English Version
আপডেট : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১২:৫৩
সূত্র:

টালমাটাল বিএনপি, একযোগে পদত্যাগ করবেন সিনিয়র নেতারা?

টালমাটাল বিএনপি, একযোগে পদত্যাগ করবেন সিনিয়র নেতারা?

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের ধাক্কায় দিশেহারা বিএনপি। দলের মধ্যে যে চাপা অন্তঃকলহ ছিল তা এখন অনেক বেড়ে গেছে। দলের নেতারা প্রকাশ্যে একে অন্যকে দোষারোপ করছেন। এছাড়াও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দলের ভবিষ্যৎ ও দলের কাউন্সিল ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে দলে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এই অস্থির পরিস্থিতির কারণে দলের তৃণমূল থেকে আওয়াজ উঠেছে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সরে যেতে হবে।

নির্বাচনের পর থেকে আবার সরব হয়ে উঠেছেন লন্ডনে নির্বাসনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দলের তৃণমূলের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন। সেই কথা বার্তার জের হিসেবেই তিনি তৃণমূলের মতামত জানতে চাচ্ছেন। এই মতামতের ভিত্তিতেই তিনি খুব শীঘ্রই একটি সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা যাচ্ছে।

যে তারেক রহমান এতদিন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে রাখার পক্ষপাতী ছিলেন। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর যখন বিএনপির মধ্যে জোর দাবি উঠেছিল নেতৃত্বে ব্যর্থতার দায়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সরে যেতে হবে। এ সময় দলের সিনিয়র নেতারাও এই সরে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেই সময় তারেক জিয়াই তাদের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। নেতৃত্ব পরিবর্তন করা উচিত নয় বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। এখন অবশ্য তারেক জিয়া উল্টো সুরে কথা বলছেন। বিশেষ করে তৃণমূলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গত দুই দিনের আলাপচারিতায় তিনি নেতৃত্বে পরিবর্তনের দাবিকে সহানুভূতি এবং ইতিবাচকভাবে দেখছেন বলে তৃণমূলে যারা কথা বলেছেন তারা বলেছেন।

বিএনপির মধ্যে সাম্প্রতিক অস্থিরতার কারণ একাধিক। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ব্যর্থতায় এখন সেই একাধিক কারণগুলো সামনে চলে এসেছে। এরমধ্যে মোটা দাগে ৫টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে__

১) সবচেয়ে বড় অস্থিরতা হচ্ছে সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতারা কী করেছিলেন। দুজন তরুণকে যুদ্ধে পাঠিয়ে দলের সিনিয়র নেতারা দায়িত্বের পরিচয় দেননি। এই অভিযোগ উঠেছে বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীতে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলছেন সিনিয়র নেতাদের যেভাবে নির্বাচনী প্রচারণা এবং নির্বাচনের পরিকল্পনার মধ্যে সম্পৃক্ত থাকা উচিত ছিল তারা সেটা থাকেননি।

২) বিএনপির তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ মনে করছে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে বিএনপির নেতৃবৃন্দ সীমাহীন গাফিলতি এবং খামখেয়ালি করছেন। তাঁরা বলছে যে, আইনি প্রক্রিয়ায় যখন খালেদা জিয়ার মুক্তির সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় তখনই আন্দোলনের কর্মসূচী দেয়া উচিত ছিল। কিন্ত বিএনপি তখন আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহণ করেনি। অথচ বিএনপি বলেছিল যে, খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ আদালতে যদি মুক্তি না দেয়া হয় তাহলে এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কিন্তু আপিল বিভাগ তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করে দিলেও তাঁরা এক দফা আন্দোলন তো দূরের কথা নূন্যতম কর্মসূচীও দিতে পারেনি। এমনকি সিটি নির্বাচনের সময় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টা সামনে আনেনি। তৃণমূলের নেতারা মনে করছে যে, এই সিটি নির্বাচনে একটি সুযোগ ছিল যদি তাঁরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ম্যানডেড হিসেবে সিটি নির্বাচনকে দেখতো, তাহলেও তৃণমূলের মধ্যে একটি আস্থা তৈরি হতো। কিন্তু নেতৃবৃন্দ রহস্যজনক কারণে সেসময় তৃণমূলের দাবি উপেক্ষা করেছে এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

৩) বর্তমানের স্থায়ী কমিটিতে অনেকেই অকার্যকর, অনেকেই অসুস্থ এবং দলের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করছেন না। অনেকেই দলের নেতৃত্বের বিপক্ষে বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করেন, এরপরেও তাঁরা দলের স্থায়ী কমিটিতে কিভাবে আছেন সেটা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। এই স্থায়ী কমিটি কোন নির্দেশনামূলক সিদ্ধান্ত দিতে পারেনা।

৪) বিএনপির এই নেতৃত্ব জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যে সম্পর্ক করেছে তা এখনো রহস্যে মোড়ানো। এই সম্পর্ক কি, এই সম্পর্কের পরিধি কতটুকু তা বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। বিশেষ করে সিটি নির্বাচনের সময়েও দেখা গেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপির প্রার্থীদেরকে সমর্থন জানালেও তাঁরা ঐ নির্বাচন প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেনি। কাজেই এই ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য শেষ পর্যন্ত বিএনপির জন্য কতটুক জরুরী বা আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা সেই প্রশ্ন দলের মধ্যে এসেছে।

৫) ২০ দলীয় ঐক্যজোট বিশেষ করে জামাতের সঙ্গে সখ্য নিয়েও বর্তমান নেতৃত্ব লুকোচুরি খেলছে। জামাতের সঙ্গে বিএনপি থাকবে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। আর এই সমস্ত অস্পষ্টতা রেখে আর যাই হোক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে বিএনপির তৃণমূলের নেতারা তারেককে অভিমত জানিয়েছে। আর এর ভিত্তিতে হয়তো তারেক জিয়া একযোগে বিএনপির সব নেতাকে অথবা বর্তমান স্থায়ী কমিটির কয়েকজনকে সরে যাবার জন্য নির্দেশ দিবেন।

তৃণমূল মনে করছে, এখন যারা দলের জন্য কাজ করতে পারবে, সংগঠনের জন্য সময় দিতে পারবে এবং দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে পারবে তাদেরকেই নেতৃত্বে আনা উচিত। আর তারেক জিয়া যদি শেষ পর্যন্ত দলের তৃণমূলের কথা শেষপর্যন্ত শোনেন তাহলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অনেক সদস্যকেই হয়তো এই যাত্রায় সরে যেতে হবে।