রিজার্ভ অর্থ চুরি
দেশে নয়, ভারতে মুখ খুললেন গভর্নর
নিজস্ব প্রতিবেদক

কেন্ত্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থ চুরির বিষয়ে দেশের মাটিতে কথা না বললেও ভারতে গিয়ে মুখ খুললেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। পাঁচ দিনের সফরে তিনি এখন ভারতে রয়েছেন।
অবশ্য, আজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এদিকে, এশিয়ার অর্থনীতির ওপর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও ভারত সরকার আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এখন দিল্লিতে। এসময় বাংলাদেশের একটি পত্রিকার ভারতের প্রতিনিধিকে তিনি অর্থ চুরির বিষয় নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সম্মেলনের ফাঁকে দিল্লির তাজমহল হোটেলে তিনি এ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বলে পত্রিকাটি জানায়।
রোববার প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের হ্যাকিংয়ের ঘটনার পর সাইবার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হ্যাংকিয়ের মাধ্যমে আট কোটি ডলার হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা গোটা বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জরূপে আবির্ভূত হয়েছে। এখানে তিনি আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিনা লাগার্দসহ বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। হ্যাকারদের পরিচয় অচিরেই পাওয়া যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ড. আতিউর রহমান বলেন, হ্যাকাররা হাতিয়ে নেওয়া অর্থ ফিলিপাইনে পাচার করে। ঘটনার পর ফিলিপাইন সরকার নানা ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা আন্তরিকভাবে তদন্ত করছেন। বিষয়টি নিয়ে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। হ্যাকাররা যে অর্থ জালিয়াতি করে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তার ৮০ শতাংশ রুখে দেওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক উদ্যোগের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে ফিরিয়ে আনা যাবে।
গভর্নর বলেন, জালিয়াতি জানার পর নিউইয়র্কের ফেডারেল ব্যাংকের কাছে যখন বাংলাদেশ ব্যাংক বার্তা দেয়, তার আগেই ফেডারেল ব্যাংক অর্থ হস্তান্তর করে দেয়। এ বিষয়ে তিনি উদ্বিগ্ন কি-না জানতে চাওয়া হলে বলেন, 'আমি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে ফেডারেল ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে মন্তব্য করতে পারি না। তবে আশ্বাস পেয়েছি, বিষয়টির যথাযথ তদন্ত হবে।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে হ্যাকাররা যে 'মালওয়্যার' ভাইরাস ঢোকাতে সমর্থ হয়েছিল, তা চিহ্নিত করে প্রশমন করা গেছে। ফলে এখন আর সে ধরনের বিপদ নেই বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মনে করছেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি জানার পরই বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে রিপোর্ট করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও এ নিয়ে বৈঠক হয়। তবে এ আলোচনার বিবরণ তিনি জানাতে চান না।
তিনি জানতে পেরেছেন, বিশ্বের ৩০টি দেশের ব্যাংকে এ ধরনের হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। তাতে অনেক বড় অঙ্কের অর্থ হ্যাকাররা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি দেশই এখন ডিজিটাল পথে চলেছে। হ্যাকিংয়ের আক্রমণ থেকে মোবাইল পরিসেবাও মুক্ত নয়। তিনি বলেন, এটা ঠিক, সাইবার অপরাধ বিষয়টি অপরাধ জগতের নতুন উপাদান। তাই সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে ব্যবস্থাপনাও গড়ে তোলা হচ্ছে। একে কেবল বাংলাদেশের সমস্যা বলে চিহ্নিত করা ঠিক হবে না।
ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত রিজার্ভ যেভাবে বেড়েছে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ বিশ্বের আন্তর্জাতিক অপরাধীদের টার্গেট হয়ে উঠেছে। এর জন্য আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তাই বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে।
ড. আতিউর গত ১০ মার্চ ভারতে গেছেন। সোমবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।