English Version
আপডেট : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১২:১৪
লোকসান করলে চলে যাবে বেসরকারি খাতে

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল হোল্ডিং কোম্পানি হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল হোল্ডিং কোম্পানি হচ্ছে

রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬ পাটকলের পুঞ্জীভূত দায় বাড়ছে। ২০১১ সালে এ দায় ৫০০ কোটি টাকা থাকলেও এখন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকায়। গত পাঁচ বছরে দায় বেড়েছে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ কারণে পাটকলগুলোকে হোল্ডিং কোম্পানিতে রূপান্তরের কথা ভাবছে সরকার। কোম্পানিতে রূপান্তরের পর যেসব পাটকল লোকসান করবে, সেগুলো পর্যায়ক্রমে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী মাসে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।বৈঠকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, অর্থ সচিব, বস্ত্র ও পাট সচিবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সরকারি মালিকানাধীন পাটকলগুলোর বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে ২০১১ সালে সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুয়ায়ী সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন ২৬টি পাটকলকে পর্যায়ক্রমে হোল্ডিং কোম্পানিতে রূপান্তর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এ চুক্তি পাঁচ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। গতকালের বৈঠকে আগের চুক্তি অনুয়ায়ী প্রথমে পাঁচটি পাটকলকে হোল্ডিং কোম্পানিতে রূপান্তর করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তবে কওমী ও পিপলস জুট মিলস বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, লোকসান দেয়া পাটকলগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সবসময় বিরোধিতা করে এলেও রাজনৈতিক চাপে সেগুলো চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রত্যেকটি পাটকলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শ্রমিক থাকা সত্ত্বেও বিগত সময়ে প্রতিটি সরকারই নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছে। ফলে ওইসব পাটকলে এসব অতিরিক্ত শ্রমিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে বিজেএমসির দেনার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া পুরনো যন্ত্রপাতি, ভুয়া শ্রমিক, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে পাটকলগুলো বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে আসছে।

সরকারি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিজেএমসি লোকসান দিয়েছে ৪৯৭ কোটি টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটি লোকসান করে ৬৪০ কোটি টাকা। এ লোকসান কাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে প্রতি অর্থবছরই ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থার পক্ষে এ অর্থ জোগান দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। আর পেনশনে যাওয়া শ্রমিকরা প্রতিদিনই প্রতিমন্ত্রী, বিজেএমসিসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অর্থের অভাবে সরকারি মালিকানাধীন পাটকলগুলোর পেনশনে যাওয়া বিপুল সংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারী পেনশন ও গ্র্যাচুইটির টাকা পাচ্ছেন না। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় বলেছে, পেনশনে যাওয়া প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর পেনশন ভাতার পাওনা মেটাতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। পেনশনের পাওনা পরিশোধসহ এ খাতের সমস্যা মেটাতে প্রয়োজন ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, দেশে এখন ২৬টি সরকারি পাটকল আছে। সব মিলিয়ে কাজ করেন ৮০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা। তাদের বেতন পরিশোধে প্রতি মাসে সংস্থার ব্যয় হয় ৬০ কোটি টাকা।