একনেকে ৮ প্রকল্প অনুমোদন, ব্যয় ৩৫৮৪ কোটি টাকা

জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ ৮টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা।
এই ৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৫৭১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৯৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১ হাজার ৯১৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
অনুমোদিত প্রকল্প গুলো হচ্ছে- ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম-২য় পর্যায় প্রকল্প -এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা; মান সম্পন্ন বীজ সরবরাহ বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প -এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা; প্রাণিসম্পদ উৎপাদন উপকরণ ও প্রাণিজাত খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার স্থাপন প্রকল্প -এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা; পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের আওতায় ৭০ হাজার ওভারলোডেড বিতরণ ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন প্রকল্প -এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা; জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্প -এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা; ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুড়িং প্রকল্প -এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প -এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা; গাইবান্ধা-ফুলছড়ি-ভারতখালী-সাঘাটা সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প -এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
জামালপুর ইকোনমিক জোনের বিস্তারিত হচ্ছে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সংযোগস্থলে অবস্থিত। বে অব বেঙ্গল গ্রোথ ট্রায়াঙ্গেল এর শীর্ষ সমুদ্র বন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে দক্ষিণ-পঞ্চিমে কলকাতা, মাদ্রাজ ও কলম্বো এবং দক্ষিণ-পূর্বে ইয়াংগুন থেকে থাইল্যান্ড ও প্যানাং পর্যন্ত যোগাযোগ বিস্তৃত। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর নেপাল, ভুটান, ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্য এবং মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের সম্ভাবনাময় সমুদ্র প্রবেশ দ্বার। এ কারণে বাংলাদেশ এ্যাসেমব্লিং, ম্যানুফ্যাকচারিং, ট্রেডিং এবং সার্ভিস সংক্রান্ত ব্যবসার আঞ্চলিক হাব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের চারটি রাজ্য ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম এবং আসামের সঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৮৮০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, যার মেঘালয় রাজ্যের সঙ্গে ৪৪৩ কিলোমিটার সীমাপ্ত বিদ্যমান। ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়নে অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। জামালপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং, রেডিমেট গার্মেন্টস, ভোগ্যপণ্য ও খাদ্য সামগ্রী তৈরি করে রপ্তানীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের রাজ্যগুলোর শিল্প হাব হিসেবে বিবেচিত হবে।
প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব প্রধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে সেগুলো হচ্ছে- ৪৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ, ৫৯ লাখ ২৪ হাজার ৬০৩ ঘন মিটার ভূমি উন্নয়ন, ১ হাজার ৬৮০ বর্গমিটার অফিস ভবন, ডরমেটরী ভবন ও কাস্টমস অফিস নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৫ হাজার ৬২৫ মিটার সীমানা প্রাচীর ও ১ হাজার মিটার এ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ করা হবে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা এবং সাধারন অর্থনৈতিক বিভাগের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- সরকার বিদ্যুতের উৎপাদন যেভাবে বাড়িয়ে চলেছে এবং বিদ্যুতের যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে এগুলো বাস্তবায়িত হলে ২০১৮ সাল নাগাদ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় আসবে।
এছাড়া পল্লী এলাকায় যেসব ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার আছে সেগুলো দ্রুত প্রতিস্থাপন করা এবং সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্সে অতিথিদের বসার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।