English Version
আপডেট : ১২ অক্টোবর, ২০১৯ ১১:২২
সূত্র:

প্রকাশ্যে নেই, দিয়েছেন গা ঢাকা, তাহলে কি ফারুক আউট!

প্রকাশ্যে নেই, দিয়েছেন গা ঢাকা, তাহলে কি ফারুক আউট!

সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ক্রীড়া ক্লাবগুলোতে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনায় যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতার সম্পৃক্ততার বিষয় উঠে আসে। আর এইসব ঘটনার প্রেক্ষিতে তোপের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ গ্রেপ্তারের পর ওমর ফারুক চৌধুরী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখান। তারা এত দিন ‘আঙুল চুষছিল’ কি না এ প্রশ্নও তোলেন। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচারও দাবি করেন তিনি। তবে এক দিনের মধ্যেই তার সুর নরম হয়ে যায়। তিনি চলমান অভিযানকে স্বাগত জানান।

গত বুধবার (৯ অক্টোবর) সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেসিডিয়ামের বৈঠকের ডেকেছিল সংগঠনটি। কিন্তু হঠাৎ বাতিল করা হয় বৈঠক। কী কারণে বৈঠক বাতিল করা হয়েছিল তা নিশ্চিত করেনি সংগঠনটি। ওই দিনই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলটির চার সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয় আগামী ২৩ নভেম্বর। ক্যাসিনো ঘটনার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি ও জাতীয় কংগ্রেস সামনে রেখে শুক্রবার(১১ অক্টোবর) যুবলীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের বৈঠক হয়। সংগঠনের এই কঠিন সময়ে জরুরি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না সংগঠনটির চেয়ারম্যান। এ নিয়ে উপস্থিত নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠায় চেয়ারম্যানকে বহিষ্কারের দাবি ওঠে বৈঠকে। উপস্থিত অধিকাংশ সদস্য চেয়ারম্যানের বহিষ্কারে ঐকমত্য পোষণ করলেও সাধারণ সম্পাদকের আপত্তির কারণে তা সম্ভব হয়নি। এতে উপস্থিত নেতারা সাধারণ সম্পাদকের ওপর ক্ষুব্ধ হন। তবে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সর্বোচ্চ ব্যবস্থা (বহিষ্কার) নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ওমর ফারুক চৌধুরী ও তার নেতাদের উপেক্ষা করছেন বলে জানান একজন নেতা। আওয়ামী লীগের রেওয়াজ অনুযায়ী দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো দেশে সফরে যাওয়ার উদ্দেশে গণভবন থেকে বের হওয়ার সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতা, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিদায় জানান। বিদেশ থেকে ফেরার সময়ও গণভবনে নেতারা উপস্থিত থেকে তাকে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। গত ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে ফেরার দিনে গণভবনে উপস্থিত ছিলেন ওমর ফারুক চৌধুরী। কিন্তু যুবলীগের নেতারা যে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী সেদিকে তাকাননি বলে জানান সেখানে উপস্থিত একাধিক নেতা।

বৈঠকে যুবলীগ চেয়ারম্যান কেন উপস্থিত ছিলেন না এই বিষয়ে কোনো কথা বলেননি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ। কয়েকজন সাংবাদিক তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। বলেন, ‘নামাজের (জুমা) সময় হয়ে গেছে, আমাকে মসজিদে যেতে হবে।’ চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতি সম্পর্কে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত সাংবাদিকদের জানান, ব্যস্ততার কারণে বৈঠকে আসতে পারেননি চেয়ারম্যান। তবে ভিন্ন কথা বলছেন সংগঠনটির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আতিয়ার রহমান দিপু। তার ভাষ্য, ‘চেয়ারম্যান কেন আসেননি সে বিষয়টি আমার জানা নেই। হয়তো অসুস্থতার কারণে তিনি আসেননি।’ পরে যুবলীগের কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, চেয়ারম্যান নিজেই বৈঠক ডেকেছিলেন, কিন্তু তিনি কী কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি এই বিষয়ে বলতে পারবেন না তারা।

২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব কে করবেন জানতে চাইলে অধ্যাপক এ বি এম আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এর দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। উনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই হবে। আজকে সাধারণ সম্পাদক সভাপতিত্ব করেছেন। চেয়ারম্যানের মতো একটি বড় পোস্টের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তা-ই করব।’