দলীয় নির্দেশ অমান্য করে শপথ নিলেন সুলতান মনসুর

একাদশ সংসদ নির্বাচনে গণফোরাম থেকে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বেলা ১১টার পর তাকে শপথ পাঠ করান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। জাতীয় সংসদে স্পিকারের কার্যালয়ে এ শপথ পাঠ অনুষ্ঠিত হয়।
শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী, হুইপ ইকবালুর রহিমসহ সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা।
যদিও গণফোরামের পক্ষ থেকে দলটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেছিলেন, তারা যদি শপথ গ্রহণ করেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই রকম বক্তব্য রেখেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিএনপির নেতৃবৃন্দ। কিন্তু তার শপথ ঠেকানোর জন্য কোন রকম উদ্যোগ বা পদক্ষেপ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা গণফোরাম এখন পর্যন্ত গ্রহণ করেনি। তবে এ ব্যাপারে ড. কামাল হোসেন খামোশ!
এ বিষয়টি নিয়ে গণফোরামের একাধিক নেতা উষ্মা প্রকাশ করলেও ড. কামাল হোসেন এই বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি। বরং সুলতান মোহাম্মদ মনসুর গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ নিয়ে শপথ গ্রহণের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন। ড. কামাল হোসেনের এই নীরবতা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে অস্বস্তি তৈরী করেছে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, নিয়ম অনুযায়ী যদি তাদের শপথ গ্রহণের ব্যাপারে আপত্তি থাকে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা গণফোরাম যদি মনে করে যে বৈধ হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে তাদেরকে শপথ গ্রহণের আগেই নির্বাচন কমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠিতে জানাতে হবে। বিশেষ করে সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের ক্ষেত্রে, যেহেতু তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। কাজেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপি থেকে এ সংক্রান্ত আপত্তিপত্র শপথের আগে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু এ ধরনের কোন আপত্তি না গণফোরাম না বিএনপি না জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে দেওয়া হয়নি।’
একাধিক সূত্র বলছে, ড. কামাল হোসেন ব্যাক্তিগতভাবে চান মোকাব্বির খান এবং সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শপথ গ্রহণ করুক। একাধিক বিদেশি দূতাবাসও চাইছে যে, বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যত কম আসনই পাক না কেন তা নিয়েই যেন তারা শপথ নেন। সংসদে যেন তারা অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ড. কামাল হোসেন এই আন্তর্জাতিক মহলের পরামর্শেই খামোশ রয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
এজন্যই অন্যান্য নেতারা কথা বললেও ড. কামাল হোসেন এ ব্যাপারে মুখ খুলছেন না। এর মাধ্যমে বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা মনে করছেন যে, বাধাহীনভাবে যদি দুজনে শপথ নেন এবং সংসদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন তাহলে আস্তে আস্তে বিএনপির বাদ বাকি সদস্যরাও হয়তো শপথ নিবেন এবং এখানে ড. কামাল হোসেন শুধু একা নন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরেরও প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে। তিনিও আস্তে ধীরে সংসদে গিয়ে কথা বলার পক্ষে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু দলের বিক্ষোভের কারণে তিনি এটার প্রকাশ্যে কথা বলছেন না। তার সঙ্গেও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এবং মোকাব্বির খানের যোগাযোগ রয়েছে।
তবে বিএনপির অন্য ৬ নেতা ইতিমধ্যে শপথ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। ৭ মার্চের পর হয়তো যেকোন দিন শপথ গ্রহণের জন্য স্পিকারকে চিঠি দিবেন। বিভিন্ন বিদেশি কূটনৈতিক সূত্রে বলা হয়েছে যে, ৭ মার্চ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এবং মোকাব্বির খানের শপথ গ্রহণের পর সংসদে প্রকৃত বিরোধী দলের অবয়ব পাওয়া যাবে এবং এই অধিবেশনে না হলেও আগামী অধিবেশনে নিশ্চয়ই বিএনপির নির্বাচিত ৬ জন শপথ গ্রহণ করবেন এবং এরফলে সংসদে ক্ষুদ্র হলেও একটি বিরোধী দল হবে এবং সংসদ আরও বেশি আকর্ষণীয় হবে।