English Version
আপডেট : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৫:৪৯

অর্থনীতির অধিকাংশ সূচকই ঊর্ধ্বমুখী: অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
অর্থনীতির অধিকাংশ সূচকই ঊর্ধ্বমুখী: অর্থমন্ত্রী

চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬) প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সামষ্টিক অর্থনীতির অধিকাংশ সূচকই ঊর্ধ্বমুখী। পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রক্ষেপণেও প্রবৃদ্ধির আশাব্যঞ্জক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে বলে সংসদকে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

দশম সংসদের নবম অধিবেশনে রোববার সন্ধ্যায় ‘বাজেট ২০১৫-১৬ : প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের পূর্ববর্তী (২০১৪-১৫) অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায় ২৮ হাজার ২১৯ কোটি টাকা হতে বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ হাজার ৯২৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। মোট সরকারি ব্যয় ৩৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা হতে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৭ হাজার ১২৪কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি আয় ৭ হাজার ৬৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

প্রতিবেদনে, ১.৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে আমদানি ঋণপ্রবাহ নিষ্পত্তির হার। ব্যক্তিখাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে ১২.৮৮ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ (৩০ সেপ্টেম্বর ’১৫) পর্যন্ত ২৬.৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘১২ মাসের গড় ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির সেপ্টেম্বর ২০১৪ এর ৭.২ শতাংশ হতে সেপ্টেম্বর ২০১৫ সময়ে ৬.২ শতাংশে নেমে এসেছে।’

সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেন,‘ আর্ন্তজাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় ভর্তুকি ব্যয় কমেছে। ফলে, অগ্রাধিকার খাতের সম্পদ সঞ্চালনের বাড়তি পরিসর তৈরি হচ্ছে, সহজতর হয়েছে ব্যয় ব্যবস্থাপনার কাজটি।’

অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫.০শতাংশ। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র হতে জিডিপির ১.৭ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র হতে জিডিপির ৩.৩ শতাংশ সংস্থানের পরিকল্পনা রয়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়েছে ৭ হাজার ৪৮কোটি টাকা, যা বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ১৮. ৩ শতাংশ। ব্যাংকে পর্যাপ্ত তারল্য থাকায় সরকারের এই ঋণ গ্রহণে ব্যক্তিখাতে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি বলে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী।

ব্যাংক ঋণে সুদের হার নির্ধারণে সরকার কোন নির্দেশনা দেয় না উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে সুদের হার নির্ধারিত হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ঋণের স্প্রেড হ্রাস পাওয়ার ধারা অব্যাহত আছে। এটি অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষিখাতের সন্তোষজনক উৎপাদন, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের ম্যূল্য হ্রাস, স্বাভাবিক সরবরাহ পরিস্থিতি এবং সরকারের দক্ষ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। সামনের দিনগুলোতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে ও বছর শেষে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই থাকবে।

গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিক হতে চলতি অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রবাস নিয়োগের ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধির প্রভাবে প্রবাস আয় (রেমিট্যান্স) প্রবাহও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩ হাজার ৯৩৪ মিলিয়েন মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একইসময়ে ছিল ৪ হাজার ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ ধরে অনেক সম্ভাবনাকে সামনে রেখে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সূচনা হয়েছে দাবি করে সংসদে মুহিত বলেন, বছরের শুরু থেকেই সচল আছে অর্থনীতির চাকা, সরকারের প্রাজ্ঞ ব্যবস্থাপনায় স্থিতিশীল রয়েছে সামষ্টিক অর্থনীতির সকল খাত, আছে রাজনৈতিক সুস্থিতি।