নতুন মেয়রের যত চ্যালেঞ্জ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ষষ্ঠ নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী। কিন্তু চসিক পরিচালনায় তার সামনে আছে সমূহ সংকট-সমস্যা। এসব সমস্যা মোকাবিলায় প্রতিনিয়তই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে তাকে। প্রতিদিন সামনে আসা সংকট-চ্যালেঞ্জগুলো নিরসন করার ওপরই নির্ভর করবে আগামীতে মেয়র পদে তার সাফল্য-ব্যর্থতা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চসিকে সমস্যা-সংকটের পাহাড়। সংস্থাটির এখন অন্যতম সংকট অর্থ।
উন্নয়ন প্রকল্পের ম্যাচিং ফান্ড বকেয়া আছে ৬৩২ কোটি ১৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক বাবদ বকেয়া প্রায় ৮৩০ কোটি টাকা। বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে চসিকের সাতটি বিভাগে। বর্তমান প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজস্ব বিভাগের ১২৮ জনসহ তিন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেছিলেন। অভিন্ন চিত্র স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রকৌশল, সচিবালয়সহ বিভিন্ন বিভাগে। কর্মরতদের অনিয়ম ও যথা সময়ে অফিস না করাসহ নানা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। চসিকের আরেক সমস্যা অনিয়ম-দুর্নীতি। এরই মধ্যে নগরে করোনা আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত, তেল ব্যবহার, বিপ্লব উদ্যান ও শপিং কমপ্লেক্সসহ সৌন্দর্যবর্ধনের নানা প্রকল্পে অনিয়মের তদন্ত হয়। তদন্তে অনিয়মের প্রমাণও মেলে। কিন্তু এসবের কোনো সুরাহা হয়নি। নগরবাসীর কপাললিখন খ্যাত জলাবদ্ধতা সমস্যায় নাভিশ্বাস উঠেছে। কিন্তু গত পাঁচটি নির্বাচনে এটি প্রার্থীদের জন্য ট্রাম্পকার্ড হলেও পূরণ হয়নি প্রতিশ্রুতির। বছরজুড়েই লেগে থাকে যানজট। বেহাল অবস্থা নগরের ফুটপাথের। সমন্বয়হীন ২৮টি সেবা সংস্থা। শৃঙ্খলা নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়। নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ‘নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও এগুলোতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা না মেলার অভিযোগ। একই সঙ্গে খুঁড়িয়ে চলছে নগরের মাতৃসেবার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র চসিক মেমন মাতৃসদন হাসপাতাল। নগরে চসিক পরিচালিত ৭৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও চলছে অনিয়মের ওপর ভর করে। সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে নগরে অনেক আয়বর্ধক ও সৌন্দর্যবর্ধক প্রকল্প তৈরি করা হয়। কিন্তু গত ২০১০ সালের পর থেকে নতুন আয়বর্ধক প্রকল্প তৈরি করা হয়নি। উল্টো অনেক প্রকল্পই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক সংকট আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব এইচ এম মুজিবুল হক শুক্কুর বলেন, নগরের অন্যতম প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। এটি নিরসনে সিডিএ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তবে চসিকের উদ্যোগে বিদ্যমান খালগুলো গভীরতা সহকারে খনন করতে হবে। তাছাড়া যানজট নিরসন, ফুটপাথ উদ্ধার, রাতের বেলায় বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত, মশক নিধন কর্মসূচি পরিচালনা, চসিকের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, বিভিন্ন প্রকল্পের প্রমাণিত অনিয়মগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়াসহ অনেক কঠিন কাজ আছে। আমরা মনে করি, এসব নাগরিক দুর্ভোগ নিরসনে প্রয়োজন সুষ্ঠু ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, কঠোর হাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন। নতুন মেয়রকে অভিনন্দন জানালেন প্রশাসক : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নবনির্বাচিত মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও নতুন পর্ষদকে অভিনন্দন জানালেন বর্তমান প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। গতকাল দুপুরে বহদ্দারহাটের বাসভবনে নবনির্বাচিত মেয়রকে ফুল দিয়ে তিনি শুভেচ্ছা জানান।
খোরশেদ আলম সুুজন বলেন, আগামীতে চট্টগ্রাম একটি সুন্দর, পরিবেশবান্ধব, পরিচ্ছন্ন, বাসযোগ্য ও আধুনিক নগরে রূপান্তরিত হবে এটাই আমার প্রত্যাশা। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান ও আন্তরিকতার কারণে জানমালের বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। এ কৃতিত্বের অংশীদার নির্বাচন কমিশনও। নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাকেও অভিনন্দন জানাই।