English Version
আপডেট : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১০:৫৮

ব্যাংক নথি জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য আমদানি চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্যাংক নথি জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য আমদানি চলছে

ব্যাংক নথি জালিয়াতি করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জানুয়ারি মাসে এক কোটি টাকা মূল্যের একটি মেশিন আমদানি করে পাবনার রাইস মিল প্রতিষ্ঠান ‘সর্দার এগ্রো প্রডাক্টস’। নথিতে আমদানি পণ্যের মূল্য পরিবর্তন করে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গত সপ্তাহে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তা নিশ্চিত হয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, আমদানি হওয়া পণ্যের শুল্কায়ন নির্ধারণ করা হয় ব্যাংক নথির ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু নথিতে পণ্যের মূল্য কমিয়ে বা পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকির আশ্রয় নেয় আমদানিকারক এবং খালাসের দায়িত্বে থাকা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি চালানে ব্যাংক নথি জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। এসব ঘটনায় জড়িত আমদানিকারকদের কাছ থেকে জরিমানাসহ রাজস্ব আদায়ও করা হয়েছে। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে সংশ্ল্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের।

তথ্যমতে, গত ১৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ড থেকে একটি মেশিন আমদানি চালানের আগামপত্র (বি/ই ৫২২৯৩) দাখিল করে সর্দার এগ্রো প্রডাক্টস। পণ্যটি খালাসের দায়িত্বে ছিল চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ‘মনির আহম্মেদ’। আমদানিকৃত পণ্যের বিপরীতে ন্যাশনাল ব্যাংকে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার এলসি (নং-০০০০০৯৫২১৫০২০০০১) খোলে আমদানিকারক। অপেক্ষাকৃত কম শুল্কহার আছে এমন একটি আমদানি পণ্যের নাম উল্লেখ করে নথি জাল করে প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে সহায়তা করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। গত বুধবার ব্যাংক নথি জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পর জড়িত আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কাস্টমস কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়েছে কাস্টমস কর্মকর্তারা।

চালানটি খালাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান ‘মনির আহম্মেদ’-এর স্বত্বাধিকারী মনির আহম্মেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘ব্যাংক নথি জালিয়াতির বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ভুলের কারণে এমনটি ঘটেছে। এ বিষয়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাস্টমস কর্মকর্তাদের আলোচনা হয়েছে।’

এর আগে গত আগস্টে একইভাবে ব্যাংক নথি জালিয়াতির মাধ্যমে শেরপুরের ‘ইউনুস অটো রাইস মিল’ ২ কোটি টাকা মূল্যের একটি চালানে (বি/ই ৬৩৯৫২৩) মেশিন আমদানি করে। ফারমার্স ব্যাংকের (এলসি-০০০০৩৩০১১৫০২০০০১) নথি জালিয়াতি করে প্রতিষ্ঠানটি ৭০ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়। নথি জালিয়াতির অপরাধে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ফাঁকি দেয়া রাজস্বসহ ৮০ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। একই সঙ্গে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ‘আবির ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’কে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মুকিতুল হাসান বলেন, ব্যাংক নথি জালিয়াতির মাধ্যমে ‘সর্দার এগ্রো প্রডাক্টস’ ও ‘ইউনুস অটোরাইস মিল’সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার প্রমাণ পেয়েছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ‘সর্দার এগ্রো প্রডাক্টস’-এর রাজস্ব ফাঁকির মামলাটি চলমান রয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে ফাঁকি দেয়া রাজস্বসহ জরিমানা আদায় করা হবে।

এছাড়া চলতি বছরের শুরুর দিকে ব্যাংক নথি জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ পাচারের দায়ে ‘মেসার্স এসএম ডিজাইন’-এর একটি চালান আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিদর্শক জাকির হোসেন। ব্যাংক নথি জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ৪০ লাখ টাকা পাচার করেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা প্রক্রিয়াধীন।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিদর্শক জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্যাংক নথি জালিয়াতি করে মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ পাওয়ায় ‘মেসার্স এসএম ডিজাইন’-এর দুটি কনটেইনার আটক করা হয়। এছাড়া ব্যাংক নথি জালিয়াতির আরো বেশ কয়েকটি ঘটনা রয়েছে। সেগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

সূত্র : বণিক বার্তা