বিনিয়োগ বাড়াতে সুদহার কমেছে

সুদ হার কমলে বিনিয়োগ বাড়বে ব্যবসায়ীদেরে এমন দাবির ফলে সরকারী বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ হার কমেছে। পাশাপাশি আমানতের সুদ হারও কমিয়ে আনা হয়েছে।
এসব ব্যাংকের ঋণের সুদ হার সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এবং সবনিম্ন ১০ শতাংশ। চলতি মোস ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকেই সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বিডিবিএল ও কৃষি ব্যাংক এই সুদ হার কার্যকর করা হয়েছে।
তবে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন হারও পরিবতন হতে পারে বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন। ব্যবসা করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে অভিযোগ করে উদ্যোক্তারা দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাংক ঋণের সুদ হার কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে গেল জানুয়ারিতে ওই সাত ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা এক বৈঠকে সুদ হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেন। ওই বৈঠকেই সর্বোচ্চ সুদ হার ১৪ শতাংশ ঠিক করে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তা কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। যা এর আগে এই ব্যাংকগুলোতে সর্বোচ্চ সুদ হার ছিল১৬ শতাংশ।
পাশাপাশি মেয়াদী আমানতের সুদ হারও এক শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনে ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংক থেকে আমানতকারীরা এখন সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদ পাবেন। এর আগে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ সুদ দিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।
বানিজ্যক ব্যাংকের একাধিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “বিভিন্ন কারণেই ঋণের সুদ হার কমানো হয়েছে। প্রথমত বিনিয়োগ উৎসাহিত করা। বড় বড় বিনিয়োগকারীরা অনেক দিন ধরে বলে আসছেন, আমাদের সুদ হার বেশি হওয়ায় বিনিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন আমরা কমিয়েছি, আশা করি বিনিয়োগকারীরা আসবেন। “এছাড়া আমাদের হাতেও বিনিয়োগযোগ্য তহবিল রয়েছে। সেগুলো বিনিয়োগে যাওয়া দরকার। আর সুদ হার কমানোর ফলে এখন থেকে ঋণ খেলাপিও কম হবে,” ।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল বলেন, ‘ গত সোমবার থেকেই তো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ঋণে ও আমনতে নতুন সুদহার কার্যকর করার কথা রয়েছে।’ তবে সার্বিকভাবে ঋণে সুদহার যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে করে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন এ অর্থনীতিবিদ।
এদিকে নতুন সুদ হারে উদ্যোক্তারা মেয়াদি ঋণ পাবেন ১৩ শতাংশ সুদে, চলতি মূলধন ১৪ শতাংশে, বাণিজ্যিক সাধারণ ঋণ ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ, এসএমই ১৪ শতাংশ, নারী উদ্যোক্তা হলে ১০ শতাংশ, আমদানি ঋণ ১৪ শতাংশ, ফোর্সড ঋণে ১৪ শতাংশ, আগাম ঋণে ১৪ শতাংশ, আইবিপি ১৪ শতাংশ হারে। অব্শ্য এর আগে এই ব্যাংকগুলো ১৬ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিচ্ছিল এসব ঋণে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে এই সাত ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ এক লাখ ২১ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২১.৯০ শতাংশ।
সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক প্রতিযোগিতা ও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ঋণে সুদহার কমেছে ৩৯ শতাংশ। একই সময়ে আমানতে সুদহার কমেছে ৪৪ শতাংশ। এসময়ের ব্যবধানে আমানতে সুদহার ৫ শতাংশ বেশি কমেছে।
২০১৫ সালের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসেই ধাপে ধাপে কমেছে ঋণে সুদের হার। যেখানে জুলাইতে ছিল ১১.৫৭, আগস্টে ১১.৫১, সেপ্টেম্বরে ১১.৪৮, অক্টোবরে ১১.৩৫, নভেম্বরে ১১.২৭ এবং সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে তা খানিকটা কমে দাঁড়িয়েছে ১১.১৮ শতাংশে। একই সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে কমেছে আমানতের সুদহারও। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমানতের সুদহার হলো- জুলাই ৬.৭৮, আগস্ট ৬.৭৪, সেপ্টেম্বর ৬.৬৬, অক্টোবর ৬.৫৮, নভেম্বর৬.৪৬ এবং সর্বশেষ ডিসেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ৬.৩৪ শতাংশে।
অবশ্য এই অথবছরের প্রথম চার মাসে ঋণ ও আমানতের বিপরীতে সুদহারের স্প্রেডে মধ্যে একটি সমতা ছিল। কিন্তু চলতি অথবছরের নভেম্বর থেকে স্প্রেড বাড়তে শুরু করে। ডিসেম্বরে বাড়ার ব্যবধান বৃত্ত বড় হয়ে যায়।
ব্যাংকের এক প্রতিবেদন মতে, ডিসেম্বরে স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৪.৮৪ শতাংশ।যা আগের নভেম্বর ও অক্টোবর মাসে ছিল যথাক্রমে ৪.৮১ ও ৪.৭৭ শতাংশ। অর্থাৎ এই দুই মাস স্প্রেড বেড়েছে ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণে গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ১০.০৮ শতাংশে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ১১.৬৫ শতাংশ, বিশেষায়িত ৯.৬২ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৯.৭৪ শতাংশে। অন্যদিকে আমানতে সুদহারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে সরকারি ব্যাংকগুলো গড়ে ৬.৩৮ শতাংশে, বেসরকারি ৬.৫১, বিশেষায়িত ৭.৮৪ ও বিদেশি ব্যাংকগুলো ২.৫৯ শতাংশ সুদ দিয়ে ঋণ আমানত সংগ্রহ করছে।