English Version
আপডেট : ১৪ এপ্রিল, ২০১৬ ১৬:৩৬

অর্থ সংকটে স্থবির ৬৩ প্রকল্প

অনলাইন ডেস্ক
অর্থ সংকটে স্থবির ৬৩ প্রকল্প

২০০৬ সালের জুলাই মাসে পশুর চ্যানেলের বহির্নোঙ্গরে খনন প্রকল্প নেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ১৭৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি আগামী জুনে শেষ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।  বছরের পর বছর টোকেন বরাদ্দ দিয়ে এক যুগ টিকিয়ে রাখা হয়েছে প্রকল্পটি। এভাবে বরাদ্দ দিতে থাকলে কয়েকশ' বছরেও প্রকল্পটি শেষ হবে না, শুধু অর্থের অপচয় হবে। শুধু পশুর চ্যানেল খনন প্রকল্প নয়, নামমাত্র অর্থ দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে এরকম ৬৩ প্রকল্প। এসব প্রকল্প কবে শেষ হবে তা কেউই বলতে পারছে না।

অর্থ সংকটের পাশাপাশি আরও কিছু সমস্যার কারণে এসব প্রকল্প স্থবির। বেশির ভাগ প্রকল্পে বছরের পর বছর এক লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে এগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেছে পরিকল্পনা কমিশন।

ফলে কিছু অর্থ ব্যয় হলেও জনগণের কোনো কাজে আসছে না। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। স্বল্প অর্থ দিয়ে এডিপিতে টিকিয়ে রাখা এসব প্রকল্পের একটি তালিকা করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ এবং মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রকল্পগুলোর অর্থ সংকটের পাশাপাশি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে। এডিপিতে খুব অল্প বরাদ্দ দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। কারণ একবার এডিপিতে বাদ পড়লে আবার তালিকাভুক্ত করা কঠিন। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিদ্ধান্ত না নিলে বছরের পর বছর অর্থ অপচয় হতে থাকবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান এনায়েত হোসেন সমকালকে বলেন, পশুর চ্যানেল খনন প্রকল্পটির মতো সব নদী খননে অর্থ সংকট প্রকট। চাহিদা অনুযায়ী পরিকল্পনা কমিশন থেকে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে চাহিদা মাফিক অর্থ প্রয়োজন। তা না হলে প্রকল্পের কোনো সুফল পাওয়া যাবে না।

পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের যুগ্ম প্রধান প্রশান্ত কুমার বলেন, এডিপির তালিকাভুক্ত কিছু প্রকল্প সমস্যায় জর্জরিত। প্রত্যেকটি প্রকল্পে ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা রয়েছে। এরপরও বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রতিবছর কিছু অর্থ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের দায়ভার কম।

আইএমইডির এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ, নামমাত্র বরাদ্দ। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে_ প্রকল্পে দরপত্র আহ্বানে বিলম্ব, দরপত্র রেসপন্সিভ না হওয়া, প্রকল্পের ঋণ না পাওয়া, অর্থ ছাড় না হওয়া বা দেরিতে ছাড় হওয়া, ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যা, মামলা, প্রকল্প প্রস্তাবনা সংশোধন ও অনুমোদনে বিলম্ব। এছাড়া দাতা সংস্থার সঙ্গে দেরিতে চুক্তিও বিলম্বের অন্যতম কারণ।

সূত্র জানায়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সর্বাধিক ২০টি প্রকল্প খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এরপরেই রয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়টির ১৮টি প্রকল্প অল্প অর্থ দিয়ে বছরের পর বছর টিকিয়ে রাখা হয়েছে। সংস্কৃতি, স্থানীয় সরকার বিভাগের ৭টি, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের ৫টি, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের ৪টি, বিদ্যুৎ বিভাগের ৪টি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ২টি, সমাজকল্যাণ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি করে প্রকল্প রয়েছে এ তালিকায়।

বড় কয়েকটি প্রকল্পও রয়েছে আইএমইডি তালিকায়। বাংলাদেশ তেল গ্যাস এবং খনিজ করপোরেশনের ৯৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালী থেকে আনোয়ারা গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন নির্মাণ এবং ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে টু-ডি সিসমিক সার্ভে কর্মসূচি, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৪১০ কোটি টাকা ব্যয়ে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেকের উন্নয়ন এবং ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের রাউজান থানায় স্বল্প রোজগেরেদের জন্য ১৫তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প এ তালিকা রয়েছে।

এছাড়া ১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী জেলায় বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ, ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের ফিরোজশাহ এবং হালিশহরে হাউজিং এস্টেট নির্মাণ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তা ও নর্দমার উন্নয়ন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ৯৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প উল্লেখযোগ্য।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রকল্প নেওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাপকভাবে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার কারণে অর্থ সংকট তৈরি হয়। আবার বেশি প্রকল্পের কারণে নজরদারিও সমস্যা। এ জন্য অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে। খবর- দৈনিক সমকাল