৩০টি ছাড়ে অনুমতি দেয়নি ফেডারেল ব্যাংক। তবে প্রথম ৫টিতে উল্লেখিত টাকা ছাড়ে অনুমতি দেয় ব্যাংকটি। 

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, টাকা হস্তান্তরে পাঠানো অনুরোধপত্রে নাম সংযোজন ফেডারেল কর্মকর্তাদের মধ্যে সন্দেহের উদ্রেগ কেন হয়নি তা জানতে চাওয়া হয়েছে। 

উত্তরে ফেডারেল ব্যাংক বলছে, পরবর্তীতে পাঠানো ৩০টি অনুরোধপত্র আটকে দেয়া হয়েছে।প্রাপক ব্যাংকের নাম সংযোজন করে পাঠানোর পর কেন ৫টি অনুরোধপত্র বিবেচনায় নিয়ে টাকা হস্তান্তর করা হলো, এ বিষয়ে কোন উত্তর দেয়নি ফেডারেল ব্যাংক।

বিশ্বজুড়ে আলোড়িত এ রিজার্ব চুরির ঘটনা জানাজানির পর ফেডারেল ব্যাংক বলেছিল, অবৈধ লেনদেন ঠেকানোর প্রাথমিক দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও সুইফট কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিয়ে প্রথমে ফিলিপাইন সিনেটের ব্লু রিবন কমিটি তদন্ত করে। ওই কমিটির তদন্তে ফিলিপাইনে টাকা পাছানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সনাক্ত করা হয়।এ নিয়ে দেশটির আদালতে মামলা চলছে। একই ঘটনায় এবার তদন্ত শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস কমিটি।

এর আগে সাইবার এ চুরি নিয়ে তদন্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কমিটি। ডেমোক্র্যাট দলের দুই সিনেটর ম্যালনি এবং টম কারপার এ কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেন।