English Version
আপডেট : ১৭ মার্চ, ২০১৬ ১৪:৩০

অর্থপাচারের তথ্য প্রকাশ করবেন মায়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
অর্থপাচারের তথ্য প্রকাশ করবেন মায়া
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় আজ ফিলিপাইনের সিনেট কমিটিতে দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি হবে। আজ বৃহস্পতিবারের এ শুনানিতে ফিলিপাইনের রিজাল কর্মাসিয়াল ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার মায়া সান্তোস-দেগুইতো, যিনি এ অর্থপাচারের ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন, তার জানা সব তথ্য প্রকাশ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। খবর ফিলিপাইন স্টারের।   ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ বাংকের ১০ কোটি ডলার লোপাট হলেও এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার গেছে ফিলিপাইনে। এর আগে ফিলিপাইনের সিনেটে শুনানিতে দেশটির কয়েকজন সিনেটর বলেছেন, বাংলাদেশের ওই টাকা এরই মধ্যে ‘কৃষ্ণ গহ্বরে’ চলে গেছে। কালো পথে চলে গেছে বিভিন্ন ক্যাসিনোতে। সেখান থেকে এ টাকা তুলে আনার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। বাংলাদেশের বিপুল অর্থ হ্যাকিংয়ের নজিরবিহীন এ  ঘটনাটি বাংলাদেশের পাশাপাশি ফিলিপাইনের গণমাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে।
 
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ পাচার হওয়ার ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোকে গত মঙ্গলবার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছিল। এ চুরির অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আরসিবিসি ব্যাংকের চারটি অ্যাকাউন্টে এসেছে মায়া জানতেন । অর্থপাচারের ঘটনায় গঠিত ফিলিপাইনের সিনেট ব্লু রিবন কমিটির প্রথম শুনানি  মঙ্গলবার শুরু হয়েছে। এ শুনানিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোকে দায়ী করেছেন। এব পরে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়েছে।
 
ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত শুনানিতে মঙ্গলবার সাক্ষ্য দেন বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের প্রেসিডেন্ট সালুদ বাতিস্তা। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, কার নির্দেশে ওয়েক্যাং জু নামের এক চীনা জাংকেট অপারেটরকে অর্থ দেওয়া হয়েছিল?
 
জবাবে সালুদ বাতিস্তা বলেন, ‘আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোর নির্দেশে ওয়েক্যাং জুকে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং ৬০ কোটি ফিলিপিনো পেসো শোধ করি। ক্যাসিনোতে অর্থ লেনদেনকারী ব্যক্তিকে জাংকেট অপারেটর বলা হয়।
 
সালুদ বাতিস্তা শুনানিতে বলেন, নগদ ৬০ কোটি পেসো একবারে শোধ করা হয়। আর বাকি ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার ৫ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শোধ করা হয়। শুনানিতে উপস্থিত আরসিবিসির অভিযুক্ত শাখা ব্যবস্থাপক দেগুইতোকেও জেরা করেন সিনেট কমিটির সদস্যরা।
 
এ সময় দেগুইতো জানান, তাঁর যা বলার, সবই তিনি এক্সিকিউটিভ সেশনে বলবেন। মায়া সান্তোস দেগুইতোর বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তের জন্য ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ডিওজে) ইতিমধ্যে একজন প্রসিকিউটর নিয়োগ দিয়েছে। ফিলিপাইনের রাষ্ট্রীয় সহকারী প্রসিকিউটর গিলমারি ফে প্যাকামারা তদন্ত করবেন। রিজাল ব্যাংকের মাকাতি শাখার যে চারটি হিসাবের মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয়েছে। সেগুলোর মালিকদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করবেন সহকারী প্রসিকিউটর।
 
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ ফিলিপাইনে স্থানান্তরের পর সেখান থেকে বিদেশে পাচার করা হয়। এতে জড়িত থাকার সন্দেহে পাঁচ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগটি দায়ের করে এএমএলসি কমপ্লায়েন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন গ্রুপ। এই অভিযোগে মায়া সান্তোস দেগুইতোর সম্পর্কে বলা হয়, সন্দেহজনকভাবে নয় মাস আগে চারটি হিসাব খোলা হলেও সেগুলোর পরিচয় নিশ্চিতে শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে দেগুইতো সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সন্দেহভাজন ওই সব ব্যক্তিকে অর্থ উত্তোলনে সহায়তা করেছেন।
 
অভিযোগে বলা হয়, সন্দেহভাজন চারটি হিসাবের অর্থ যে বাংলাদেশ ব্যাংকের, সেটি দেগুইতো জানতেন। তবে পদক্ষেপটি ঠেকাতে তিনি কোনো উদ্যোগ নেননি। অর্থের এই পুরো লেনদেন বন্ধে একাধিক অনুরোধও তিনি উপেক্ষা করেছেন।
 
রিজাল ব্যাংকে ২০১৫ সালের ১৫ মে ওই সন্দেহজনক চারটি হিসাব খোলেন মাইকেল ক্রুজ, জেসি ক্রিস্টোফার ল্যাগরোসাস, আলফ্রেড ভারগারা, এনরিকা ভাজকেজ। ওই চারটি হিসাবের মাধ্যমেই ৫ ফেব্রুয়ারি ৮১ কোটি ডলার ক্যাসিনো হয়ে ফিলিপাইনের বাইরে পাচার হয়। এই পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে ছয় ফিলিপিনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধেও এখন তদন্তে নেমেছে এএমএলসি। এর মধ্যে কিম ওং নামের এক ব্যবসায়ী ৪ মার্চ হংকংয়ে পালিয়ে গেছেন।