English Version
আপডেট : ১৩ জুলাই, ২০২১ ১১:১৮

জীবনে চা-সিগারেট-পান খাননি ড. আব্দুর রাজ্জাক

অনলাইন ডেস্ক
জীবনে চা-সিগারেট-পান খাননি ড. আব্দুর রাজ্জাক

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার সময় মা রেজিয়া খাতুন বলেছিলেন, ‘তুমি বিড়ি-সিগারেট তো খাও না, সেটা ভালো। চা খেলেও খুব একটা উপকার হয় না। চা খাওয়ারও দরকার নেই।’

এরপর ৫০ বছরের বেশি সময় কেটেছে। কখনো একটা সিগারেটও পান করেননি কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। এর স্বাদ কেমন সেটা জানার আগ্রহও জাগেনি কখনো। এমনকি পান ও চায়ের মতো কোনো নেশা তার নেই, ছিল না কখনো।

সম্পর্কিত খবরসোমবার (১২ জুলাই) তামাকবিরোধী এক ওয়েবিনারে নানা প্রসঙ্গে কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। এর মধ্যে তার মায়ের নির্দেশে জীবনে এমন কৃচ্ছ্রতা সাধনের গল্পটি বলেন, যা অবাক করেছে অনেককেই।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমার মা যেদিন আমি ভার্সিটিতে পড়তে যাই, সেদিন বলেছিলেন, তুমি বিড়ি-সিগারেট তো খাও না, সেটা ভালোই আমি জানি। চা খেলেও যে খুব উপকার হয়, সেটা আমার জানা নেই। তুমি খেতেও পারো; নাও পারো।’

এরপর আবার বলেন, ‘যেটার তেমন কোনো দৃশ্যমান উপকারিতা নেই, সেটা খাওয়ার কী দরকার? চা-ও খাওয়ার দরকার নেই।’

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সত্যি বলতে একটা সিগারেটও আমি কোনো দিন খাইনি। পানও খাইনি। আমি কিন্তু চা-ও খাই না।’

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন কাটানো এমন মানুষ আর কজন আছেন জানা নেই। রাজনৈতিক অঙ্গনে তার বিচরণ ষাটের দশকে অর্থাৎ স্কুলজীবন থেকেই। তিনি ১৯৬৯-৭০ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ ছাত্রনেতা হিসেবে ৬ দফা ও ১১ দফাভিত্তিক গণআন্দোলনে অংশ নেন। এ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

তাহলে বড় নেতা হতে চা-সিগারেটের আড্ডায় বসে ধোঁয়া উড়ানোর খুব একটা প্রয়োজন নেই বলেই বোঝা যায়। পার্টির আড্ডায় চুরুট হাতে থাকলে বড় নেতার ভাব আসবে এমন ভাবার কিছু নেই। কারণ এসব ছাড়াই অনেক বড় নেতা হয়েছেন ড. আব্দুর রাজ্জাক।

যিনি স্বাধীনতার পরে ১৯৭২-১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক নিজেই নিন্দা করলেন দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তামাকের অপব্যবহার নিয়ে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার কাছে খুব আশ্চর্য লাগে, আমি এটা নিয়ে খুব কষ্ট পাই; খুব ব্যথিত। আমাদের লোকাল সরকারের নির্বাচনে কী পরিমাণ সিগারেট বিতরণ হয়! অস্বাভাবিক! কারা খায় এত সিগারেট? কেন সিগারেট দিতে হবে?’

গল্প শুনিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পেইনের সময় রাতে কর্মীরা ভোটারের কাছে যায় সিগারেট নিয়ে। এমন হয় ভোটার ঘুমাচ্ছে। উঠতে পারবে না। তখন ক্যাম্পেইনার বলে, আপনার জন্য দুই প্যাকেট সিগারেট নিয়ে এসেছি। ভোটার বলে, জানালায় খলয় (মাছ ধরার পাত্র) বেঁধে রেখেছি। ওটার মধ্যে রেখে যান।’

ভোটে সিগারেট দিতে দিতে সবকিছু নিঃস্ব এক প্রার্থীর গল্প শোনান আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘আমার এক ভক্ত, চেয়ারম্যানে দাঁড়িয়ে একদিনে এক লাখ টাকার সিগারেট দিয়েছে। ওই ইলেকশনে সে ৩০-৩২ লাখ টাকার বেশি খরচ করেছে। এর মধ্যে ২০ লাখ টাকা ধার। নির্বাচনে জিতে নাই। পরে এমন বিপর্যয়, স্ট্রোক করে মারা গেল।’

প্রসঙ্গত, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মো. জালাল উদ্দিন তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি গবেষণা বিভাগে চাকরি করতেন। মা রেজিয়া খাতুন একজন গৃহিণী।

তিনি নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে ধনবাড়ি নওয়াব ইনস্টিটিউট থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে বিএসসি এবং ১৯৭২ সালে কৃষিতত্ত্বে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে (বিএআরসি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের কর্মজীবন শুরু। এ প্রতিষ্ঠানেই তিনি মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হন।