ঢাকা সিটি নির্বাচন: শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট প্রচারণা শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) মধ্যরাতে। এ কারণে প্রার্থীরা শেষ সপ্তাহের প্রচারণায় ব্যস্ত। প্রতিটি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন ভোট চেয়ে বিভিন্ন আশ্বাস দিচ্ছেন প্রার্থীরা। সূত্র জানায়, ১ ফেব্রুয়ারি ভোটের জন্য সব ধরণের প্রস্ততি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন( ইসি)। এর আগে প্রার্থীরা বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাত বারটা পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন। এর পর কেউ প্রচারনা চালালে ব্যবস্থা নিবে ইসি।
এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে ভোট ও দোয়া চেয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের নিচতলায় চায়ের টেবিলে আতিক ফখরুলের কাছে ভোট চান। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে, সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, কোষাধ্যক্ষ শ্যামল দত্তসহ অন্যান্যরাও উপস্থিত ছিলেন। আতিকুল ইসলাম ভোট চাওয়ার পর বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি ঢাকা সিটির ভোটার নই। ঠাকুরগাঁওয়ের ভোটার। সব প্রার্থীর জন্যই আমাদের দোয়া থাকবে, যাতে একটা সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
আতিকুল বলেন, আমি নির্বাচিত হলে ঢাকাকে একটি বাসযোগ্য নগরি তৈরি করব। যানযটসহ যেসকল মূল সমস্যা সেগুলো আগে সমাধান করব । পরে পর্যায়ক্রমে সব সমস্যার সমাধান করব। অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করলে প্রতিপক্ষ বিরোধীদলের পোলিং এজেন্টদের বের করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) মোহাম্মদপুরের শের শাহ সুরী ঈদগাঁও মাঠের সামনে পথসভায় তিনি একথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, আপনারা (ইসি) নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করুন। যাতে ভোটাররা ভয়-ভীতি মুক্ত হয়ে ভোট প্রয়োগ করতে পারেন। আমরা ইসিতে ১৪০টির বেশি অভিযোগ দিয়েছি। এগুলো আমলে না নিয়ে ১০২টি নিষ্পত্তি করে দিয়েছে। এই যদি হয় ইসির ভূমিকা তাহলে ঢাকায় নির্বাচনের যে উৎসব আছে বিলীন হয়ে যাবে।
তাবিথ আউয়াল ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভোটের আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি আছে। আপনারা সজাগ ও সতর্ক থাকুন। যার যার ভোটটি আপনারা দেবেন। আমরা যদি ভোট দিতে কেন্দ্রে না যাই তাহলে আমাদের ভোট অন্য কেউ দিয়ে দেবে। অন্যদের ভোট চুরি করা সহজ হয়ে যাবে। তাই আমাদের ভোট কেন্দ্রে যেতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে। আমরা প্রত্যেকে সকাল সকাল ভোট দিতে যাবো। তিনি বলেন, সরকার ভয় পাচ্ছে। ধানের শীষের পক্ষে গণউত্থান ঘটে গেছে এই ভেবে। এবার তাই তারা (প্রতিপক্ষ) বিশৃঙ্খলা ও বির্তক সৃষ্টি করতে চাইবে। আমরা কোনো সুযোগ দেবো না। ১ তারিখ সবাই নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আমরা আমাদের ভোট দেবো। আমরা সবচেয়ে বড় পরির্বতন আনবো। জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনবো। ঢাকাকে আমরা বসবাসযোগ্য সবুজায়ন করবো।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন এখানকার বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন। মঙ্গলবার দুপুরে সদরঘাটে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্মিত জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ কথা জানান। তখন মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ওই এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে তাদের দুজনের সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং কুশল বিনিময় হয়। পরে গণমাধ্যম কর্মীদের মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, আমরা দুই ভাই। ঢাকাবাসীর জন্য একসঙ্গেই কাজ করব। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে ব্যারিস্টার তাপসকে নির্বাচিত করলে আমরা ইতিবাচক পরিবর্তনের যে সূচনা করেছিলাম, সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, শেখ ফজলে নূর তাপসকে আমি ভোট দেব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। নির্বাচনী আচরণবিধির বাধ্যবাধকতা না থাকলে আমি ঢাকাবাসীকে ফজলে নূর তাপসকে ভোট দেওয়ার আহবান জানাতাম। তার পক্ষেই সম্ভব ঢাকার অগ্রগতি অব্যাহত রাখা। আপনারা ব্যারিস্টার তাপসকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করুন। প্রিয় ঢাকাবাসী আপনাদের কাছে এটাই আমার প্রত্যাশা। এসময় ব্যারিস্টার তাপস বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন আমার ভাই। আমাদের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা-মেয়র হানিফের সুযোগ্য সন্তান তিনি। আমরা যে লক্ষ্য দিয়েছি, ঢাকার উন্নয়নে সাঈদ খোকন এরইমধ্যে অনেকগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। নির্বাচিত হলে সেগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা উন্নত ঢাকা গড়ে তুলব। আমরা দুই ভাই সবসময় একসঙ্গে আছি, থাকব। মেয়র সাঈদ খোকন এরইমধ্যে যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন আমি নির্বাচিত হলে সেগুলো সামনের দিকে এগিয়ে নেব। এছাড়া ঢাকাকে উন্নত করতে আমরাও এ ধরনের আরও নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করব।
ইদিকে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক জাতীয় প্রেসক্লাবে বলেন, নগরের সমস্যার গুরুত্ব অনুসারে স্বল্প মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ স্বদেশে-বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ গ্রহণ করা হবে। নগরের সমস্যা চিহ্নিত করতে ও কার্যকর সমাধানে পরিকল্পনাবিদদের কাজের পরিধি বাড়ানো এবং অংসগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের মতামতের ভিত্তিতে ওয়ার্ড ভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করা হবে যাতে এ বিকেন্দ্রীকরণের সুফল দ্রুত তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানো যায়। নগর ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করে সেবার মানোন্নয়ন করা হবে। ইশরাক বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। নির্বাচনে আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ধানের শীষে ভোট দিন। ইশরাক বলেন, আমি ঢাকার সন্তান। আপনাদেরই আপনজন। আপনাদের সুখ-দুখের সঙ্গে আমার জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছে। এ ঐতিহাসিক নগরের সন্তান হিসেবে আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রতি হচ্ছে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে বিশ্বমানের আধুনিক ঢাকা গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে আমার নিজস্ব চিন্তা, চেতনা, ভাবনা ও প্রত্যাশার কাঠামো আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। আপনাদের সহযোগিতা পেলে তা আরও বাস্তব প্রয়োগিক ও নাগরিকবান্ধব করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। আমি একান্তভাবে আশাকরি আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে আপনাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।