গ্যাটকো মামলা, খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ৭ ফেব্রুয়ারি

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার(২৪ জানুয়ারি) পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন এই দিন ধার্য করেন।
পাশাপাশি এই মামলার আসামি সাবেক প্রতিমন্ত্রী কে এম মোশাররফ হোসেন ও ইসমাইল হোসেন সাইমনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন আদালত।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র না পাওয়ায় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা নথিপত্র চেয়ে সময়ের আবেদন করলে আদালত এ আদেশ দেন।
এর আগে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে খালেদা জিয়াকে হুইলচেয়ারে করে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
আদালতে বসানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। বলেন- আমি তো কিছুই দেখছি না। আমি তো আপনাকেও (বিচারক) দেখছি না। এই দেয়াল তো এর আগে ছিল না, এখন কোথা থেকে এলো। আমি এখানে থাকব না, আমি এখান থেকে চলে যাব।
আদালতে প্রবেশ করার পর বিচারককে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। আদালতে যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বসানো হয়, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি এসব কথা বলেন।
এরপর বিচারক বলেন, বসার জন্য আগামীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে শুনানি শুরু হয়।
আদালতে এজলাসের বামপাশে পেশকারের পেছনে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় খালেদা জিয়াকে বসানো হয়। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারককে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমাকে কাঠগড়ায় ঢোকাতে চাচ্ছেন? এতেও আমি রাজি আছি। এ সময় বারবারই খালেদা জিয়াকে বলতে শোনা যায়- আমি এখান থেকে কিছুই দেখতে পারছি না।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী, আমিনুল ইসলাম ও মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বিচারককে বলেন, কেন তাকে (খালেদা জিয়া) পৃথক করছেন? আপনি সিদ্ধান্ত দিয়ে তাকে সামনে নিয়ে আসেন। তাকে পৃথক রাখার কোনো সুযোগ নেই।
তখন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আদালত তো এভাবেই নির্মিত। নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে ওই জায়গায় বসানো হয়েছে।
এ সময় বিচারক বলেন, আমি তো আজ নতুন। বিষয়টি আমি দেখব। আজ এখানেই থাকুক।
এর আগেও আদালতের স্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, সাজা দিতে চাইলে দিয়ে দেন। আমি আর এ আদালতে আসব না। তিনি আরও বলেন, এ আদালতে আমার আইনজীবীরা বসতে পারেন না। অনেককে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
গত ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকার কারণে আদালতে হাজির করা হয়নি। চলতি মাসের ১০ জানুয়ারি পুরান ঢাকার বকশিবাজারের বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার শুনানি শেষে খালেদা জিয়াকে হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
মামলাটিতে জরুরি বিধিমালা সংযুক্ত এ মামলার অভিযোগপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা বাতিল চেয়ে রিট করেন খালেদা জিয়া। রিটের কারণে প্রায় ৮ বছর নিম্ন আদালতে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। রিট খারিজ করে উচ্চ আদালত ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে দুই মাসের মধ্যে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ৫ এপ্রিল আত্মসমর্পন করে জামিন পান খালেদা জিয়া।
গত ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মো. গোলাম শাহরিয়ার ১৩ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
২০১৬ সালে ৫ মার্চ একই আদালতে খালেদা জিয়া আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করেন। ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মো. গোলাম শাহরিয়ার বাদী হয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন।
মামলা তদন্ত করে ২০০৮ সালের ১৩ মে জোট সরকারের প্রভাবশালী ৯ সাবেক মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের উপ-পরিচালক মো. জহিরুল হুদা অভিযোগপত্র দেন।
২৪ আসামির মধ্যে সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রাহমান কোকো ও সাবেক মন্ত্রী এমকে আনোয়ার মারা গেছেন। আর যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এ মামলায় বর্তমান আসামির সংখ্যা ১৯ জন।
অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক মন্ত্রী এম শামছুল ইসলাম, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, সাবেক মন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেনের (প্রয়াত) স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং একেএম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, সাবেক নৌ সচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক সদস্য একে রশিদ উদ্দিন আহমেদ এবং গ্লোবাল অ্যাগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেডের (গ্যাটকো) পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন।