স্প্রীড বোতল নকল করে বিক্রি স্ট্রোং

নড়াইল বাজারগুলোতে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে বোতলজাত নকল কোমল পানীয়। নকল পানীয় স্বাস্থের জন্য মারাত্বক ঝুঁকি হলেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নামকাওয়াস্তে কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে আসছে।
জানা গেছে, দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠি আকিজ গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজ লিঃ এর উৎপাদিত জনপ্রিয় পানীয় বাংলাদেশ বিএসটিআই অনুমোদিত স্প্রীড দেশের বাজারের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের বাজারে রপ্তানি হচ্ছে। অথচ স্প্রীড (Speed) বোতলের ডিজাইন, লেগো,কালার নকল করে স্ট্রোং (Strong) নামে নকল কোমল পানীয় উৎপাদন করে অসাধু নামকাওয়াস্তের কোম্পানি অবৈধভাবে বাজারজাত করছে। এবং ব্যবসায়ীদের আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজ লিঃ এর পণ্য হিসাবে বিক্রি করার প্রচারণা চালাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন নামে নকল কোমল পানীয় বাজারজাত করছে বেনামী কোম্পানিগুলো।
অভিযোগ রয়েছে রংপুর জেলার সদর থানার উত্তর মনিপুর এর প্রাইম পুষ্টি লিঃ নামক একটি কোম্পান্নি স্প্রীড এর বোতলের ডিজাইন, লেগো, কালার নকল করে স্ট্রোং নামে নকল কোমল পানীয় উৎপাদন করছে বলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি খুলনা জেলায় প্রাইম পুষ্টি লিঃ নামক একটি কোম্পানির স্ট্রোং অবৈধভাবে বিক্রয় ও প্রচারণা চালানোর বিষয়টি আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজ লিঃ কর্তৃপক্ষ খুলনা জেলার বিএসটিআই অফিসে অভিযোগ করলে গত ৩০ মার্চ ফুলতলা থানার ফুলতলা বাজারে একতা ষ্টোরে বিএসটিআই প্রতিনিধিদলসহ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট পুলিশ নিয়ে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল পানীয় স্প্রীড জব্দ করে এবং আর্থিক জরিমানা আদায় করে।
স্ট্রোং বিক্রির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৪ মে যশোর সদর থানার পালবাড়ী তেতুলতলা ও পিটিআই স্কুলের মাহি ট্রেডার্স এ অভিযান চালিয়ে যশোর কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ মাহি ট্রেডার্স এর মালিক মোঃ আনোয়ারকে গ্রেফতার করে । গত ১০ মে রংপুর সদর থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে শহরের বিভিন্ন বাজারে।
সূত্র জানায়, প্রাইম পুষ্টি লিঃ এর মালিক রংপুরের ডাঃ মোঃ আক্কাস আলী সরকার। আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজ লিঃ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে অভিযোগ করলে ঢাকা জজ কোর্ট থেকে গত ২৮ এপ্রিল প্রাইম পুষ্টি লিঃ কে স্ট্রোং উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, বিক্রয় এবং প্রদর্শনীর উপরে অস্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। অথচ অসাধু ব্যবসায়িরা আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে এ অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছে।
আকিজ গ্রুপের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা নাম নাপ্রকাশ করার শর্তে জানান, পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অনেক আগেই বিষয়টি জানিয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে প্রাইম পুষ্টি লিঃ এর মালিক এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
নকল পানীয়র ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাল ফয়েজ আলম বলেন, কোমল পানীয় এমনিতেই শিশুদের জন্য ক্ষতিকর । তারপরে যদি আবার নকল পানীয় হয় তাহলে শিশুর মৃত্যও ঘটতে পারে। নকল কোমল পানীয় বন্ধে প্রশাসনের দেশব্যাপি অভিযান পরিচালনা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ক্রেতা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন মোঃ নূর ইসলাম।
বিভিন্ন নামে সারাদেশে নকল পানীয় বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, বাজারের কোথাও নকল কোমল পানীয় বাজারজাতের খবর পেলে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
উল্লেখ্য, প্রায় ৩ বছর আগে নড়াইলের লোহাগড়া থানার গোপিনাথপুর গ্রাম থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল কোমল পানীয় জব্দ করে। এবং ভূয়া কোম্পান্নির মালিককে গ্রেফতার করে। ওই ঘটনায় লোহাগড়া থানায় মামলাও দায়ের করা হয়। যা আদালতে বিচারাধীন।